অফবিটচাকরি

কালার থেরাপি মেনে দোলে ব্যবহার করুন রঙ, জানুন এর উপকার

Use color in moderation according to color therapy, know its benefits

Truth Of Bengal: রঙ হল ভীষণ শক্তিশালী কমিউনিকেশনের মাধ্যম। আবেগের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ঘটে রঙের মাধ্যমে। মনের পাশাপাশি শরীরের ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে রঙ। কিছু নির্দিষ্ট রঙ রক্তচাপ বাড়ায়। কিছু রঙ যেমন মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে তেমনই কিছু রঙ চোখের ওপর চাপ বাড়ায়।

প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় অভিনেত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছিল গেরুয়া বসনে। আবার হুগলির ত্রিবেণীতে রচনা আসেন সবুজ শাড়ি পরে। রচনা নিজেই জানান তিনি কালার থেরাপিতে বিশ্বাস করেন। বুধবার বলে তিনি হুগলির ত্রিবেণীতে এসেছিলেন সবুজ রঙের শাড়ি পরে। জানেন কী উপকার হয় কালার থেরাপিতে?

১) গবেষণায় দেখা গেছে নির্দিষ্ট কিছু রঙ যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। শারীরিক যন্ত্রণা কমায় সবুজ রঙ। সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা ঘরের সবুজ রঙ মন শান্ত রাখে, শারীরিক যন্ত্রণা কমায়।

২) ঘুমের ক্ষেত্রে রঙের প্রভাব প্রচুর। টিভি, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনের স্ক্রিনের চড়া নীল রঙ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। কিন্তু বেডরুমে ডার্ক ব্লু বা ঘন নীল রঙ বা সফট গ্রিন রঙ শান্ত পরিবেশ তৈরি করে। মানসিক উদ্বেগ কাটিয়ে ঘুমোতে সাহায্য করে।

৩) রঙ আমাদের মনঃসংযোগ ও ধৈর্য্য বাড়াতে সাহায্য করে। হলুদের মতো ভাইব্রান্ট রঙ মনকে সতেজ রাখে। মনঃসংযোগ বাড়ায়।

৪) কমলা, হলুদ রঙের ব্যবহার খিদে ভাব বাড়ায়। তেমনই নীল, সবুজ রঙ মনকে শান্ত রাখে। মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দূর করে। তেমনই লাল রঙ আমাদের মনকে উজ্জীবিত করে। ভালোবাসা জাগায় গোলাপি রঙ। সাদা রঙ মনঃসংযোগ বাড়ায়, শান্তি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। লাভেন্ডার বা পানাফুলের রঙ, বেগুনি বা পার্পল রঙ ধ্যান করতে সাহায্য করে।

আসুন দেখে নিই কোন রঙের কী প্রভাব পড়ে মনের ওপর

লাল, কমলা, হলুদকে বলা হয় ওয়ার্ম রঙ। নীল, পার্পল আর সবুজ রঙকে বলা হয় কুল রঙ। চিকিৎসাশাস্ত্রে কালার থেরাপি বা ক্রোমোথেরাপির বিরাট ভূমিকা আছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, লাল রঙ আমাদের শরীর ও মনকে স্টিমিউলেট করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। হলুদ রঙ আমাদের স্নায়ুকে সক্রিয় করে তোলে। কমলা রঙ ফুসফুসের রোগ সারায়, এনার্জি লেভেল বাড়ায়।

ইন্ডিগো রঙ ত্বকের সমস্যা বাড়ায়। আধুনিক নানান গবেষণায় দেখা গেছে, নীল রঙের স্ট্রিট লাইট অপরাধের সংখ্যা কমায়।
লাল রঙ ক্রীড়াবিদদের বিশেষ করে অ্যাথলিটদের গতি আর এনার্জি লেভেল বাড়ায়। রঙ শুধু মন আর শরীরের ওপরই প্রভাব ফেলে না পছন্দের খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমলা রঙ আমাদের খিদে ভাব বাড়িয়ে তোলে। তাই খাবারের প্যাকেটে, ফাস্ট-ফুড রেস্তোরাঁয় এই রঙের বিশেষ ব্যবহার দেখা যায়। আবার নীল রঙে খিদের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়।

দোল বা হোলিতে আবির নাকি রঙ, কী দিয়ে খেলা নিরাপদ

নীল দিগন্তে ফুলের আগুন জ্বালিয়ে ফাগুনের শেষ প্রহরে সমাগত আজ দোল বা হোলি। আর দোল বা হোলি মানেই তো রঙের খেলা মনের রং মিলান্তি উৎসবের রোশনাই। কিন্তু খেলবো কি রংবা আবির? ভয়, দ্বিধা সবই মনকে গ্রাস করে সদা। সব ধরনের দূষণে সারা পৃথিবী যেখানে পর্যুদস্ত সেখানে দোলের উৎসব তো তার বাইরে যেতে পারে না। কারণ এই উৎসবে রঙের ব্যবহার হয় সর্বাধিক আর তা সরাসরি লাগানো হয় আমাদের শরীরে-ত্বক, চুল, চোখ ইত্যাদিতে। তা’হলে একটু জেনে নেওয়া ভালো-রং না আবির কোনটা আমাদের উৎসবকে সর্বাঙ্গীন রঙিন করে তুলবে অথচ শরীরের কোনো ক্ষতি করবে না।
ইতিহাস ও পুরাণ ঘাঁটলে আমরা কিন্তু দেখতে পাই নানা ফুল, পাতা বা গাছের ছাল ইত্যাদি থেকে তৈরি হওয়া ভেষজ রং, আবির ব্যবহার করা হত।

সে যুগে কোনো রাসায়নিক রঙের প্রয়োগ ছিল না। আধুনিকতার স্পর্শে আমাদের চাকচিক্য এসেছে ঠিকই কিন্তু সঙ্গে নিয়ে এসেছে ঔজ্জ্বল্যের আড়ালে নানা মারণ রোগের বীজও। আর সবটাই এসেছে এই রাসায়নিক উপাদনের কারণে। রবীন্দ্রনাথ তো কবেই বলেছেন, ‘রং যেন মর্মে লাগে আমার সকল কর্মে লাগে…’তাই আমরা এই দোলে রাসায়নিক রঙ বর্জন করে শরীরের পক্ষে নিরাপদ ভেষজ আবির দিয়ে রঙের উৎসবকে আরো রাঙিয়ে তুলি।

Related Articles