সম্পাদকীয়

কলকাতার স্বাস্থ্য পরিষেবায় কলঙ্কের দাগ টেনে দিচ্ছে কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল

Some private hospitals are tarnishing Kolkata's healthcare system

জয়ন্ত চক্রবর্তী: মাফ করবেন। এই লেখায় কলকাতার সব প্রাইভেট এবং কর্পোরেট হাসপাতালগুলিকে আমি অন্তর্ভুক্ত করছি না। কিছু কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল সত্যিই ভাল কাজ করছে। অন্তত রক্তচোষা বাদুড়ের মতো রোগীর আত্মীয়-স্বজনের ঘাড় ভেঙে রক্ত চুষে খাচ্ছে না। কিন্তু বাকি প্রাইভেট হাসপাতালগুলি? মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দফতর তাঁর হাতে রেখেছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে সব মানুষের কাছে পৌঁছয় সেই মতো নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন।

জেলার সদর হাসপাতালগুলিকে পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। হচ্ছে অনেক কিছুই– কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাফল্যের মুকুটে কালি লেপন করার জন্যে কলকাতার একটি বা দুটি প্রাইভেট কর্পোরেট হাসপাতালই যথেষ্ট। আপনার মোটা অঙ্কের মেডিক্লেম থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলে আপনি কতটা অর্থবান তার ওপর নির্ভর করছে আপনার পরিষেবা পাওয়া।

যদি মেডিক্লেম থাকে তা হলে ভাল। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল নিতে চায় না। কিছু নির্দিষ্ট অসুখ ছাড়া স্বাস্থ্য সাথীকার্ড-কে মান্যতা দেওয়া হয় না। মেডিক্লেম থাকলে ভাল নয়তো ফেলো কড়ি মাখো তেল গোছের অবস্থা। তবু সাধারণ মানুষ এই হাসপাতালগুলিতে ছোটে ভাল পরিষেবা পাওয়ার আশায়। ‘আশার ছলনে ছলি কি ফল লভিনু হায়’ গোছের অবস্থা হলেও মানুষ তবু ছোটে এই কর্পোরেট প্রাইভেট হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য যেদিন থেকে লোভনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে, সেদিন থেকেই শেষের সেদিন শুরু। প্রতিযোগিতামূলক পরিষেবা বিতরণের সূত্রপাত সেদিন থেকে। পরিষেবা নিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাই, শহর জুড়ে বড় বড় প্রাইভেট হাসপাতালের হোর্ডিং আর বিজ্ঞাপন। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও পুকুরচুরি। বড় মেডিক্লেম কোম্পানিগুলির সঙ্গে অলিখিত ব্যবস্থাক্রম চালু আছে। আপনার ইচ্ছা থাকলেও পছন্দসই চিকিৎসক নিয়োগ করতে পারবেন না।

এমপানেল্ড চিকিৎসক ছাড়া আপনি মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স-এর সুবিধা পাবেনই না। তা হলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? প্রাইভেট কর্পোরেট হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছে। আর প্রতি পদে এই ধাক্কা খাচ্ছে। চিকিৎসা পরিষেবা এই হাসপাতালগুলির কাছে পণ্য ছাড়া আর কিছু নয়। টাকা থাকলে, উচ্চ মেডিক্লেম থাকলে প্রাইভেট হাসপাতালে যাও। নয়তো নয়। মানছি এই হাসপাতালগুলি চালাতে ব্যায় আছে, মানছি ঝাঁ চকচকে ইনফাস্ট্রাকচার চালাতে ব্যয় আছে, মানছি বাংলাদেশের রোগী আসা বন্ধ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলি কিছুটা বাকফুটে। কিন্তু তা বলে এইভাবে পুকুরচুরি!

প্রাইভেট হাসপাতালের নামী চিকিৎসকরা অধিকাংশই এখন উৎকৃষ্ট এজেন্ট। ডিম পাড়া মুরগি ধরে দিতে পারলেই নগদ অর্থ, নিদেনপক্ষে বিদেশ ভ্রমণ। এর দ্বারা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা কলঙ্কিত হলেই আমার কী যায় আসে! ‘মেডিক্যাল কনফারেন্স’-এ হিল্লি দিল্লি, পারিস টারিস ঘুরে বেড়াতে পারলেই হল। কার স্বামী মারা যাচ্ছে অথবা কার বাবা– তাতে বয়েই গেল। কানে দিয়েছি তুলো আর পিঠে কুলো বেঁধেছি তো। আর্তের বিলাপধ্বনি কানে না পৌঁছলেই হল!

Related Articles