খেলা

এককালে দু বেলা খেতে না পাওয়া কোরেয়াই ভবিষ্যতে আর্জেন্টিনার হিরো

The Korean who once couldn't eat two meals a day is now Argentina's hero of the future

Truth Of Bengal: সময় সঙ্গ না দিলে কি হয়? সময়কে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে হয়। অর্থাৎ সময়কে নিজের পক্ষে নিয়ে আসাটাই আসল কাজ। কিন্তু সবাই কি তা পারেন। মনে হয় না। তবে যাঁরা পারেন, অ্যাঞ্জেল কোরেয়া তাঁদের দলে রাখাই যায়। আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২২ বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ডের জীবনকে বর্ণনা করার জন্য প্রয়োজন মাত্র দুটি শব্দই যথেষ্ট ‘ঘুরে দাঁড়ানো’!

১৯৯৫ সাল। আর্জেন্টিনার ছোট্ট শহর রোজারিও কোয়েরার জন্মস্থান হলেও তাঁর শৈশব কেটেছ লাস ফ্লোরেন্স শহরে। পৃথিবীর মানচিত্রে এই শহরটার পরিচয় মাদক কারবারিদের জন্য। লাতিন আমেরিকার অন্য একটি দেশ কলম্বিয়া বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিত ড্রাগ মাফিয়াদের দেশ হিসাবে। কিন্তু আর্জেন্টিনা তো তা নয়।

তবুও কোয়েরা ছোটবেলায় যেখানে বড় হয়ে উঠছিলেন, সেই শহরের বিভীষিকাময়তাও কম ছিল না। তাই তো কোয়েরাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমার বন্ধুকে কেড়ে নিয়েছে বন্দুকের বুলেট। যা আমাকে শিহড়িত করেছিল। কিন্তু ফুটবলের স্বপ্ন দেখা থেকে আমাকে ওরা বিচ্যুত করতে পারেনি। আমি ফুটবল খেলেছি। দেশের হয়ে খেলছি। ক্লাবের হয়ে খেলছি।’

বর্তমানে এই আর্জেন্টিনাইন ফরোয়ার্ড দেশের পাশাপাশি ক্লাব ফুটবলে খেলেন আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে। আর ক্লাবের জার্সিতে যে কোরেয়াকে এখন ফুটবল বিশ্ব দেখছে, একসময় তাঁর জীবনটা এমন ছিল না। না ছিল অর্থ, না ছিল যশ। কিছুই ছিল না তাঁর কাছে। এটা তাঁর শৈশবের গল্প।

লাতিন আমেরিকার ফুটবলে এমন গল্প অবশ্য নতুন কিছু নয়। তবে কোরেয়ার জীবনেও যে এমন অজানা গল্প আছে, তা জানতেনই বা কয়জন! না জানার সংখ্যাটাই বেশি। তবে যাঁরা জানতেন না এবার জেনে নিন। সম্প্রতী আর্জেন্টিনার এক সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে নিজের সেই অজানা, কঠোর পরিশ্রমের দিনগুলির কথাই শোনালেন   ৩০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।

করোয়া বলেন, ‘আমরা ছিলাম ১০ ভাইবোন। আমার বাবার আয় সেরকম ছিল না। এক একদিন এমন হয়েছে আমরা কিছুই খাবার পাইনি। বাবা মারা যাওয়ার পর সেই কষ্ট যেন আরও বেশি করে গ্রাস করতে লাগল আমাদের সকলকে। মা পুরো একা হয়ে পড়লেন। কাজেই সংসারের হাল ধরতে, দু মুঠো খাবারের আশায় তখন ট্যাক্সির দরজা খুলে দিতে এবং গোলাপ ফুল বিক্রি করতে আমরা ভাই-বোনেরা ছুটে গিয়েছি  শহরের বিভিন্ন জায়গায়। দাদির সঙ্গে আমি মাইলের পর মাইল হেঁটেছি। মানুষের বাড়ির দরজায় অর্থের জন্য কড়া নেড়েছি।’

তবে কোরেয়ার জীবনের সেসব দিন এখন অতীত। সান লরেঞ্জোর বয়সভিত্তিক দল থেকে মূল দল হয়ে ২০১৪ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদে যোগ দেন তিনি। বর্তমানেও সেই দলেরই সদস্য কোরেয়া। ২০১৫ সালে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে লাতিন আমেরিকা অনূর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে, দেশকে চ্যাম্পিয়নের স্বাদ এনে দিয়েছিলেন তিনি।

সে বছরই আর্জেন্টিনার সিনিয়র জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক হয়। ২০২১ সালে এসে জেতেন কোপা আমেরিকা, পরের বছর বিশ্বকাপও। তবে মেসি, মার্তিনেজরা থাকায় স্কালোনির দলে এখনও নিয়মিত হতে পারেননি কোয়েরা। মাত্র ১০ বছরে ২৭ ম্যাচে ৩ গোল তারই প্রমাণ।

এরপর নানা চড়াই-উৎরাইয়ের পথও পার হতে হয়েছে কোয়েরাকে। বাবার পর দুই ভাইকে হারানোর পাশাপাশি অ্যাটলেটিকোতে যোগ দেওয়ার আগেই নিজের হৃৎপিন্ডে ধরা পড়েছিল টিউমার। পেশাদার ফুটবলে তখনও তিনি প্রবেশ করেননি। এরপর কঠিন রোগকে জয় করে মাঠে ফিরেই প্রথম পারিশ্রমিক তুলে দিয়েছিলেন মায়ের হাতে। এরপর মা প্রয়াত হওয়ার পর কোরেয়া ২০২২ সালে ফিনালিসিমা জয়ের পর আবারও অস্ত্রোপচার করানো হয় কোরেয়ার শরীরে।

প্রথমবার ওপেন হার্ট সার্জারি করিয়ে বুকে বসানো যন্ত্র বিকল হয়ে পড়েছিল। একই অস্ত্রোপচার করানো হয় আবারও। চিকিৎসার কারণে চুল পড়তে থাকে তাঁর। ২০২০ সালে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের মাথা ন্যাড়া অবস্থায় একটা ছবি পোস্ট করে কোরেয়া লেখেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে যখন অবতীর্ণ হয়েছি, তখন আর শত্রুকে ছাড়া নেই। ওরা মনকে আক্রমণ করলেও শরীরকে নয়। এ যুদ্ধ আমাদের জয় করতেই হবে।’

Related Articles