লাইফস্টাইলস্বাস্থ্য

পানের মধ্যেই রয়েছে মারণরোগ থেকে বাঁচার জিওনকাঠি

Paan is good for health

The Truth of Bengal, Mou Basu: মন দিলখুশ রাখতে এক খিলি পানের জুড়ি মেলা ভার। তবে শুধু মুখশুদ্ধিই নয় স্বাস্থ্য রক্ষাতেও অতুলনীয় পান। ওরাল বা মুখগহ্বরে ক্যানসার সৃষ্টিকারী কার্সিনোজেনিক কোষ ধ্বংস করতে পারে পান। মনে করা হয়, ভালো করে পান চিবোলে তা ওরাল ক্যানসার দূর করতে সক্ষম। লালারসে থাকা অ্যাসকর্বিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে পানের রস। প্রতিদিন ১০-১২টা করে পান একসঙ্গে জলে কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরমধ্যে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। পানকে বলা হয় পাওয়ার হাউজ অফ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। পান শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলস দূর করে। পিএইচ মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আর্য়ূবেদে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করতে পানের ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রতিদিন রাতে পান পাতা কুচিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে সেই জল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর হবে।

ভিটামিন সি, থায়ামিন, নায়াসিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ পানে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ফাইটো কেমিক্যালস, ফেনোলিক কম্পাউন্ডস, ফ্ল্যাভোনয়েডস, ট্যানিনস, অ্যালকালয়েডস, স্টেরয়েডস আর কুইনোনস। আর্য়ূবেদে পানপাতাকে হার্টের রোগ, হাই কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রোধ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মুখ, দাঁতের রোগ, হজমের গন্ডগোল ও মানসিক অবসাদ দূর করতেও ব্যবহার করা হয় পান।

সংস্কৃত ভাষায় পর্ণ শব্দের অর্থ পাতা। পর্ণ শব্দ থেকে এসেছে পান। পানের আদি জন্মভূমি মালয়েশিয়া। ভারতে প্রথম তামিলনাড়ুতে পানের চাষ শুরু হয়। সংস্কৃত ভাষায় পানকে বলা হয় তাম্বুল। নানান আকৃতির পান পাতা নানা রাজ্যে নানা নামে পরিচিত। পান আমাদের সামাজিক জীবনের অঙ্গ। বিয়ে, পৈতে, অন্নপ্রাশন থেকে শুরু করে নানা শুভ অনুষ্ঠানে পানের ব্যবহার অপরিহার্য। আগেকার দিনে কোনো শুভ কাজের সূচনায়, নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দুই পরিবারের মধ্যে পান-সুপুরি আদান প্রদানের প্রথা ছিল। সুপুরি কিন্তু বিদেশ থেকে আসেনি, তা একেবারে খাঁটি ভারতীয়। মোগল সম্রাট আকবরের দরবারে পান ও সুপুরির বিশেষ কদর ছিল। ভাস্কো দা গামা, মার্কো পোলোর মতো পরিব্রাজকের লেখাতেও পান খাওয়ার উল্লেখ আছে। বহুকাল আগে থেকেই বাংলা থেকে গোটা ভারতেই খাওয়ার পর পান খাওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। হরপ্পা সভ্যতাতেও পান খাওয়ার রীতি ছিল। ৭টি প্রধান শিরা থাকায় বৈদিক সাহিত্যে পানকে বলা হয়েছে “সপ্তশিরা”। খনার বচনে পানের কথা বলা হয়েছে। বাস্তুশাস্ত্রে বাড়িতে পান রাখলে বাস্তুদোষ, জীবনে বাধা দূর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কতটা স্বাস্থ্যকর পান?

  • পানে এমন কিছু পদার্থ আছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পানের রস পান উপকারী বলে মানা হয়।
  • চর্বি গলিয়ে স্বাস্থ্যকর ভাবে বাড়তি ওজন ঝরাতে সাহায্য করে পান।
  • শরীরে মেটাবলিক রেট বা বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে পান। পান পাতা বেটে কাটা, ছেঁড়া, জ্বালাপোড়া জায়গায় লাগালে উপশম হয়। তাড়াতাড়ি ঘা শুকোয়।
  • প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হলে পান পাতা বেটে কপালে লাগালে পানের কুলিং প্রপার্টি যন্ত্রণা কমিয়ে দেয়।
  • তিক্ত কষযুক্ত পানের রসে আছে ক্ষার গুণ যা হজমের সমস্যা দূর করে। পাকস্থলী আর অন্ত্রে পিএইচ ভারসাম্য ঠিক রাখে। খাওয়ার পর পান চিবোলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। পানে থাকা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ হজম করতে সাহায্য করে।
  • সর্দিকাশি, বুকে ও ফুসফুসে কফ জমা, অ্যাজমার মতো সমস্যা দূর করে পান। ঠান্ডা লেগে সর্দিকাশির সমস্যা হলে অল্প পরিমাণে পান ২ কাপ জলে ফোটান। তাতে দারচিনি, এলাচ ও লবঙ্গ দিন। দিনে ২-৩ বার এই ফোটানো জল খেলে সর্দিকাশি কমবে।
  • পান মুখের মধ্যে থাকা ব্যাক্টেরিয়া, জীবাণু ধ্বংস করে। মুখের দুর্গন্ধ, ক্যাভিটিজ রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত ও মাড়ির যন্ত্রণা কমায়।

Related Articles