Uncategorizedদেশ
Trending

বিভীষিকাময় রাতের বছর ১৫ , বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে আজও

Mumbai Blast 26/11

The Truth Of Bengal,Tanushree : দিনটা ছিল ২৬ নভেম্বর ২০০৮ ,সবে শীতের আমেজ গায়ে মাখতে শুরু করেছে মুম্বই। আর পাঁচটা দিনের মতই স্বাভাবিক ছন্দে চলছিল বাণিজ্যনগরী । ব্যস্ততা, গাড়ির হর্নের শব্দ, ট্রাফিক, বাজারগুলোতে মানুষজনের উপচে পড়া ভিড়। মেরিন ড্রাইভেও তখন থিকথিক করছে ভিড়। হঠাত রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুম্বইয়ের রাস্তায় হৈচৈ পড়ে গেল।  সকলেই শুনলো হামলা হয়েছে তাদের প্রানের শহরে। আর শোনা যাচ্ছে  হাজার হাজার মানুষের বাঁচার আর্তনাদ, কান্না, চিৎকার। নিজেদের প্রিয়জনরা তখন কোথায়? পরিবারের সকলে ঠিক আছে তো? উৎকণ্ঠার  পারদ চড়ছে দ্রুত। যার নেপথ্যে ১০ পাকিস্তানি জঙ্গি।রক্তে পা পিছলে যাওয়ার জোগাড় মুম্বই রেল স্টেশনে, শুধু স্টেশন? নয় তো ।

শহরের ১২টি স্থানে হামলা চালায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা লস্কর-ই-তৈবার ১০ জঙ্গি। তখন রাত ৯ টা বেজে ৩০ মিনিট ছত্রপতি শিবাজি রেলওয়ে টার্মিনালে গুলি চালানোর খবর পায় পুলিশ। স্টেশনের প্রধান হলঘরে দুই জঙ্গি নির্বিচারে গুলি চালায় বলে জানা যায়। এদের মধ্যেই একজন ছিলেন মহম্মদ আজমল কাসভ, ইতিমধ্যেই এই জঙ্গির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়। হাতে AK47 রাইফেল! টানা ১৫ মিনিট ধরে গুলি চালায় ২ জঙ্গি, এই ঘটনায় মুহূর্তেই ৫২ জন নিহত হয় এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হন।

এরপর দক্ষিণ মুম্বাইয়ের লিওপোল্ড ক্যাফেও সন্ত্রাসবাদী হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। মুম্বাইয়ের এই বিখ্যাত রেস্তোরাঁয় গুলিতে নিহত ১০ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও ছিলেন। ক্যাফের দেওয়ালে বুলেটের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট।

ঠিক একঘন্টা বাদে রাত তখন ১০টা বেজে ৩০ মিনিট। ভিলে পার্লে এলাকায় একটি ট্যাক্সি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। এতে চালক এবং একজন যাত্রী নিহত হন। এর ১৫ মিনিটের মধ্যেই বোরিবন্দর থেকে একই রকম বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। মৃত্যু হয় চালক ও দুই যাত্রীর। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার মাঝেও কিছু সাহসী বীর সৈনিক দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জঙ্গিদের সাথে লড়াই করে গিয়েছিল। বীরত্বের মৃত্যু বরণের সাথে প্রাণে বাঁচিয়েছিল অসংখ্য মানুষকে।দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর জঙ্গিদের নিকেশ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। আজমল কাসভ ছাড়া সকলেরই মৃত্যু হয়। ২৭তারিখ ভোরেই আহত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে ফেলে পুলিশ। ৩০ নভেম্বর জেরায় অপরাধ কবুল করে সে।যাদের জন্য নিরীহ ভারতীয়দের বা বিদেশীদের প্রাণ দিতে হয়েছিল,তারা এখন কোথায়? কেন তারা আজও ভারতীয় আদালতের কাঠগড়ায় উঠল না ?সেদিনের অন্যতম চক্রী  ছিল তাহাউর হুসেন রানা। কানাডার ব্যবসায়ী। পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা ১০ লস্কর-ই-তইবার জেহাদিদের হত্যালীলায় যে মদত দিয়েছিল। তাকে গ্রেপ্তার করেছে লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ। রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চলছে।তাহাউর রহমানের মতোই  পাক বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলিও ছিল অন্যতম এজেন্ট। মুম্বইয়ে হামলার আগে ভারতে এসে সে একাধিক জায়গায় রেইকি করে গিয়েছিল। তার পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই মুম্বইয়ে প্রবেশ করেছিল জঙ্গিরা।   মার্কিন আদালত   তাকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।   হেডলিকে নিজেদের হেফাজতে পেতে মরিয়া ভারত। কুখ্যাত হামলাকারী কাসভের কথায় উঠে আসে জাইবুদ্দিন আনসারির কথা।। ২০১২ সালে জাইবুদ্দিন আনসারিকে   গ্রেপ্তার করার কথা আদালতে জানায় মুম্বই পুলিশ।   ২০১৮ সাল থেকে তাঁর শুনানি প্রক্রিয়া স্থগিত   রয়েছে।তবে পাক ডেরায় আত্মগোপন করে থাকা জাকিউর রহমান লকভিকে পাকিস্তান গ্রেফতার করবেও একাধিকবার ছেড়ে দেয়।নয়াদিল্লির দাবি,পাকিস্তানে বেতাজ বাদশার মতো ঘুরে বেড়ায় এই ভারত বিরোধী হামলার মাথা। আর এই ১৬০জনের অকালমৃত্যুর মূল কারিগর হাফিজ সঈদ। ভারতও রাষ্ট্রসংঘের চাপে গতবছর পাকিস্তান তাকে গ্রেফতার করলেও।  এখন সে খুল্লমখুল্লা ঘুরে বেড়ায় বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।তাই এইসব সন্ত্রাসবাদীদের কবে এই ভূখণ্ডে নিয়ে ফাঁসি কাঠে ঝোলানো হবে সেদিকেই তাকিয়ে পরিজন হারানো মানুষগুলো।এখনও সেই বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে আজও সেই সকল পরিবারের মনের গহনে।
আজ এই বিভীষিকার, দুঃস্বপ্নের ১৫ টা বছর পার করেছে বাণিজ্যনগরী । তবু সেই রক্তাক্ত স্মৃতি এক মুহূর্তেও ভুলতে পারেনি প্রিয়জনকে হারিয়েছিলেন যাঁরা, বিচারের আশায়, সব অপরাধীর শাস্তির আজও দিন কাটছে তাঁদের।  দেখতে দেখতে ১৫ বছর কেটে গেলেও সেই মৃত্যুর লাল স্মৃতি আজও তাঁদের কাছে তরতাজা। এখনও ২৬/১১-র নাম শুনলেই তাঁরা আঁতকে ওঠেন।

Free Access

Related Articles