সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বেবি, কেন্দ্রীয় কমিটিতে মীনাক্ষী, কনীনিকা
CPM's All India General Secretary Baby, Meenakshi, Kaninika in the Central Committee

Truth Of Bengal: ৭০ বছরের জন্মদিন পার হতেই জীবনের সব থেকে বড় দায়িত্ব পেলেন আলেকজেন্ডার বেবি। রবিবার শেষ হল তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। আর সেখানেই বেবির নাম দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
মোট ৮৫ জন সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়েছে, যার মধ্যে ৩১ জন নতুন। নতুনদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আছেন কনীনিকা ঘোষ,দেবব্রত ঘোষ, সমন পাঠক, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভা থেকে ১৮ জন সদস্যের পলিটব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন যার মধ্যে ৮ জন নতুন। নতুনদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রয়েছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য।
হরকিষাণ সিং সুরজিতের পর থেকেই দক্ষিণমুখী সিপিএম। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন, প্রকাশ কারাত ও সীতারাম ইয়েচুরি। সীতারামের প্রয়াণের পর অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন কারাত। এবার দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক মারিয়াম আলেকজান্ডার বেবি আদতে দক্ষিণের রাজ্য কেরলেরই। সিপিএম যে বয়সবিধি করেছে, তাতে বেবিকে দু’টি মেয়াদ (ছ’বছর) এই দায়িত্বে রাখার ভাবনা থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরেই সিপিএমের ভরকেন্দ্র দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে। ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ (কেরল) এবং পি সুন্দরাইয়ার (অন্ধ্রপ্রদেশ) পর একটা দীর্ঘ সময় সিপিএমের শীর্ষপদে ছিলেন পঞ্জাবের হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ। তাঁর মৃত্যুর পর দায়িত্ব পান কারাট। এরপর সীতারাম। এই দু’জনই দক্ষিণী। কারাট কেরলের। সীতারাম অন্ধ্রের।
যদিও দীর্ঘদিন তাঁরা দিল্লিতে দলের কাজ করায় সেই অর্থে রাজ্য রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। তবে, বেবি ছিলেন কেরলের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। ১৯৮৬-১৯৯৮, এই ১২ বছর কেরল থেকেই রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন তিনি। ফলে কোল্লমের এই ভূমিপুত্র সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় দলের ভরকেন্দ্র আরও দক্ষিণে ঝুঁকল বলেই অভিমত অনেকের।
বেবির রাজনৈতিক উত্থান সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয় থেকে। পরবর্তীতে যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এবার দলের সাধারণ সম্পাদক পদে এলেন। সুরজিতের পরে ফের কোনও সংখ্যালঘু অংশের (খ্রিস্টান) কোনও নেতা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন। কেরল ছাড়া দেশের সর্বত্র প্রায় বিপন্ন একদা লোকসভার প্রধান বিরোধী দলের। বাংলায় দল শূন্য, ত্রিপুরায় প্রধান বিরোধী দল। একমাত্র ক্ষমতায় কেরলে। এদিকে, বাংলা এবং কেরলে পরের বছরই ভোট। জাতীয় রাজনীতিতে এই বিপন্ন অবস্থার মধ্যেই বেবির হাতে দায়িত্ব তুলে দিল দল।
সীতারমের মৃত্যুর পরে প্রকাশ, বৃন্দাদের প্রথম পছন্দ ছিল বাংলার মহম্মদ সেলিম। কিন্তু বাংলার রাজ্য সম্পাদক বঙ্গ ছেড়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি। তাঁর পাখির চোখ ২০২৬ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভ নির্বাচন। পাশাপাশি দলের একাংশ কৃষক নেতা অশোক ধাওয়ালের নামও তুলেছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ তাতে রাজি হননি। ধাওয়ালে কৃষক আন্দোলনের নেতা। কয়েক বছর আগে তাঁর নেতৃত্বেই নাসিক থেকে মুম্বই কৃষকদের লং মার্চ মরাঠা মুলুকে আলোড়ন ফেলেছিল। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর কোনও অভিজ্ঞতা নেই। ধাওয়ালে এমনিতে ডাক্তার।
বয়সের কারণে বিদায়ী পলিটব্যুরোর সদস্যদের মধ্যে সাত জনের বাদ পড়ার কথা ছিল। সেই তালিকায় ছিলেন প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট, সুভাষিনী আলি, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বাংলার সূর্যকান্ত মিশ্র এবং তামিলনাড়ুর জি রামকৃষ্ণন। তবে ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে বিজয়নকে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হল। বাকি ছ’জন সরে গেলেন। এতদিন বাংলা থেক পলিটব্যুরোয় ছিলেন মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম আর সূর্যকান্ত মিশ্র। এবার বয়সের কারণে বাদ গেলেন সূর্যকান্ত।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে সূর্যকান্তের জায়গায় পলিটব্যুরোর সদস্য হলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, ত্রিপুরার মানিকের জায়গায় রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। রাজস্থানের সীকরের সাংসদ অমরা রামও পলিটব্যুরোয় জায়গা পেয়েছেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকায় বাংলা থেকে রয়েছেন যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ বোস, সমন পাঠক, দেবব্রত ঘোষ ও সৈয়দ হোসেন। সমন, দেবব্রত ও সৈয়দ এখন দার্জিলিং, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক।
সিপিআইএমের নিয়মে, একসঙ্গে তিন স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না। ফলে, এই তিন জনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ অনুমতি নেওয়া না কি জেলা সম্পাদক পদে বদল আনা হবে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে সিপিআইএমের অন্দরে। কারণ ওই তিন জেলা সম্পাদক রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। আবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও হলেন এবার।