বড়বাজারে হোটেলে আগুন, ঘটনার পর থেকেই পলাতক হোটেল মালিক
Fire breaks out at hotel in Barabazar, hotel owner absconding since incident

Truth of Bengal: মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার বড়বাজারের মেছুয়াবাজার এলাকার এক হোটেলে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে হোটেলের একতলা থেকে উপরতলার দিকে, এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় গোটা ভবন। এখনও পর্যন্ত পাওয়া শেষ খবর অনুযায়ী, এই অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৪ জনের। বহু মানুষ আহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুঃখজনক এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে, যার জবাব খুঁজতে ব্যস্ত দমকল ও প্রশাসন। প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠছিল – ঠিক কীভাবে শুরু হয়েছিল এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড? হোটেলে আদৌ কি ছিল কার্যকর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা? ঘটনার তদন্তে নেমে একের পর এক গাফিলতির চিত্র উঠে আসে, যা আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দমকল বিভাগের ডিজি রনবীর কুমার ঘটনার পর এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, হোটেলের একতলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত। সেখানে বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ মজুত করা ছিল। যার ফলে মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং গোটা হোটেল ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হল, হোটেলের ফায়ার অ্যালার্মই কাজ করেনি। ফলে সময়মতো কেউ সতর্ক হতে পারেননি।”
তিনি আরও জানান, “হোটেলের ফায়ার লাইসেন্স ২০২২ সালের পর আর নবীকরণ করা হয়নি। হোটেলের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল অকার্যকর। আগুন নেভানোর যন্ত্র ছিল অকেজো অবস্থায়।” এই গাফিলতির জন্য দমকল বিভাগের তরফে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়াও উঠে এসেছে আরও বিস্ফোরক তথ্য। জানা গেছে, ওই হোটেলে বেআইনিভাবে চলছিল একটি পানশালা। সেই সঙ্গে গত কয়েক মাসে ছয়তলা বাদে হোটেলের অধিকাংশ উন্মুক্ত জায়গা ইট ও সিমেন্ট দিয়ে আটকানো হয়, যার ফলে হোটেলটি কার্যত একটি বদ্ধ বাক্সে পরিণত হয়। এ কারণে আগুন লাগার পরে ধোঁয়া বেরোতে না পেরে দ্রুত ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু ঘটে বহু মানুষের।
শুধু তাই নয়, ১৯৯৩ সালে নির্মিত এই হোটেলের ছাদে সম্প্রতি বেআইনিভাবে আরও আটটি ঘর তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ। সমস্ত নির্মাণকাজই নিয়ম বহির্ভূতভাবে করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর থেকেই পলাতক হোটেল মালিক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে খুঁজে বার করতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। কলকাতা পুরসভা ও দমকল বিভাগ যৌথভাবে হোটেলটি সিল করে দিয়েছে এবং শুরু হয়েছে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে, শহরের নানা প্রান্তে কীভাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে হোটেল ও বাণিজ্যিক ভবন চালানো হচ্ছে, এবং কীভাবে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, এ ঘটনার দায় শুধু হোটেল মালিকের নয়, প্রশাসনিক স্তরে নজরদারির অভাবও সমানভাবে দায়ী।