সাক্ষ্য প্রমাণ পেশে এবার তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য বাধ্যতামূলক! যুগান্তকারী রায় কলকাতা হাইকোর্টের
This time the help of information technology is mandatory before the evidence! The landmark judgment of Calcutta High Court

The Truth Of Bengal: আদালতের কেস উঠলে শ্লথ গতিতে তার প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে যুগান্তকারী রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নাম শুনলেই অভিনেতা সানি দেওয়ালের ‘তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ’ সংলাপটির কথা মনে পড়ে যায়। যার সঙ্গে বাস্তবের মেশ কিছুটা মিল রয়েছে। যার জন্য খুব বেশি বড় কিছু না হলে আমজনতা কিন্তু শত হস্ত দূরে থাকে এই কোর্টকাছারি থেকে। কারণ একবার কেস উঠলে তা থেকে নিষ্পত্তি কবে মিলবে বা বিচার কবে হবে তার জন্য বহু মানুষকেই হাপিত্যেস করতে হয়। এবার তা দূর করতেই ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এতদিন সব ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিককে সশরীরে আদালতে হাজিরা দিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। রাজ্যের সব আদালতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারবেন আমলা থেকে পুলিস, চিকিৎসক, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ থেকে সব স্তরের সরকারি আধিকারিক।
অর্থাৎ এবার আর সশরীরে আদালতে হাজিরা দিয়ে সাক্ষ্য দেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়। তা ফৌজদারি হোক বা দেওয়ানি সব মামলাতেই এই একই নিয়ম খাটবে। একটি মামলার রায়ে এমনটাই স্পষ্ট জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সম্প্রতি আইনমন্ত্রকের তরফে সংসদে পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রাজ্যের সব আদালতে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল ২৯,৭৩,৬০৭। এর মধ্যে মাত্র ৪, ৯৮,৪৪৩টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। ফলে আইনজীবীদের মতো এই যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যে বিচারব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে এবং দ্রুত মামলাগুলির নিষ্পত্তিও করাও সম্ভব। আর জানা যাচ্ছে, সেইমতো সব আদালতগুলিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের সংশোধনাগারগুলির সামগ্রিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি হয়। সেখানে রাজ্যের তরফে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর রুদ্রদীপ্ত নন্দী জানান, নিয়ম মেনে সরকারি আধিকারিকদের সশরীরে হাজিরা দিয়ে সাক্ষ্য প্রদানের জেরে বিচারপ্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে।
প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া চালু করলে সেক্ষেত্রে সুবিধা হয়। আর সেই আবেদনের ভিত্তিতে একটি নির্দেশনামায় ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, অবিলম্বে রাজ্যের সমস্ত নিম্ন আদালতের বিচারককে ‘রুলস ফর ভিডিও কনফারেন্সিং ফর কোর্টস’ ও বিএনএসস-এর ২৫৪(২) ধারা কার্যকর করে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। এই নির্দেশনামা নিয়ে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর রুদ্রদীপ্ত নন্দী জানান, ‘বিশেষত ফৌজদারি মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে এই রায়ের ফলে। অনেক সময় দেখা যায়, রাজ্যের কোনও জেলা আদালতে চলা মামলায় যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ কাজ করেছিলেন, এখন তিনি দিল্লিতে। সেই মামলায় সাক্ষ্যদানের জন্য তাঁকে দিল্লি থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতে ছুটে আসতে হতো। কোনও কারণে না আসতে পারলে মামলা পিছিয়ে যেত। এই ধরনের সমস্যা আর থাকবে না।’ এই নিয়ে আইনজীবী তাপস ভঞ্জ জানান, ‘এই নির্দেশের ফলে সরকারি আধিকারকিরাও সময় মতো সাক্ষ্যদানে বাধ্য থাকবেন। উপকৃত হবেন মামলাকারীরা।’