রাজ্যের খবর

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণের পর কি বলছেন সিঙ্গুরের মানুষ?

What are the people of Singur saying after the death of Buddhadev Bhattacharya?

The Truth Of Bengal: বাম জমানার শেষের দিকে ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা গড়াকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম কৃষক আন্দোলন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের যে লড়াই তা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছিল।বৃহস্পতিবার সকালে যখন সিঙ্গুরের মানুষরা জানতে পারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন তারপর থেকেই তাদের মন স্বাভাবিকভাবে ভারাক্রান্ত, ইচ্ছুক অনিচ্ছুক দ্বিধা বিভক্ত কৃষকরা এদিন সবাই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, সিঙ্গুরের কৃষকরা ন্যানো গাড়ি শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের চেষ্টা সদর্থক থাকলেও যেভাবে বিনা আলোচনায় কারখানার জন্য একপ্রকার জোর করে সিঙ্গুরের চার ফসলি জমিগুলি বামফ্রন্ট সরকার কৃষকদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা এবং কৃষকদের জমি বাঁচাবার মরণপণ লড়াই পুলিশ কে দিয়ে দমন করার যে অপচেষ্টা চেষ্টা করা হয়েছিল তা কতটা যে ভুল ছিল তা পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রমাণ হয়ে গেছে।

এদিন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষক অমিয় ধারা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন তারা কখনই বলেননি কারখানা কারখানা গড়তে জমি দেব না। কিন্তু যেভাবে তৎকালীন সরকার চার ফসলি জমিগুলি জোরপূর্বক কেড়ে নেবার পক্ষে ছিল তার বিরুদ্ধেই সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকরা রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আজও বহু কৃষক মনে করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার সেই সময় যদি কৃষকদের যে শর্ত ছিল ৬০০ একর জমিতে কারখানা হোক বাকি ৪০০ একর জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেয়া হোক সেটা যদি মেনে তারা নিতেন তাহলে হয়তো আজকে টাটা কে কারখানা না করে ফিরে যেতে হতো না, ২০০৬ সালে যখন প্রথম সিঙ্গুরে টাটা দের ন্যানো গাড়ি কারখানার গড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখন অনেকেই তাকে স্বাগত জানিয়েছিল, কিন্তু চার ফসলি জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কারখানা গড়ার কাজ, শুরু হয় আন্দোলন, যখন জমি আন্দোলন তুঙ্গে সেই সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অনেকটিই নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছিলেন, অনিচ্ছুক কৃষক এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি বসে ছিলেন, তৎকালীন রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীর তত্ত্বাবধানে রাজভবনে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল কিন্তু সেই সময় সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব এবং হুগলি জেলার বেশ কিছু নেতার অনমনীয় মনোভাবের জন্য সেই প্রয়াস ভেস্তে গিয়েছিল বলে মনে করেন সিঙ্গুরের মানুষ।

অধিকাংশ কৃষক এদিন জানিয়েছেন বুদ্ধদেব বাবুর মতন মানুষ খুবই বিরল তাকে আমরা শ্রদ্ধা করি কিন্তু তাঁর সময় যেভাবে কৃষকদের উপর দমন পীড়ন চালানো হয়েছিল এবং অনিচ্ছুক কৃষকদের উপর অত্যাচারের খাড়া নেমে এসেছিল তা ছিল এক প্রকার নজির বিহীন। তাদের ভাবা উচিত ছিল জমি গেলে কৃষকদের সংসার কিভাবে চলবে সেই কথাটা তারা সেদিন চিন্তা করেননি। জমি আন্দোলন করতে গিয়ে লাঠির আঘাতে রাজকুমার ভুলের মতন যুবককে শহীদ হতে হয়েছিল তেমনি সেই আন্দোলনের সঙ্গে যক্ত থাকার কারণে ধর্ষিত হয়ে প্রাণ পর্যন্ত দিতে হয়েছিল জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ তাপসী মালিক কে। সেই সময় যদি কিছুটা নমনীয় হতেন তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার তাহলে আজকে সিঙ্গুরের টাটা ন্যানো ফ্যাক্টরির চিমনি থেকে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখতো সিঙ্গুর বাসী। হুগলি জেলার অর্থনৈতিক মানচিত্রের চালচিত্র টাই পাল্টে যেত ।

সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের মূল হোতা বর্তমান তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত, সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানা নিয়ে তার দলের যে নীতি সেটা সিঙ্গুরের প্রতিবাদী মানুষ মেনে নিতে পারেনি। যেভাবে তার দল গোটা বিষয়টা পরিচালনা করেছিল তাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ব্যক্তিগত ইমেজের অনেক টাই ক্ষতি হয়েছিল, জমি আন্দোলনের আরেক এক নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করে বলেন ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে বুদ্ধবাবুর বিশেষ আলাপ ছিল না কিন্তু মানুষ হিসাবে তিনি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন ,এই ভালো মানুষটিকে সিপিএম ঠিকভাবে চালিত করতে পারেনি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান সর্বস্তরের মানুষের কাছে শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন বুদ্ধবাবু,জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অনারম্বর জীবন যাপন করেছেন তিনি

Related Articles