নেক্সট ডেস্টিনেশন ‘একশো দ্বীপের শহর’ : রাজস্থানের বাঁসওয়াড়া
Next destination is Banswara in Rajasthan

The Truth Of Bengal, Mou Basu : মরুরাজ্য রাজস্থান বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমি, উট, কাঁটাঝোপ আর বড় বড় কেল্লা। সোনার কেল্লার হাত ধরে বাঙালিকে মরুরাজ্য রাজস্থানের সঙ্গে সেই কবেই পরিচয় করে দিয়েছেন বাঙালির প্রিয় সত্যজিৎ। ভ্রমণপিপাসু বাঙালির বেড়ানোর পছন্দসই ডেস্টিনেশন তালিকার ওপরের দিকেই থাকে রাজস্থান। সেই রাজস্থানেই আছে এক চেরাপুঞ্জি। রাজস্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এই বাঁসওয়াড়া নামক জায়গায়। তাই একে বলা হয় রাজস্থানের চেরাপুঞ্জি। রাজস্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এই বাঁসওয়াড়া নামক জায়গায়। তাই একে বলা হয় রাজস্থানের চেরাপুঞ্জি। মরুরাজ্যের চেরাপুঞ্জি বলে পরিচিত বাঁসওয়াড়াকে বলা হয় ‘একশো দ্বীপের শহর’। বাঁসওয়াড়া নামটি এসেছে ‘বাঁশ’ থেকে। নামেই সহজে অনুমেয়, কেমন জায়গা বাঁসওয়াড়া। অসংখ্য বাঁশগাছ দেখা যায় এখানে।
মরুদেশ নয় বরং সবুজ ঢেউ খেলানো ভূমির দেশ এই বাঁসওয়াড়া। বাঁসওয়াড়ার মাঝখান দিয়ে কুলকুল করে বয়ে চলেছে মাহি নদী তথা চাচাকোটা। রয়েছে অসংখ্য ছোটো ছোটো দ্বীপ। আরাবল্লি পর্বতশ্রেণীর একদম দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বাঁসওয়াড়া। এখানকার মূল অধিবাসী ভিল। রাজস্থানের ইতিহাসে এদের অনেক অবদান আছে। রাজস্থানে আদিবাসী সংস্কৃতি উপভোগ করার উৎকৃষ্ট জায়গা হল বাঁসওয়াড়া। মহারাওয়ালদের রাজত্ব ছিল বাঁসওয়াড়ায়। অনেকে বলে, ভিল নেতা বাঁসিয়া বা বংশীয়ার নাম থেকে এসেছে বাঁসওয়াড়া নামটি। বংশীয়াকে পরাজিত করে হত্যা করেন প্রথম মহারাওয়াল জগমল সিং। তাঁর রাজত্বে বাঁসওয়াড়ার রমরমা ছিল।
বাঁসওয়াড়ায় কী কী দেখবেন-
১) আনন্দ সাগর হ্রদ: বাঁসওয়াড়া শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত এই হ্রদ রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের তৈরি। তাই এই হ্রদের আরেক নাম বাঈ তলাও। এই হ্রদের পাশে রয়েছে কল্পবৃক্ষ। কাছেই আছে রাজবংশের ছত্রী।
২) দইলাব হ্রদ- হ্রদের পাড় থেকে পাহাড়ের ঢালে সূর্যোদয় দেখতে ভালো লাগে।
৩) মদ্রেশ্বর মন্দির- বাঁসওয়াড়ায় প্রচুর মন্দির আছে। উল্লেখযোগ্য হল মদ্রেশ্বর মন্দির। পাহাড়ের ওপর রয়েছে প্রাকৃতিক গুহা মন্দির। ভেতরে রয়েছে শিবলিঙ্গ।
৪) কাগদি পিকআপ- বাঁসওয়াড়া শহরের পূর্ব দিকে রয়েছে কাগদি পিকআপ।কাগদি হ্রদের পাশে রয়েছে সুদৃশ্য বাগান, ফোয়ারা আর জলাশয়। এই সুন্দর জায়গা পাখিদের স্বর্গরাজ্য।
৫) তলওয়াড়া- বাঁসওয়াড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আছে এই প্রাচীন মন্দির কমপ্লেক্স। মন্দিরের স্থাপত্য দেখার মতো। এখানে রয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, সূর্য মন্দির, দ্বারকাধীশ মন্দির, গণেশ মন্দির ও সম্ভরনাথ জৈন মন্দির। বেশ কিছু স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়।
৬) ভীমকুণ্ড- তলওয়াড়া থেকে আরো সাড়ে ৮ কিলোমিটার দূরে আছে পাহাড় ঘেরা ভীমকুণ্ড। পাহাড়ের নীচে একটি গুহা থাকার কারণে স্থানীয় লোকজন একে বলে ফাটি খান। রয়েছে একটা জলাশয়, সেখানে বছরভর জল থাকে। এখানকার জল খুব ঠান্ডা।
৭) ত্রিপুরাসুন্দরীর মন্দির- বাঁসওয়াড়া শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির। কুষানরাজ কণিষ্কের আমলেরও আগে তৈরি এই মন্দির। দেবী এখানে ১৮ হাতবিশিষ্ট, সিংহের ওপর আসীন। অন্যতম শক্তিপীঠ হিসাবে পরিচিত। স্থানীয়রা দেবীকে তিরতিয়ামাতা বলে ডাকেন। দেবীর পাশে রয়েছে ৫২ ভৈরব ও ৬৪ যোগিনীর মূর্তি। দূরদূরান্ত থেকে পুজো দিতে আসে বহু মানুষ।
৮) মাহি ড্যাম-বাঁসওয়াড়া শহরের লাইফলাইন হল মাহি বাজাজ সাগর ড্যাম। অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনৈতিক যে উন্নয়ন হয়েছে তা হয়েছে এই বাঁধকে ঘিরেই। ১৬ গেট বিশিষ্ট এই বাঁধ রাজস্থানের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ।শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বাঁধের পাশে আছে বাগান। প্রাকৃতিক দৃশ্য নজরকাড়া। মাহি ড্যামের ব্যাকওয়াটারে ডুবে আছে বেশির ভাগ টিলা। জলাশয় ঘেরা ছোট ছোট দ্বীপ, সে জন্য বাঁসওয়াড়াকে বলা হয় শতদ্বীপের শহর। মাহি ড্যামের ব্যাকওয়াটারে সবুজ টিলায় ঘেরা চাচাকোটায় যে দিকে ২ চোখ যায় সেদিকে দেখা যায় জল আর শুধু জল। সমুদ্র সৈকতের মতো দেখতে চাচাকোটায় সবুজঘেরা আঁকাবাঁকা রাস্তা আর জলপ্রপাতের দৃশ্য নজরকাড়া।
৯) অনেকান্ত বাহুবলী মন্দির- বাঁসওয়াড়া থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে বাঁসওয়াড়া-উদয়পুর রোডের ওপর লোহারিয়ায় অঞ্চলে অবস্থিত এই জৈন মন্দির। এখানে রয়েছে শ্বেতপাথরে নির্মিত বাহুবলীর ২৭ ফুট উঁচু মূর্তি।
১০) কুশলগড়- বাঁসওয়াড়া থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে কুশলগড়ে পাহাড়ের মাথায় রয়েছে অন্ধেশ্বর পার্শ্বনাথজী মন্দির। কুশলগড়ের পাশাপাশি আরথুনায় রয়েছে একাদশ, দ্বাদশ ও পঞ্চাদশ শতকে তৈরি অসংখ্য হিন্দু ও জৈন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। মন্দিরের স্থাপত্য নজরকাড়া।
১১) আব্দুল্লাহ পীর দরগা- বোহরা মুসলমানদের বিখ্যাত পীর আব্দুল রসুল বা আব্দুল্লাহ পীরের নামে এই দরগা।
১২) বেনেশ্বর ধাম- বাঁসওয়াড়ার ওয়াগাদ অঞ্চলে অবস্থিত বেনেশ্বর ধাম হল ৩ নদী মাহি, ঝাখাম আর সোমের ত্রিবেণী সঙ্গম।
FREE ACCESS