বিনোদন

বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্রের মুখে প্রথম কোন ভারতীয় ভাষা শোনা গিয়েছিল জানেন

Do you know which Indian language was first heard by Bengalis' favorite detective character?

Truth of Bengal: মৌ বসু: বাঙালি মাত্রই একটা অনুসন্ধিৎসু মন থাকে। গোয়েন্দাদের মতোই তর্কপ্রিয় বাঙালি সব বিষয় সবদিক তলিয়ে দেখতে ভালোবাসে। তাই সাহিত্যপ্রেমী বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সী, ‘ফেলুদা’ প্রদোষচন্দ্র মিত্র কিংবা কিরিটি রায়। তেমন ভাবেই জন্মসূত্রে বাঙালি না হয়েও কমিক চরিত্র সাংবাদিক-গোয়েন্দা টিনটিনও বাঙালির ঘরের মানুষ। খাতায় কলমে টিনটিনের বয়স একশো বছরের কাছাকাছি হলেও, আজও ফানি চুলের স্টাইল ও বেবি ফেসের টিনটিন আজও চিরনবীন।

বেলজিয়ামের কার্টুনিস্ট জর্জেস প্রসপার রেমি ওরফে হার্জের সৃষ্ট কার্টুন চরিত্র হল টিনটিন। ফরাসি ভাষায় প্রথম বেরোয় টিনটিন। প্রথম ভারতীয় ভাষা হিসাবে বাংলাতেই অনুবাদ করা হয় টিনটিন কমিক্স। ১৯৭৫ সালে হার্জের জীবদ্দশায় ফরাসি ভাষা থেকে প্রথম বাংলাতে অনুবাদ করা হয় টিনটিন কমিক্স। প্রথম ছোটোদের ম্যাগাজিন আনন্দমেলায় বেরোয় বাংলায় টিনটিন কমিক্স। এরপর ২৪টি টিনটিনের বই বাংলায় অনুবাদ করা হয়। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রথম টিনটিনের কমিক্স ফরাসি ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। সেই প্রথম কোনো ভারতীয় ভাষায় টিনটিনের জনপ্রিয় কমিক্স অনুবাদ করা হয়।

এ বড়ো গর্বের বিষয় প্রত্যেক বাঙালির কাছে। ঐতিহাসিক ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন হয়ে আসছে। সেই স্বীকৃতিও এসেছে আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষার হাত ধরেই। কথাতেই আছে, ভাষা স্রোতস্বিনী নদীর মতো সদা প্রবাহমান। যেমন আমাদের মাতৃভাষা বাংলা-চর্যাপদ থেকে শুরু। তারপর সংস্কৃত, ফারসি, আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, ল্যাটিন, উর্দু, জার্মানি, গ্রিক এবং আরও অনেক দেশি-বিদেশি ভাষার প্রবাহ পেরিয়ে উত্তরোত্তর বাংলা ভাষা আজ আরও সজীব ও সাবলীল হয়ে উঠেছে।

আজ বাংলা ভাষার প্রসাদগুণ আরও বেশি বেড়েছে। ভাষার হাত ধরেই বাঙালি আজ আন্তর্জাতিক স্তরে প্রাধান্য পেয়েছে। সাহিত্য, সিনেমা সব ক্ষেত্রে পুরস্কার উঠেছে বাংলা ভাষার দৌলতেই। সে কবিগুরুর গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদেই হোক কিংবা সত্যজিতের আদ্যন্ত বাঙালি জীবনের পটভূমিকায় তোলা পথের পাঁচালি’র সৌজন্যে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

২০১০ সালের ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার প্রস্তাব আনে। এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সারা বিশ্বের মোট ১৮৮টি দেশে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয় মহাসমারোহে। এটি নিশ্চয়ই ‘ভাষার’ ইতিহাসে এক অনন্য নজির ও সম্মানের।
বাংলা ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর টিনটিন, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, প্রফেসর ক্যালকুলাস, জনসন-রনসন, টিনটিনের পোষ্য কুট্টস বাঙালির ঘরের লোক হয়ে ওঠে। টিনটিনের স্রষ্টা হার্জে মাত্র একবার ভারতে আসেন। টিনটিন ২ বার ভারতে পা রেখেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল হার্জের কাছে ভারত থেকে এমনকি কলকাতা থেকেও বহু চিঠি যেন টিনটিনকে কলকাতায় আনার ও রহস্য উন্মোচন করার অনুরোধ জানিয়ে।

তবে শুধু বাংলা ভাষাতেই অনুবাদ হওয়া নয়। টিনটিনের সঙ্গে বাংলা ও বাঙালির আরও একটি জোরাল কানেকশন রয়েছে। টিনটিনের কমিক্সে আমরা উল্লেখ পাই ‘ফ্লাইট ৭১৪’ এর। ওই বিমানে চেপে প্রফেসর ক্যালকুলাস ও ক্যাপ্টেন হ্যাডক আন্তর্জাতিক স্পেস এক্সপ্লোরেশন কনফারেন্সে যোগ দিতে সিডনি যাচ্ছিল। মাঝপথে জ্বালানি ভরতে বিমান নামে জাকার্তার কেমাইয়োরান বিমানবন্দরে। তখন কমিক্সের ইংরেজি ভার্সনে প্রফেসর ক্যালকুলাসের মুখে শোনা যায় ‘রেঙ্গুন’ শব্দটি। কিন্তু ফরাসি ভাষায় প্রফেসর ক্যালকুলাসের মুখে শোনা যায় ‘চন্দননগর’। মনে রাখতে হবে হুগলির চন্দননগরে ছিল ফরাসি উপনিবেশ। জোসেফ ফ্রাঁসোয়া ডুপ্লে চন্দননগরের গভর্নর থাকাকালীন হুগলি নদীর কোলে চন্দননগর হয়ে ওঠে বাংলায় ইউরোপীয় প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র।