দুর্গাপুজো ২০২৪

চালচিত্রের আছে নানান ইতিহাস, কীভাবে প্রচলন হল শিল্পসূষমায় ভরা চালচিত্রের ব্যবহারের

Chalchitra has various history, how is the usage of rice picture filled with industrial subtleties

Truth Of Bengal: Mou Basu: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো অনন্য শিল্পসূষমা তুলে ধরারও অনন্য মাধ্যম। টানা টানা চোখের শোলার বা ডাকের সাজের সাবেকি প্রতিমা হোক কিংবা শৈল্পিক থিমের ঠাকুর, মূর্তিতে যেমন অনন্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, তেমনই দেবীমূর্তির পেছনে থাকা চালচিত্রেরও আছে অনন্য ইতিহাস। শিল্পের দিক থেকে বাংলার একান্ত নিজস্ব শিল্প এই চালচিত্র।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হারিয়ে যেতে বসেছে এই অসাধারণ চালচিত্র শিল্প। কেন না আগে হাতে আঁকা হত চালচিত্র। কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগে সবই মুহূর্তের মধ্যে কম্পিউটারের সাহায্যে আঁকা হয়। চালচিত্র শিল্পীদের জীবন-জীবিকা আজ সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে।

ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যাবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের সময় থেকে ভারতে প্রচলন ঘটে চালচিত্র শিল্পের। মূলত, হিন্দু দেব-দেবীদের গরিমা তুলে ধরতেই চালচিত্রের প্রচলন ঘটে। পরে তা ক্রমশ বাঙালি সংস্কৃতিতেও ছড়িয়ে পড়ে। চালচিত্র বা কথ্য ভাষায় চালি সাধারণত কাগজ, পটের ওপর আঁকা হলেও হাতির দাঁত, কাঠ, পাথর এমনকী অষ্টধাতুর ওপর নির্মিত মূর্তির ওপরও আঁকার নিদর্শন পাওয়া গেছে।

প্রতিমা যাঁরা তৈরি করেন সেই মৃৎশিল্পীরা কিন্তু চালচিত্র তৈরি করেন না। আলাদা ভাবে তৈরি করে মূর্তির পেছনে লাগানো হয় চালচিত্র। এতে নানান লৌকিক গাথা আঁকা হয়ে থাকে। যেমন, পুজোর আগে মৃৎশিল্পীদের যেমন নাওয়াখাওয়ার সময় থাকে না তেমনই চূড়ান্ত ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায় উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্কের কাছে লিবার্টি সিনেমা হলের পাশে গলিতে। এখানেই তৈরি হয় অসংখ্য সুদৃশ্য চালচিত্র।

বিশেষত সাবেকি প্রতিমার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চালচিত্র। অর্ধচন্দ্রাকার বাঁশের কঞ্চি নির্মিত ফ্রেমওয়ার্কের ওপর প্রথমে মাটি লেপা হয়। তারপর পাতলা কাপড় ও কাগজ সেঁটে আঁকা হয় মা দুর্গার সঙ্গে সম্পর্কিত নানা লৌকিক গাথা।
হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মের শিল্পীরাও চালচিত্র আঁকেন। মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে গাজি পটের প্রচলন আছে। চার ধরনের চালচিত্র এখন দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলি হল-বাংলা চাল, মার্কিনী চাল, মোথচৌরী চাল আর তানাচৌরী চাল। হারিয়ে গেছে গিরজে চাল, সর্বসুন্দরী চাল আর দোঠাকী চাল।

চালচিত্রে আঁকার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত চালচিত্রে কৈলাশে হর-পার্বতীর সাংসারিক জীবনের কথা, শুম্ভ-নিশিম্ভ বধ, চণ্ডমুণ্ড বধের আখ্যান থাকে। এছাড়া মেলে রাধাকৃষ্ণ ও রামায়ণের কাহিনিও। চালচিত্রে শিবঠাকুরকে নানান ভঙ্গিমায় ও বেশে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া দুর্গার দশমহাবিদ্যা, বিষ্ণুর দশাবতার ইত্যাদীরও দেখা মেলে। নীল অথবা গোলাপি রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর আঁকা হয়। সাধারণত, গোলাপি, লাল, হলুদ, সবুজ আর কালো রঙের ব্যবহার বেশি দেখা যায় চালচিত্রে।

Related Articles