
অসীম কুমার মিত্র: হাওড়া জেলার জয়পুর থানা (পূর্বতন আমতা থানা)-র অন্তর্গত আমতা-ঝিখিরা সড়কের সংলগ্ন দক্ষিণে রাউতড়া গ্রামে অবস্থিত মানিক পিরের পূর্বমুখী দোচালা-রীতির একটি দরগা আকারে ছোট হলেও গুরুত্বে বড়। দরগাটি রাউতাড়ার ফুটবল মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত। স্থানীয় রায়পরিবার প্রতিষ্ঠিত এই দরগার প্রবেশপথের উপরে প্রস্তরফলকে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে– ‘মানিক পীর ভরসা, সন ১২০৪ সালে তপস্বী বাঞ্ছারাম রায়ের স্বনামধন্য পুত্র স্বর্গীয় রামজয় রায় স্থাপিত দরগা তদীয় বংশধরগণ কর্তৃক সংস্কার হইল। সন ১৩৫৬ সাল ২রা বৈশাখ’।
এক মুসলমান পিরের স্মৃতিরক্ষার্থে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কর্তৃক ১২০৪ সালে (ইং ১৭৯৭) প্রতিষ্ঠিত এই আশ্চর্য পুরাকীর্তিটি ২৩০ বছর ধরে স্থানীয় হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে এক স্থায়ী মিলনসেতুরূপে বিরাজ করছে। ভাবা যায়! আজ থেকে ২২৯ বছর আগে হাওড়ার গ্রামাঞ্চলে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির নজির হিসাবে উল্লেখ করার মতো কীর্তি রেখে গেছেন জয়পুর থানার রাউতারা গ্রামের কেরানি বাটীর প্রতিষ্ঠাতা এক হিন্দু- রামজয় রায়। সেই পিরের দরগার সংস্কার সাধন করে তাঁর বংশধরেরা আজও ধর্মনিরপেক্ষতার যে ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন তা হাওড়ার গর্ব।
কাছাকাছি বহুগ্রামের হিন্দু মুসলমান নরনারী মানিকপিরকে ভক্তিশ্রদ্ধা করেন, তাঁর কাছে মানত করেন, মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলে মানসিকের পুজো দিয়ে যান। পিরের বাৎসরিক উৎসব হয় ২ বৈশাখ। তখন বেশ বড় মেলা বসে। শতাব্দী প্রাচীন রাউতারা রায় ব্রাদার্স ফুটবল ক্লাবের সহযোগিতায় বসে এই মেলা। যা সয়লা বা সহেলার মেলা বলেই বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।
এই উৎসবে মানিক পিরের গান হয়, দূরদূরান্তর থেকে হিন্দু মুসলমান ভক্তরা এসে উভয় সম্প্রদায়ের উপাস্য এই পিরকে অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করে যান। রায় পরিবারের বর্তমান সদস্য অপূর্ব রায় বলেন, তাঁর পূর্বপুরুষ রামজয় রায় শুধু দরগাই প্রতিষ্ঠা করেননি, এটির পরিচালন ব্যয়ভার বহন করার জন্য বেশ কিছু জমিও বরাদ্দ করে গেছেন। তাঁর আশা, এই মানিক পিরের দরগা সারা দেশের কাছে সম্প্রীতির প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত থাকবে আবহমানকাল ধরে।