আরজিকরের প্রভাব পড়বে না, উপনির্বাচনে ভালো ফল করবে তৃণমূল, মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের
Political analysts like Trinamool will have good results in the by-elections

Truth of Bengal, জয় চক্রবর্তী: কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন অব্যাহত। এই আবহে বঙ্গে ফের ভোটের হাওয়া। আগামী মাসের ১৩ তারিখ ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন রয়েছে। কিন্তু এই উপনির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকেই ভালো ফল করবে? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমজনতার মনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুব্রত বাগচী মনে করেন, এই ছটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে গতবারের ফলাফলে খুব একটা হেরফের হবে না। এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচন ড্রেস রিহার্সাল বলেও মনে করছি না। গত বিধানসভা নির্বাচনে ৬ টি আসনের ৫টিতেই জিতেছিল তৃণমূল। একটি পেয়েছিল বিজেপি। তিনি আরো বলেন, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দুর্গাপুজোর কার্নিভালের পাশাপাশি দ্রোহ কার্নিভাল হয়েছে।
এখানে মূলত বামপন্থী সমর্থকদের দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলনের প্রভাব বামেরা ভোট বাক্সে কতটা ঘোরাতে পারবে সেটা অনিশ্চয়তার জায়গায় আছে। তাছাড়া বামেদের এখন যা ভোট শতাংশ তার থেকে কিছুটা বাড়লেও তৃণমূলের ভোট বাক্সে নজরকাড়ার মত প্রভাব পড়বে না বলেই মনে হয়। আরজি করের ঘটনার পরে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল।
শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের সেই মানসিকতাকেই নয়, চিকিৎসকদের আন্দোলনের পাশেও দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনায় দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিও করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে একাধিক দাবি করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কালীঘাটের বাড়িতেও বৈঠকে ডেকেছিলেন চিকিৎসকদের।
শর্তের উপর শর্ত চাপিয়ে একাধিকবার বৈঠক ভেস্তে দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। যে কটা শর্ত জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল তার বেশিরভাগটাই বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। এরপরেও ডাক্তারদের পক্ষ থেকে আন্দোলন অব্যাহত। ব্রিগেডের ডাক দেওয়া হচ্ছে। এখানেই মানুষের মনে প্রশ্ন আন্দোলনের পিছনে কি রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক অর্ণব সাহার বিশ্লেষণ, প্রথমদিকে আন্দোলনটা সাধারণ মানুষের ছিল।
পরবর্তী সময়ে আন্দোলন রাজনৈতিক ভাবে এগোতে থাকে। নির্যাতিতার বিচার নয়, সরকারকে অসুবিধায় ফেলাটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। আন্দোলনটা মূলত মাসিক বেতন পাওয়া মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের হয়ে উঠেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব কমেছে।অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিরোধী দল সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।নবান্ন অভিযানে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রত্যক্ষ মদত ছিল।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বামদের একাংশ রাস্তায় নেমেছেন। এরা কোনদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক ছিলেন না। এমনকি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পকেও তাচ্ছিল্যের চোখে দেখেছেন। ফলে যে আন্দোলন একসময় সাধারণ মানুষের আন্দোলন হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল তার ধার কমেছে। ফলে নির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না, জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অর্ণব সাহা।
আন্দোলনের প্রভাব কলকাতা শহর বাদে গ্রামগঞ্জে সেই ভাবে দেখা যায়নি। আসলে যারা এখন আন্দোলন করছেন তারা কি সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করেন? এটাতো প্রশ্ন রয়েছে। সুতরাং আমজনতা এই লোক দেখানো আন্দোলনের পক্ষে নয়। ফলে উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ফলাফল ভালোই হবে। চাঁচাছোলা ভাষায় বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক অর্ণব সাহার। অনেকেই বলছেন চিকিৎসকরা সমাজের মেধার তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। তারা অত্যন্ত দক্ষ।
কিন্তু একজন চাষী কিভাবে ফসল ফলাতে হবে সে বিষয়েও দক্ষ। শুধুমাত্র চিকিৎসকরা নন বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানুষ দক্ষতার পরিচয় দেন। আন্দোলনের নামে যখন তখন রাস্তা অনুরোধ করে দেওয়া, মানুষের অসুবিধে তৈরি করা সবাই দেখেছেন। এমনকি এদের জন্য দুর্গাপুজোর কেনাকাটাতেও প্রভাব পড়েছে। সরাসরি মানুষের পেটে লাথি মেরেছেন। এটা কি সত্যি আন্দোলন?” প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধান বাণী দিয়েছেন অর্ণব বাবু। সাংগঠনিকভাবে আন্দোলনের নামে যা হচ্ছে তা মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। প্রচারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মুখোশ খোলার পরিকল্পনাও করতে হবে তৃণমূলকে, জানিয়েছেন অর্ণব সাহা। আরজি কর আবহে আগামী নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখ ছটি বিধানসভায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলাফল ঘোষণা হবে নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখ।
আন্দোলনের প্রভাব তৃণমূলের ভোট বাক্সে হেরফের হবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের একাংশ। তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ জল ও দুধ মিশে গেলেও দুধ টাকে ঠিক নিতে পারবেন। তাই মানুষ দুহাত তুলে ফের আশীর্বাদ করবেন তৃণমূল কংগ্রেসকেই।