
শ্যামল কান্তি ধর: পাকিস্তানের সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে। সেই ১৯৪৭ সালের যুদ্ধ। তারপর ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ। আন্তর্জাতিক ময়দানে পাকিস্তানের ধোঁকাবাজির রাজনীতি সমানে চলছে। আর বারে বারে ভারতকে জেনে বুঝে সেই ফাঁদে পা দিতে পা দিতে হচ্ছে কেন? আপামর ভারতবাসীর কাছে এটা লাখ টাকার প্রশ্ন, তবে শুধু পাকিস্তানের ধোঁকাবাজির ট্রাডিশন নয় ভারতের কাছেও। তবে তার মধ্যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধটা বাদ যাবে। কারণ সেটি ছিল সেটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধজয়ের পর স্বাধীন ভারতের আর এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ।
১৯৭১ সালের যুদ্ধ জয়। সর্বাত্মক ঐতিহাসিক কারণ এই কারণেই আজও ঐতিহাসিক হয়ে আছে। কারণ এটি ছিল বাস্তবের ধ্যানধারণায় বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে হাতে কলমের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে তিন হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি সৈন্য মারা যায় এবং প্রায় বারো হাজার সৈন্য আহত হয়। এই বিশ্বের তাবড় তাবড় শক্তিশালী দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন পাকিস্তানকে সরাসরি না হলেও পরোক্ষের সমর্থন দিয়েছিল। চিন সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছিল। প্রয়োজনে তৃতীয় ফন্ট খুলে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে বলে হুমকিও দিয়েছিল।
এমনকী যুদ্ধের জয়ের পর বাংলাদেশকে নিজেরা স্বীকৃতি তো দেয়ইনি বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যাতে স্বীকৃতি না দেয় তার জন্য প্রভাবিত করেছিল। সে যাই হোক পাকিস্তানের পরম মিত্র মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে ভারতের গতিপথ রুদ্ধ স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু রুদ্ধ করতে পারেনি, স্তব্ধ করতে পারেনি ভারতের চলার গতিকে। সেই চরম দুঃসময় সোভিয়েত রাশিয়া নবম নৌবহন পাঠানোর ঘোষণা করে। সেই ঘোষণায় তাবড় তাবড় দেশের নেতারা ঘাবড়ে যায়। তবে সেই সময়কার সোভিয়েত ইউনিয়ন সঙ্গে বর্তমানের অনেক পার্থক্য আছে। যাই হোক। সেই ক্ষেত্রেও আজকের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কথিত আছে হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন আমেরিকা নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি রিচার্ড নিক্সনের দূত হয়ে ভারতে আসেন এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধ নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বজ্রকঠিন মনোভাবে কিসিঞ্জারের কোনও জোর খাটেনি বরং কথিত আছে দিল্লি সফরে এসে মিসেস গান্ধীর সঙ্গে যখন এই বৈঠকে মিলিত হন, তিনি ভারতীয় সেনাপ্রধানকে ফুল ইউনিফর্মে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে বলেন। মিটিং চলছে। ইন্দিরা গান্ধী বললেন, পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি হিন্দু নিধন যজ্ঞ চলছে। যদি কেউ কিছু পজিটিভ সিদ্ধান্ত না নেন তা হলে বাধ্য হয়ে ইউনিফর্ম পরা জেনারেলের দিকে তাকিয়ে বললেন ওনার হাতেই বিষয়টিকে ছেড়ে দিতে হবে। ইঙ্গিত অতি স্পষ্ট। তারপরের ঘটনা তো ইতিহাস এবং ভারতবাসী কেন সারা বিশ্ব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিল।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ থাকে যে, সেই যে শিক্ষা পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৯৪ হাজার সৈন্য হাতিয়ার সহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হল। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় মাথাচাড়া দিয়ে জন্ম নিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক এক রাষ্ট্রের। ভাগ করে দিলেন পাকিস্তানকে। আর সেই যে পরাজয়ের গ্লানি আজও ভুলতে পারেনি পাকিস্তান। তাই বারে বারে ভারতকে অশান্ত করা রক্তাক্ত করার কাজ তারা প্রতি মুহূর্তে চালিয়ে যাচ্ছে।
একটি কথা বলার তাগিদ অনুভূত হচ্ছে, আজ থেকে ৫০ বছর আগে ভারতের কাছে না ছিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার, না ছিল ব্রহ্মস, পৃথ্বী-অগ্নি, আকাশ, রাফাল, এস ৪০০– শুধুমাত্র ভারতীয় সেনার শৌর্য্য আর দক্ষতা এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দুর্বিনীত মনোভাব পাকিস্তানকে দুটুকরো করে দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু আজকের দুনিয়া কী দেখছে? শুধু চলছে বক্তব্যের ফুলজুরি। একবার যদি ভারতীয় সেনাবাহিনীর জয়গান হয়, একবার যদি জল-স্থল-আকাশ সেনাপ্রধানদের বিজয়গাঁথা প্রচার হচ্ছে তো দশবার হচ্ছে আত্মতুষ্টির জয়গান।
২০২৫-এর ৭ মে পাক কাশ্মীরের কয়েকটি জঙ্গি ঘাটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও হাতে আনা গেল না পিওকে। বেইমান প্রতিবেশীর চূড়ান্ত শিক্ষা দেওয়ার মনে হয় সময় এসেছে। বর্তমানে ওদেরকে যদি শিক্ষা না দেওয়া হয়, তা হলে ৭১-এর পুনরাবৃত্তি অবশ্যম্ভাবী। কারণ দলে দলে না খাওয়া মানুষের ঢল নামবে এপার বাংলায় মানে ভারতে।