নাটকীয় মোড়! ময়নাতদন্ত, দেওয়াল ভাঙার কাজে সম্মতি ছিল জুনিয়র ডাক্তারদের
Junior doctors had consent for post-mortem, wall-breaking work

Truth Of Bengal : দিন যত এগোচ্ছে আরজিকর কাণ্ডের মোড় ততই পরিবর্তন হচ্ছে। দিন দিন নিত্যনতুন নাটকীয় পর্দাফাঁসের মতো ঘটনা ঘটছে। আর জি কর মেডিকেল কলেজে মৃতা তরুণীর ময়নাতদন্তে ব্যাপক বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চলছে। অভিযোগ উঠেছে যে, চেস্ট মেডিসিন সেমিনার রুমের দেওয়াল ভাঙা নিয়ে ডাক্তাররা তথপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছেন। এই ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের দায়ী করা হচ্ছে।
নাটকীয় মোড়! ময়নাতদন্ত, দেওয়াল ভাঙার কাজে সম্মতি ছিল জুনিয়র ডাক্তারদের pic.twitter.com/sm7G9GQsoV
— TOB DIGITAL (@DigitalTob) September 28, 2024
আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন এখনও চলছে। তারা ময়নাতদন্তে অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে ষড়যন্ত্রের ন্যারেটিভ পোক্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে, ময়নাতদন্তের দিন তারা অন্য হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করার অনুরোধ করেননি। বরং, তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে চিঠি দিয়ে যে চার দফা শর্ত দিয়েছিলেন, সেই শর্ত অনুযায়ীই ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। ময়নাতদন্তের সময় দুইজন জুনিয়র ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের শর্ত অনুযায়ীই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছিল। আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় ময়নাতদন্তের সময় স্বতন্ত্র জুনিয়র ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন। সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে যে ময়নাতদন্তের নথি ফাঁস হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
তবে, নীতি অনুযায়ী এবং স্বতন্ত্রদের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পরেও জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগের ভিত্তিতে অসঙ্গতির প্রশ্ন উঠেছে। এটি ষড়যন্ত্রের ন্যারেটিভের অংশ কিনা, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার রুম লাগোয়া দেওয়াল ভাঙার ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করেছেন, ৯ আগস্টের মধ্যে বিশ্রামক্ষ ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, ১০ ও ১২ আগস্ট সরেজমিন পরিদর্শনের পর বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন নির্ধারণ করা হয়। এই পরিদর্শন ও গ্রহণ পর্বে জুনিয়র ডাক্তাররাও শামিল ছিলেন।
জুনিয়র ডক্টরদের আন্দোলন মূলত ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে পরিচালিত হলেও, এর মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থ জড়িত রয়েছে।
আন্দোলনের মূল দাবিগুলি হল :
১. কর্ম পরিবেশের উন্নতি: জুনিয়র ডক্টররা তাদের কর্মপরিবেশের উন্নতি এবং নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছেন।
২. বেতন বৃদ্ধি: তারা তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি করছেন, যা তাদের কাজের পরিমাণ এবং দায়িত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
৩. কর্মঘণ্টা কমানো: অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কমানোর দাবি জানানো হয়েছে, যাতে তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন।
তবে, এই আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে, বিজেপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি এই আন্দোলনকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। আন্দোলনকারীরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হতে চান না।
গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চেস্টা মেডিসিন সেমিনার রুম থেকে এক তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, বিয়ের পর তাঁকে খুন করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য পাঁচটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে প্রথম শর্ত ছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজেই ময়নাতদন্ত করতে হবে। এই শর্তগুলি মৃতার বাবার এবং দুই জুনিয়র ডাক্তারের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক করা হয়েছিল। পাঁচটির মধ্যে প্রথম শর্তই ছিল আরজিকর হাসপাতালেই ময়নাতদন্ত করতে হবে। এদিকে, জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তদারকিতে, গোটা ময়নাতদন্তের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি-সহ মহিলা বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতেই সম্পন্ন করা হয়। আবেদনপত্রের শেষ শর্ত অনুযায়ী জানা যায়, ময়নাতদন্ত চলাকালীন চারজন জু্নিয়র ডাক্তার সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, চারজন জুনিয়র ডাক্তার সাক্ষী থাকার সত্ত্বেও জুনিয়র ডাক্তারই কীভাবে ময়নাতদন্তে অসঙ্গতির অভিযোগ তোলেন? সেক্ষেত্রে কোনও বেনিয়ম হয়ে থাকলে তার দায় ওই জুনিয়র ডাক্তারদের উপরও সমানভাবে বর্তায়।
জুনিয়র ডাক্তাররা এখন সেমিনার রুমের সংলগ্ন দেওয়াল ভাঙার পেছনে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ভয়াবহ চক্রান্তের আশঙ্কা করছেন। এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই তারা এতদিন তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিমতো বিশ্রামঘর, শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যেই বিভিন্ন ঘর ভেঙে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নতুন করে কীভাবে নির্মাণ হবে তা খতিয়ে দেখতে নিয়ে হাসাপাতালের সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেন বাস্তুকার, চিকিৎসক ও নার্সদের একটি দল। গত ১০ ও ১২ আগস্ট সব মিলিয়ে মোট দু’দফায় চলে এই পরিদর্শন।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি সেই দলে ছিলেন। সেই পরিদর্শনের ভিত্তিতেই গত ১২ আগস্ট বৈঠকে কয়েকটি ঘরের একাংশ ভেঙে বা ভোলবদল করে কর্মরত চিকিৎসকদের বিশ্রামঘর, নার্সদের পোশাক পরিবর্তন কক্ষ, আরএমও ও জিডিএদের নির্দিষ্ট কক্ষ প্রভৃতি তৈরির পাঁচদফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চেস্ট মেডিসিন বিভাগের নির্মাণ সংক্রান্ত বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বিভাগীয় প্রধান, সংশ্লিষ্ট বাস্তুকার, তিন জন নার্স এবং তিনজন পিজিটির স্বাক্ষর রয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেমিনার রুম লাগোয়া ঘরের দেওয়াল ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিল। জুনিয়র ডাক্তাররা এই কাজ শুরুর কথা জানতেন এবং তাদের সম্মতিতেই এই কাজ শুরু হয়।