সুকমায় আত্মসমর্পণ ১৬ মাওবাদীর, মাও-মুক্ত হয়েছে কেরলাপেন্ডা গ্রাম
16 Maoists surrender in Sukma, Keralapenda village cleared of Maoists

Truth Of Bengal: চলতে থাকা মাও দমন অভিযানের মধ্যে বড় সাফল্য। সোমবার ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলায় আত্মসমর্পণ করলেন ১৬ জন মাওবাদী নেতা। অস্ত্রসস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করা ৬ জনের মাথার দাম ছিল ২৫ লক্ষ টাকা। সুকমার পুলিশ সুপার কিরণ জি চবন জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণকারী ১৬ জন মাওবাদীর মধ্যে ৯ জনই চিন্তালনার থানা সীমানার অন্তর্গত কেরলাপেন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা।
তাদের আত্মসমর্পণের ফলে, গ্রামটি মাওবাদী মুক্ত হয়ে গেছে এবং রাজ্য সরকারের একটি নতুন প্রকল্পের অধীনে উন্নয়ন তহবিলের জন্য ১ কোটি টাকা পাবে। জেলা পুলিশ প্রধান আরও বলেন, রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ) এই অঞ্চলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার প্রেক্ষাপটে আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটেছে। তার বক্তব্য, ‘এই ১৬ জন নকশালের ওপর সম্মিলিতভাবে ২৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ব্যাটেলিয়ন এবং অন্যান্য ডিভিশনের নকশালরাও ছিলেন, যার মধ্যে ওড়িশার কিছু মানুষও ছিলেন।’
সুকমা পুলিশের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে আত্মসমর্পণ করা ১৬ জনের মধ্যে দু’জন সিনিয়র ক্যাডার রয়েছেন। তাঁরা হলেন রিতা ওরফে ডোডি সুক্কি, যিনি পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির (পিজিএলএ) কেন্দ্রীয় আঞ্চলিক কমিটির (সিআরসি) কোম্পানি নম্বর ২-এর সক্রিয় সদস্য এবং রাহুল পুনেম, যিনি মাওবাদীদের পিএলজিএ ব্যাটালিয়ন নম্বর ১-এর সদস্য। তাদের দু’জনের প্রত্যেকের মাথার দাম ছিল ৮ লক্ষ টাকা।
মাওবাদীদের অস্ত্র ত্যাগ করাতে ‘নকশাল আত্মসমর্পণ এবং আক্রান্তদের পুনর্বাসন নীতি ২০২৫’-এ বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ছত্তিশগড় সরকার। যেখানে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসন, চাকরি, আর্থিক পুরস্কার এবং আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়। মাওবাদী নেতাদের পদ অনুযায়ী সুবিধা প্রদান করা হয় নয়া পুনর্বাসন নীতিতে। যে সব ক্ষেত্রে মাওবাদী ইউনিটের ৮০ শতাংশ সদস্য একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করবেন, সেখানে দ্বিগুণ পুরস্কার প্রদান করা হবে। প্রশাসনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য-সহ মাওবাদী পুনর্বাসন নীতি মেনে চাকরি এবং আরও নানান সাহায্য করা হবে।
এর আগে গত ২১ মে ছত্তিশগড়ে গুলির লড়াইয়ে হয়েছিল নিকেশ ৩০ মাওবাদী। তাদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ মাও নেতা বাসবরাজ। ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর-বীজাপুর সীমানায় অভিযানে এই সাফল্য পেয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী। বাসবরাজ মাওবাদীদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর মাথার দাম ছিল এক কোটি টাকা। এই শীর্ষ মাওবাদী নেতাকে খতম করতে পারা বড় সাফল্য বলে মনে করে নিরাপত্তা বাহিনী।
সাতের দশক থেকে নকশালদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাসবরাজ। সারা দেশে নিরাপত্তাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে খুঁজছিল। এর আগে বহুবার নাগাল থেকে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। শেষপর্যন্ত এই মাওবাদী নেতাকে নিকেশ করতে সক্ষম হয় ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড। বাসবরাজ-সহ ২৭ জন মাওবাদীকে নিকেশ করা হলেও এখনই এই অভিযান থামছে না। ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলায় অবুঝমাড় অঞ্চলে জঙ্গলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তারক্ষীদের অভিযান এখনও চলছে।
একদিকে অভিযান চালিয়ে চলছে মাওবাদী নিকেশ, সেই সঙ্গে অন্য দিকে চলছে মাওবাদীদের মূল স্রোতে ফেরানোর প্রক্রিয়া। প্রশাসনের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই ফিরে আসছেন মূল স্রোতে। অস্ত্রসহ তারা আত্মসমর্পণ করছেন। সোমবার তেমনভাবে আত্মসমর্পণ করলেন ১৬ জন মাওবাদী নেতা। যাদের অনেকেই প্রশাসনের কাছে ছিলেন মোস্ট ওয়ান্টেড। প্রশাসন চায় সম্পূর্ণ মাওমুক্ত পরিবেশ। সেই লক্ষ্যে জারি আছে অভিযান।