সম্পর্ক আর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভরসা থাকুক চকোলেটে
Trust in chocolate to maintain good relationships and health

Truth Of Bengal: শুরু হয়েছে ভ্যালেন্টাইন উইক বা প্রেমের সপ্তাহ। ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের তৃতীয় দিন ‘চকোলেট ডে’। সম্পর্ককে মজবুত ও মিষ্টি করে তুলতে ভরসা রাখুন চকোলেটে। ভালোবাসার সম্পর্কে থেরাপির কাজ করে এক টুকরো চকোলেট। গোটা পৃথিবী চষে বেরিয়েছে চকোলেট। যেখানেই গেছে সেখানকার মানুষের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে চকোলেট।
ইতিহাসের পাতা উল্টোলে দেখা যায় আজটেক সভ্যতায় মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করা হত চকোলেট। ১৫১৯ সালে স্পেনীয় ভূপর্যটক হার্নান কর্টেসকে চকোলেট দিয়ে একটি পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করেন আজটেক রাজা মন্টেজুমা। হার্নান কর্টেসের হাত ধরে স্পেনেও জনপ্রিয় হয় চকোলেট। উনি এই পানীয়র মধ্যে ভ্যানিলা, চিনি আর দারুচিনিও যোগ করেছিলেন স্বাদ বাড়াতে। ১৭ শতকের পর ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সে জনপ্রিয় হয় চকোলেট পানীয়।
১৯ শতক থেকেই সলিড চকোলেট খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। ইউরোপে লাক্সারি ও আবেগের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম হিসাবে দেখা হত চকোলেটকে। নানান রকম স্বাদের চকোলেটের নানান অর্থ। ডার্ক চকোলেট প্যাশনকে তুলে ধরে, তেমনই মিল্ক চকোলেট কারোর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। সাদা চকোলেট আবার পবিত্রতার প্রতীক।
বার থেকে শুরু করে ট্রুফল হোক কিংবা হট কোকো, নানান ভাবে আমরা চকোলেট খেয়ে থাকি। ৩ হাজার বছর আগে অ্যাজটেক আদিবাসীরা প্রথম চকোলেট তৈরি করেন। কাকাও গাছ থেকে তাঁরা কোকো দানা সংগ্রহ করে তেঁতো স্বাদের পানীয় তৈরি করেন। ইউরোপীয়রা তেঁতো স্বাদের কোকোর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ক্যান্ডি বার তৈরি করে।১৫৫০ সালে ইউরোপে আসে চকোলেট।
২০০৯ সালের ৭ জুলাই ওয়ার্ল্ড চকোলেট ডে হিসাবে ঘোষণা করে দ্য ইন্টারন্যাশনাল কোকোয়া অর্গানাইজেশন। বছরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চকোলেট খায় সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দারা। চকোলেট বিক্রি করে বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করে আমেরিকা। দারুণ পুষ্টিকর এই চকোলেট বিশেষ করে ডার্ক চকোলেট। ১০০ গ্রাম ওজনের ডার্ক চকোলেটের বারে ৭০-৮৫% কোকো থাকে। ১১ গ্রাম ফাইবার আছে। ৬৭% লোহা, ৫৮% ম্যাগনেসিয়াম, ৮৯% তামা, ৯৮% ম্যাঙ্গানিজ, প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ও দস্তা থাকে চকোলেটে।
কেন খাবেন চকোলেট?
★ চকোলেটে আছে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হৃদযন্ত্রের শিরা ও ধমনীকে ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি পরিমাণে চকোলেট খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে ৩৭%, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে ২৯%।
★চকোলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে। ফ্ল্যাভোনল নিউরনের প্রোডাকশন বাড়ায়, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের কোষে কোষে রক্তের সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। অ্যালজাইমার্স, পার্কিনসন ডিজিজের মতো নিউরোডিজানেরেটিভ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ফ্ল্যাভোনলযুক্ত চকোলেট খেলে জটিল অঙ্কের সমাধান সহজে করা যায় বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
★ মুড ভালো রাখতে চকোলেটের জুড়ি মেলা ভার। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা যদি চকোলেট খান তা’হলে স্ট্রেস লেভেল কমে, সদ্যোজাত সন্তানের মুডও ভালো রাখে। চকোলেট মনকে শান্ত, খুশি আর স্থিতধী রাখতে সাহায্য করে।
★ চকোলেট শরীরে কার্বোহাইড্রেটের জমতে থাকা আটকায়, ইনসুলিনের নিঃসারণের পরিমাণ বাড়ায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ডার্ক চকোলেট ওজন ঠিক রাখে।
★ আমাদের মন ভালো রাখার পেছনে এন্ডোরফিন নামে হরমোনের বিরাট ভূমিকা আছে। এই হরমোন মানসিক অবসাদ, যে কোনো রকম মানসিক সমস্যা রোখার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে। চকোলেট এই এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসারণ বাড়ায়।
★গর্ভবস্থায় অনেকের রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। একে বলে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া। ডার্ক চকোলেটে থিওব্রোমিন নামে এক ধরনের পদার্থ আছে যা হৃদযন্ত্রকে স্টিমিউলেট করে, ধমনীকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন অল্প পরিমাণে চকোলেট খেলে কমবে ক্লান্তিভাব। চকোলেটে থাকা থিওব্রোমিন আর থিওফিলিন নামে ২টি পদার্থ শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমার সমস্যা অনেকাংশে দূর করে।
★ডার্ক চকোলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনলে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলি যা ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যালসের হাত থেকে বাঁচায়। ব্রেস্ট, প্যানক্রিয়াটিক, প্রস্টেট, লিভার, কোলোন এমনকী লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমায়।