
The Truth of Bengal, Mou Basu: উত্তর থেকে দক্ষিণ, উত্তরবঙ্গ হোক কিংবা দক্ষিবঙ্গের জঙ্গলে দেখা মেলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পাশাপাশি চিতাবাঘ, হাতি, গন্ডার, স্লথ বিয়ার, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, চিতল ও সম্বর হরিণ, বন্য শূকর, মেছো বেড়ালের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের। এছাড়াও ময়ূর, গ্রেট ইন্ডিয়ান হর্নবিল, ইউরেশিয়ান স্পুনবিলস, ব্রাহ্মণী হাঁস, কাঠঠোকরা, মাছরাঙা, হাঁড়িচাচা, পানকৌড়ি, ডাহুক, বক, টুনটুনি, মৌটুসি, বেনেবউ, বাঁশপাতি, খঞ্জন, কোকিলের মতো অসংখ্য পাখিদের সঙ্গে সঙ্গে দেখা মেলে কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়, হোয়াইট-লিপড পিট ভাইপার, গোখরো, শাঁখামুটি, চন্দ্রবোরা, কালাচ, জলঢোরা, ইন্ডিয়ান পাইথন, রেটিকিউলেটেড পাইথন, কুমির, নোনাজলের কুমির, ঘড়িয়ালের মতো নানান প্রজাতির সরীসৃপও। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বলেছেন বন আর বন্যপ্রাণী বাংলার সম্পদ। সে জন্যই সম্পদ রক্ষায় এবার বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের বন দফতর। বন্যপশুপাখিদের চিকিৎসার জন্য আধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত “ভেট ক্লিনিক” (Vet clinic) গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্যের বন দফতর।
দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নায়ডু হিমালয়ান জ্যুলজিক্যাল পার্কের তত্ত্বাবধানে আলিপুর চিড়িয়াখানার চত্বরেই এই অত্যাধুনিক পশু ক্লিনিক বা হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও আলিপুর চিড়িয়াখানার পুরনো পশু হাসপাতাল ভবনের আমূল খোলনলচে বদল করা হবে। পোর্টেবল এক্স-রে যন্ত্র, অটোমেটেড অপারেশন টেবিল, অ্যানেসথেশিয়া ইউনিট রাখা হবে। সরীসৃপের চিকিৎসার জন্য আলাদা বন্দোবস্ত থাকবে। পাখিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা বিশেষ বন্দোবস্ত থাকবে। কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির অধীনে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হবে সাড়ে ৩ কোটি টাকা।
গত বছর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে দেশের সেরা চিড়িয়াখানার পুরস্কার পেয়েছিল দার্জিলিঙের পদ্মজা নায়ডু হিমালয়ান জ্যুলজিক্যাল পার্ক। আলিপুর চিড়িয়াখানাও যাতে এবছর সেরা চিড়িয়াখানার পুরস্কার পায় তার জন্য চেষ্টার কোনো কসুর বাকি রাখছে না রাজ্যের বন দফতর। উত্তরবঙ্গের চিড়িয়াখানা বা জঙ্গল থেকে অসুস্থ পশু উদ্ধার হলে তাদের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আনতে হয়। সে জন্য উত্তরবঙ্গে আলাদা পশু ক্লিনিক গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর। এছাড়াও ২টি রিসার্চ ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হবে। সেখানে মলিক্যুলার বায়োলজি ও ক্রায়োপ্রিজার্ভেশন (যে পদ্ধতিতে ঠান্ডা তাপমাত্রায় কোষ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করে রাখা হয়)-র গবেষণা চালানো হবে। বর্তমানে কোনো নমুনার মলিক্যুলার বায়োলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজির ওপর নির্ভর করতে হয়। এরাজ্যে এরকম ল্যাবরেটরি চালু হলে তখন আর বাইরের রাজ্যে যেতে হবে না।
২ কোটি টাকা ব্যয় দার্জিলিং চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতালকে আধুনিক ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এবার শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কের পশু হাসপাতাল, আলিপুরদুয়ারের দক্ষিণ খয়েরবাড়ি আর কোচবিহারের পাতলাখাওয়া মিনি জ্যু হাসপাতালও আধুনিক ভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে সরকারি ভাবে রেকর্ডেড বনভূমির পরিমাণ ১১,৮৭৯ বর্গ কিলোমিটার। এরমধ্যে রিজার্ভড ফরেস্ট বা সংরক্ষিত জঙ্গল ৭,০৫৪ বর্গ কিলোমিটার, প্রোটেক্টেড ফরেস্ট ৩,৭৭২ বর্গ কিলোমিটার আর আন-ক্লাসড স্টেট ফরেস্টের পরিমাণ ১,০৫৩ বর্গ কিলোমিটার। রাজ্যের ১৩.৩৮% অঞ্চল জঙ্গল বলে সরকারি ভাবে চিহ্নিত। গত বছরই প্রথমবার উত্তরবঙ্গের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে, গোরুমারা জাতীয় উদ্যান জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক, চাপড়ামারি অভয়ারণ্য, সেঞ্চাল অভয়ারণ্য ও নেওড়াভ্যালি জাতীয় অভয়ারণ্যে কত সংখ্যক হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার আছে তার সুমারি করা হয়। এবার আধুনিক পশু ক্লিনিক গড়ার উদ্যোগেই প্রমাণ রাজ্যের বন্যপ্রাণীদের জীবনরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে রাজ্য সরকার।