
The Truth of Bengal, Mou Basu: অপার রহস্যে মোড়া আমাদের এই বিপুলা পৃথিবী। যেমন, আমাদের দেশেই আছে এক আজব গ্রাম যেখানে মানুষ একে অপরকে শব্দ করে নাম ধরে ডাকে না। গ্রামবাসীরা একে অপরকে শিস দিয়ে সুর করে ডাকে। প্রত্যেকের নামের যেমন আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে তেমনই প্রতিটি শিসের সুর আলাদা আলাদা। সুন্দর এই শিসের গ্রামটির নামও খাসা, ‘কংথং’। উত্তর পূর্বের রাজ্যে মেঘালয়ে রয়েছে শিসের গ্রাম বা ‘হুইস্লিং ভিলেজ’ কংথং। শিলং থেকে কংথংয়ের দূরত্ব ৫৩ কিলোমিটার গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে কংথংয়ের দূরত্ব ১৬৮ কিলোমিটার। শিলং থেকে কংথংয়ে পৌঁছতে সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক।
মেঘালয়ের অন্য জায়গার মতোই কংথং-এও, চারিদিকে চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক শোভা, মন ভরানো পরিবেশ নজর কাড়ে। ছবির মতো সুন্দর কংথং গ্রামের বড়ো বৈশিষ্ট্য হল সহজ সরল মানুষ। কংথং গ্রামে মেরেকেটে বাস ৭০০ জনের। আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর এই গ্রামের মানুষ অন্যদের সুরে সুরে আপন করে নেয়। এই গ্রামের প্রতিটি শিশু স্কুলে যায়। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কংথংয়ের। এই গ্রামের প্রত্যেকের ২টো নাম রয়েছে। একটা নাম খাতায় কলমে, সরকারি কাজকর্মে যা ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় নামটি শিসের সুর দিয়ে তৈরি। এই শিস দিয়ে তৈরি নামও দু’রকমের। একটা সংক্ষিপ্ত সুর, খুব বেশি হলে মেরেকেটে ১০ সেকেন্ডের, এই নামটি ঘরে-বাইরে কাজের সময় ও নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘ সুরের শিসের নাম হয় অন্তত ৩০ সেকেন্ডের। এটা সাধারণত বনে, জঙ্গলে ও পাহাড়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শিসের সুরের নাম হয় সফট টিউনের। প্রতিটি শিস একদম আলাদা। এমনকী, যে মানুষ মৃত তাঁর শিসের নাম অন্যদের কখনোই দেওয়া হয় না। কংথংয়ের মায়েরা সন্তানের ওপর প্রচণ্ড রেগে গেলে একমাত্র শব্দ করে নাম ধরে ডাকেন।
কবে থেকে কংথংয়ে শিস দিয়ে ডাকার প্রথা চালু হয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। তবে আজও কাউকে ডাকার সময় শিসের সুরে ডাকার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ছাড়তে পারেননি কংথংয়ের গ্রামবাসীরা। কংথংয়ের পাহাড়, জঙ্গলে যে পাখির ডাক শোনা যায়, ঝরনার শব্দ শোনা যায় সেখান থেকেই সুর বোনেন গ্রামবাসীরা। যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। সন্তান জন্মের পরই মায়েরা সন্তানের কানের কাছে সেই সুর শিস দিয়ে গুন গুন করে শোনানো হয়। সেই সুর থেকে জন্ম নেয় যে গান তার নাম ‘জিঙ্গারওয়াই লওবেই’। কংথংয়ের শিশুরা জন্মের পর আগে ‘জিঙ্গারওয়াই লওবেই’ আওড়াতে শেখে। প্রতিটি শিশুর ‘জিঙ্গারওয়াই লওবেই’ আলাদা।