বিনোদন

রবীন্দ্র স্মরণে রূপভারতী

Roop Bharati in memory of Rabindra

Truth Of Bengal: জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি তো ইতিহাস প্রসিদ্ধ। নতুন করে তার কোন পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। আর ঠিক এর কাছেই আছে চোর বাগান নামে একটি অঞ্চল, এই চোরবাগানে চ্যাটার্জী বাড়িতে ২ মে ১৯৭৬, এই দিন নৃত্যশিল্পী কেকা চট্টেপাধ্যায় এর হাত ধরে জন্ম নিল একটি নৃত্যসংস্থা যার নাম হল রূপভারতী। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন শঙ্কর প্রসাদ মিত্র, প্রমথনাথ পালিত, রমন চট্টোপাধ্যায়, নীলমনি মুখোপাধ্যায়, বিনয়ভূষণ, শ্রীকান্ত বড়াল প্রমুখ। ওই সময়ে সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল সুস্থ সংস্কৃতির মাধ্যমে ভারতীয় নৃত্য কলাকে যুবসমাজ, বিশেষত মেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য একটা সময় ছিল যখন মেয়েদের নাচ করা বা পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রচুর বাধা বিপত্তি ছিল। সংস্থার অধ্যক্ষা ও এর ব্যতিক্রম নন।

এই রূপভারতীর ৪৯তম বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘রবীন্দ্র স্মরণে’ উদযাপিত হল উত্তর কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট প্রেক্ষাগৃহে। আর এখানেই ঘটল ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার মেলবন্ধন। এই অনুষ্ঠানে সভাপতির পদ অলংকৃত করলেন অ্যালেন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রীস এর কর্ণধার প্রখ্যাত শিল্পপতি ডঃ জিপি সরকার। উপস্থিত ছিলেন অতি পরিচিত গায়ক ড. শ্রীকুমার চ্যাটার্জী যার কথায় অতীতের অনেক স্মৃতি মেদুর অধ্যায় উঠে এল।

প্রখ্যাত নৃত্য শুরু পলি গুহ যার উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানটির উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে। এরা প্রত্যেকেই রূপভারতীকে আরও অনেক বলে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়ে রইলেন। এখানে উল্লেখ্য যে পলি গুহ নিজেও এই অনুষ্ঠানের নৃত্যনাট্যে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা অরিন্দম গাঙ্গুলী, যার আর নতুন করে পরিচয় দেবার প্রয়োজন নেই বাংলার মানুষের কাছে।

এই সাংস্কৃতির সন্ধ্যার মূল আকর্ষণ ছিল রূপভারতীর নৃত্যানুষ্ঠান। নৃত্যানুষ্ঠানটিকে তিনটে ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ছড়ার দেশে রবীন্দ্রনাথ- এই পর্যায়ে অংশ গ্রহণ করল সংস্থার কচিকাঁচার দল, এরাই হল ভাবী কালের বনস্পতি। পরবর্তীতে, আরও নৃত্যানুষ্ঠান থাকলেও এই কচিদের অনুষ্ঠানটি একটা মাধুর্য এনেছে এখানে। এরপর এসছে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের ‘চণ্ডালিকা’ অবলম্বনে ‘কল্যানী’ আর এই এ কল্যানীতেই আমরা ফিরে পেলাম নৃত্যগুরু পলি গুহকে।

সেই সাথে পালি গুহর সাথে উপযুক্ত সঙ্গত দিলেন সংস্থার অধ্যক্ষা কেকা চট্টোপাধ্যায় এর সুযোগ্যা কন্যা অধ্যাপিকা ড. সূর্য্যানী চট্টোপাধ্যায়। সর্বশেষ আংশ ছিল মহিলা দের সশক্তিকরনের ওপর একটি অসামান্য, নৃত্যনাট্য যার বক্তব্য ছিল অন্ধকারের উৎস হতে। এই নৃত্যনাট্যটি খুব বাস্তবধর্মী ছিল, বাস্তবে অনেক নারীই হারিয়ে যায় সমাজের মূল স্রোত থেকে বিভিন্ন কারণে। এখানে দেখান হল সেই সকল নারীকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে, নারীকে অবমাননা করে কখনো কোন সমাজ উন্নতি করতে পারে না, ফুটিয়ে তোলা হল এখানে। নারীকে নিজেই নিজের শৃঙ্খল মুক্ত করে সমাজে নিজের সম্মান অর্জন করতে হবে।

পরিশেষে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করি নৃত্যশ্রী কেকা চট্টোপাধ্যায় যে উদ্দেশ্যে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, নৃত্যচর্চ্চা ও নৃত্যশিক্ষাকে সমাজে এক সম্মান জনক জায়গায় তুলে ধরা, তারই প্রতিফলন আজ এই ৪৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে দেখতে পেলাম।

Related Articles