শিক্ষা সবার অধিকার, সেই লক্ষ্যেই তো সর্বশিক্ষা অভিযান, সর্বশিক্ষা মিশন, স্কুল চলো কর্মসূচি
Education is the right of everyone, and that is the aim of the Sarva Shiksha Abhiyan, Sarva Shiksha Mission, and the School Chalo program.

Truth Of Bengal: জয়দেব দেবাংশী: স্কুল ছুট বা একেবারে স্কুলমুখী হই নি, এই ধরনের বালক বালিকার সংখ্যা অনেক। দেশের সরকারি সমীক্ষা তাই বলছে। তবে বাস্তব বড় কঠিন। তাই সঠিক তথ্য সরকারি খাতায় স্থান পায় না। যেখানে দারিদ্রতা সেখানেই নিরক্ষতার বাসভূমি বেশি।
দরিদ্র ও নিরক্ষর পরিবার থেকে উঠে আসা ৬-১৪ বছরের বালক বালিকারা শিক্ষা সংস্কৃতির বাইরে থাকতে থাকতে আগামী দিনে নিরক্ষরের তালিকা স্থান পায়। প্রশ্ন কিন্তু কেন, স্বাধীনতার এতগুলো বছর কেটে গেল বিভিন্ন কর্মসূচি ও সার্কুলারের মধ্য দিয়ে। সর্বশিক্ষা অভিযান, সর্বশিক্ষা মিশন, স্কুল চলো কর্মসূচি ইত্যাদি। ৭৮ বছরের স্বাধীন ভারতের রাস্তায় এখনো চিৎকার করে শুনতে পাওয়া যায় শিক্ষা সকলের অধিকার, দুঃখের বিষয় রূপায়ণের সঠিক ব্যবস্থা আজও হল না।
আসলে কর্মসূচি সার্কুলার, চিৎকার সবকিছু উপর থেকে আসা, মাটি থেকে উপরের দিকে যাওয়ার ব্যবস্থা নাই,। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেকদিন আগেই দুঃখের সহিত বলিয়া গিয়াছেন, সকলকে পুরা পরিমাণে মানুষ করিব ইহা আমাদের অন্তরের কথা নয়। এই দুঃখজনক কাহিনীর আমি কিছু কারণ তুলে ধরছি, যেমন দরিদ্র ও নিরক্ষর পরিবারের শিশু জ্ঞান হওয়ার পর দেখতে পাই তার পিতা-মাতা সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত জীবিকা অর্জনের কাজে যুক্ত থাকছে।
কাজ খাওয়া আর রাতে ঘুমানো এই হচ্ছে তাদের পরিবারের সংস্কৃতি। শিশু দেখতে বা বুঝতে পারে তাদের পিতা-মাতা নিজস্ব কোন চিন্তা ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছে না, অপরের চাপানো ব্যবস্থার মধ্যে তাকে যুক্ত থাকতে হচ্ছে। শিশু দেখতে পাই প্রায় দিন তাদের পিতামাতা ভয়ংকর ঝগড়া, এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে নেশা করে মারামারি পর্যন্ত করে থাকে, এইভাবে শিশু মন শুরুতেই পরিবারের উপর আস্তা হারিয়ে ফেলে, ঝরে যায় তার নিজস্ব সত্তা।
বঞ্চিত হতে থাকে স্নেহ মায়া মমতা ভালবাসা হতে। এছাড়া দেখতে পাই তার এলাকার শিক্ষিত পরিবারের সঙ্গে তাদের পরিবারের অনেক বড় ব্যবধান। এইসব দেখে সে পথভ্রষ্ট হয়ে এদিকে ওদিকে ঘোরাফেরা করতে করতে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে বিশেষ করে বিরি ও মদের মধ্যে। এরপর নেশার পয়সা জোগাড়, ও পিতামাতাকে খুশি করার জন্য পয়সা রোজকারের জন্য কারো ঘরে বা বিভিন্ন দোকানে কাজে যুক্ত হয়ে যায়, এবং শিশু শ্রমিক আখ্যা নিয়ে সঠিক জীবনকে খুঁজে পাওয়ার রাস্তা হারিয়ে যায় আঁধারের কোলে।
এখন প্রচার ও কৌশলের দ্বারা ওদেরকে ইস্কুলে ভর্তি করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বেশিভাগই দেখা যাচ্ছে খাতা কলমের নামের তালিকা, দু একদিন স্কুল যাওয়ার পর আস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে আসার চেষ্টা করে, কারণ ওই প্রথাগত ব্যবস্থা তারা মন থেকে মানতে পারেনা,। যারা ফোর ফাইভ পর্যন্ত স্কুলে থাকছে , দুঃখের বিষয় তাদের ঠিক মতো অক্ষর পরিচয় হচ্ছে না। বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার ছেলেমেয়েদের।
বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া ব্লকের ছটি পঞ্চায়েতের আদিবাসী গ্রামে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের পরিচালনায় সকাল বা বিকালে দু’ঘণ্টা করে ছেলে মেয়েদের আনন্দ পাঠ শিক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে এসে পড়াই। দুটি তপশিলি জাতি কেন্দ্র আর নটি আদিবাসী কেন্দ্র, উক্ত গ্রামগুলোরই পনেরো জন শিক্ষিত মহিলা স্বেচ্ছাশ্রমে এই মহতী কাজটি করিয়া চলেছে, এখনো কোন পড়ুয়াদের উপকরণ, এবং এই গরিব ঘরের মহিলাদের জন্য কিছু ভাতার, ব্যবস্থা আজ হলো না।
দেশের নেতা মন্ত্রী আমলাদেরকাছে অনুরোধ, ঠান্ডা ঘরে বসে আলোচনা ও সার্কুলার থেকে সরে এসে মাটিতে নামুন, এদের , শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও ধর্মনৈতিক মতাদর্শ মেনে এই অবহেলিত বঞ্চিত নিপীড়িত শিশুদের আগামী দিনের সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসুন।
আর এই কঠিনকাজটি কোন নামিদামি শিক্ষক দিয়ে নয়, সমাজসেবী, সাক্ষরতা কর্মী, সংস্কৃতি অনুরাগী উক্ত পরিবার থেকে শিক্ষিত মহিলা খুঁজে বের করে তাদেরকেই কাজে নিয়োগ করতে হবে, কারণ এই আনন্দপাঠে যে মহিলারা এই কঠিন কাজটি করছে তাদের দেখে বুঝতে পারছি এরাই পারবে তাদের পিছিয়ে পড়া সমাজের এই করুন কাজটিকে সাফল্যমন্ডিত করতে। এদের মধ্যে দেখতে পেলাম স্নেহ, মায়া,মমতা ও ভালোবাসা আছে। সহৃদয় সমাজসেবীদের কাছে অনুরোধ সাহায্য ও সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসুন।