
The Truth of Bengal, Purnendu Banerjee: সিমলিপাল নামটাতো শুনেইছেন নিশ্চয়ই, ওড়িশিয়ার বিখ্যাত জাতীয় উদ্যান। টাইগার রিসার্ভও বটে। ভারতের আর পাঁচটা জাতীয় উদ্যান যতগুলি রয়েছে, তার থেকে অনেকটাই আলাদা সিমলিপাল। আপনারা হয়তো প্রশ্ন তুলতেই পারেন, সারা ভারতে এতো জঙ্গল থাকতে সিমলিপাল নিয়ে কেন? আসলে সিমলিপাল জঙ্গলের যে বৈচিত্র্য ও মাধুর্য্য আছে, তা ভারতের অন্য জঙ্গলে তেমনটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সিমলিপালের সবচেয়ে বড় কাহিনি যেটা টানে, সেটা হল এক শাশ্বত ভালোবাসার গল্প, সত্যি কাহিনি, যদিও সেই কাহিনির অন্তিমটা বিয়োগান্ত।
সরোজরাজ চৌধুরী। এই নামটাও হয়তো অনেকের জানা তবু একবার স্মৃতিচারণ করা যাক তাঁক কথা নিয়ে। সরোজরাজ চৌধুরী, একাধারে পরিবেশবিদ, বণ্যপ্রাণ সংরক্ষণকারী এবং লেখক। এ ছাড়া তাঁর আরও একটি পরিচয় ওড়িশা সরকারের প্রথম বণ্যপ্রাণ সংরক্ষণকারী আধিকারিক। সিমলিপাল ন্যাশানাল পার্কের প্রতিষ্ঠাতা বা ফাউন্ডার ডিরেক্টর ছিলেন তিনিই। ১৯৭২ সালে সিমলিপালের ফিল্ড প্রোজেক্টের প্রধান হন সরোজরাজ চৌধুরী। তিনিই প্রথম পাগ মার্ক (বাঘের পায়ের ছাপ মেপে) ব্যাঘ্রসুমারির কাজ শুরু করেন, পরে সেই পদ্ধতি সারা দেশেই চালু হয়।
১৯৭৪ সালে তাঁর জীবনে আসে এক ব্যাপক মোড়। সিমলিপালের খৈরি নদী থেকে, খরিয়া উপজাতির বাসিন্দারা একটি মেয়ে বাঘছানাকে উদ্ধার করে। তাকে নিয়ে আসেন সরোজবাবু। তার নাম দেওয়া হয় খৈরি। জঙ্গলের পরিবেশেই সরোজবাবু নিজের ঘরে লালনপালন শুরু করেন। তিলে তিলে বড় হয় খৈরি, একই টেবিলে বসে, যেমন বিস্কুটও খেত, তেমন মাংস। সারা দিন খেলার সঙ্গী বলতে, ব্ল্যাকি নামে এক দেশি কুকুর আর সরোজবাবুর বিধবা বোন নীহারিকাদেবী।
এই খৈরির আচার ব্যবহার খুব কাছ থেকে নজর করে লিপিবদ্ধ করেন সরোজবাবু। বিশেষ করে ফেরোমোন্সের ক্ষেত্রে অর্থাৎ বাঘিনীর ঋতুচক্রের সময় তাদের মুড, আচার ব্যবহার ঠিক কেমন থাকে, কোন স্থান পছন্দ করে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য তুলে রাখেন। জন্তুদের হিংস্রতা কমাতে বা সাময়িক স্তিমিত রাখতে তিনি প্রথম ট্রাঙ্কুলাইজার ব্যবহার করেন। তিনি চেয়েছিলেন খৈরির নামে বন্যপ্রাণ ইন্সটিটিউট তৈরি হোক, সেই উদ্যোগও শুরু হয়, কিন্তু প্রশাসনিক যাঁতাকলে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
একটা সময়ে সরোজবাবুর জীবনে আসে এক বিয়োগান্ত মোড়। তখন তিনি দিল্লিতে গিয়েছেন। আর সিমলিপালে একটি পাগলা কুকুর কামড় বসালো খৈরিকে। কয়েক দিনের মধ্যে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হল খৈরি। তাকে শান্ত রাখতে নিয়মিত ট্রাঙ্কুলাইজার দিতে হত। অবেশেষে জীবনের লড়াইয়ে হার স্বীকার করল খৈরি। আর সেই ধাক্কা প্রবলভাবে সরোজবাবুর মনে প্রভাব ফেলল। মাত্র ছয় মাসে আট কেজি ওজন কমে গেল।
আরও পড়ুন- ভারতের এই অদ্ভুত দর্শনের প্রচীন মন্দির তৈরি করেছিল ভূতেরা?
বাংলার বিখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও খৈরির কথাকে তুলে রেখেছেন কালো হরফে বন্দি করে। সিমলিপালের কোর এলাকায় বাঘের ডাক বা পায়ের ছাপ দেখতে অনেকেই যান। কিন্তু খৈরির খেলে বেড়ানোর শব্দ, গর্জন বা ব্ল্যাকির সঙ্গে লুকোচুরি খেলা দৃশ্য কতজন অনুভব করেন? আর সরোজবাবুকে?