পরকীয়ার জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে,কিন্তু কখনই শিশুকে আটকে রাখা যাবে না-বোম্বে হাইকোর্ট
Divorce can be granted for adultery but child can never be detained-Bombay High Court

The Truth of Bengal: পরকীয়ার জন্য সংসারে অশান্তি। তারপর বিবাহ বিচ্ছেদের ভুরিভুরি উদাহরণ রয়েছে এদেশে।এবার এই বিষয়ে বোম্বে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিল। বলা হয়েছে,পরকীয়ার জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ করা যেতেই পারে কিন্তু কখনই কোনও শিশুকে অধিকার বলে আটকে রাখা যাবে না। জানা গেছে,২০১০সালে তাঁরা বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন।২০১৫তে তাঁদের সন্তান হয়। এরপর ২০১৯এ মহিলা দাবি করেন তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে অপসারিত করা হয়েছে। তাই ২০২০তে ঘরোয়া হিংসা মামলায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যেখানে তুলে ধরা হয় বধূকে হেনস্থা,মানসিক নির্যাতন ও অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে ভীতিপ্রদর্শন করে। এরজন্য ফ্যামিলি কোর্টে মামলাও দায়ের করেন নির্যাতিতা বধূ। তিনি তাঁর কন্যা সন্তানের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য মানবিক আবেদনও করেন সেই আদালতে। অর্থাত্ নাবালিকা কন্যা কার কাছে থাকবে তাই নিয়ে বিবাহ বিচ্ছিন্না স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে। দুতরফই মেয়ের অধিকার বজায় রাখতে চায়। সেইসময়ে গৃহবধূর স্বামী ১২এপ্রিল বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি রাজেশ পাটিলের বেঞ্চে আবেদন করেন।
তিনি মেয়েটিকে নিজের কাছে রাখার জন্য আবেদনও জানান। একইসঙ্গে বোম্বে হাইকোর্টে তিনি আবেদন করেন,যে তাঁর নাবালিকা মেয়েকে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সঠিক যত্ন নিচ্ছেন না।অবহেলার শিকার হয়েছেন মেয়েটি।তাই সেই স্বামীর তরফে ইন্দিরা জয়সিং আদালতে জানান, মহিলার সঙ্গে একাধিক পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে।তার ওপর মেয়েটির ভবিষ্যত ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এবিষয়ে বিচারপতি রাজেশ পাটিল তাঁর মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে জানিয়েছেন,কোনও স্ত্রী ভালো নাই হতে পারেন,কিন্তু তিনি ভালো মা হতে পারবেন না এরকমটা একেবারেই নয়। পরকীয়ার জন্য হয়তো বিবাহ বিচ্ছেদ করা যেতে পারে,সম্পর্কে দাঁড়ি টানা যেতে পারে।কিন্তু কখনও কোনও সন্তানের অধিকার বজায় রাখার জন্য এই কারণ হতে পারে না। এবিষয়ে তাঁর মক্কেলের তরফে ইন্দিরা জয়সিং আবেদন করেন,মেয়েটির স্কুলের তরফে মেল করে মায়ের আচরণ সম্পর্কে আপত্তি করা হয়েছে। এবিষয়ে হাইকোর্টের তরফে বিচারপতি পাল্টা প্রশ্ন করেন,যদি স্কুলটি যথেষ্ট পরিচিতও প্রতিষ্ঠিত হয়,তাহলে কেন তাঁরা ঠাকুমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এটা জানা গেছে,আবেদনকারীর মা নির্বাচনে লড়তে চান।তিনি যথেষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও মেয়েটির মা একজন চিকিত্সক।তাই তিনি মেয়ের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল।
এবিষয়ে বিচারপতি রাজেশ পাটিল বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের মত শোনার পর তাঁর পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেন,মেয়েটির দিদিমা মেয়েটিকে যথেষ্ট দেখাশোনা করছেন।এখন মেয়েটির বয়স ৯বছরের কাছে,সে পিরিয়ডের আগের স্তরে রয়েছে।তার শরীর –স্বাস্থ্যের প্রতি কেয়ার করা বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। তাই আদালতের সিদ্ধান্ত হিসেবে বিচারপতি জানিয়ে দেন,মেয়েটি মায়ের কাছেই থাকুক,তাকে অন্য কোথাও পাঠানো ঠিক হবে না। এমনকি বোম্বে হাইকোর্ট ২১ এপ্রিলের মধ্যে মেয়েটিকে মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এই অবস্থায় মহিলার স্বামী স্ত্রীর থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের অনুমতি চায়।একইসঙ্গে তাঁর কন্যা সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চান। তাই ২০২৩এর ফেব্রুয়ারিতে ফ্যামিলি কো্র্ট নাবালিকা কন্যাকে তাঁর মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে বলা হয় মেয়েটির সঙ্গে থাকতে পারবেন তাঁর বাবা। কিন্তু মেয়েটি বাবার কাছে যাওয়ার পর আর তার বাবা তার অধিকার ছাড়তে চায়নি। তাই নিয়ে গোল বাঁধে।এখন বোম্বে হাইকোর্ট যে ঐতিহাসিক রায় দিল তাতে পরিস্কার, নাবালিকা কন্যা মায়ের কাছে থাকতে পারে।বিবাহ বিচ্ছেদের পর মাকে দেখভাল বা পরিচর্যার অধিকার প্রদান করে বোম্বে হাইকোর্ট সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন বার্তা দিল বলা যায়।