
The Truth of Bengal: বাংলায় একটা সময় তীর্থকেন্দ্র নিয়ে প্রবাদ রচিত হয়েছিল, সব তীর্থ বারবার তারকেশ্বর একবার। শ্রাবণ মাসে হুগলি তারকেশ্বর জল ঢালতে বহু ভক্ত সমাগম হন। অথচ এই তারকেশ্বরেরই একটা দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা বহু মানুষের অজানা। প্রাচীন হুগলি জনপথের আরও একটি বৃহৎ ধর্মীয় পীঠস্থানের নাম তারকেশ্বর। বাংলাদেশে বিশেষ করে রাঢ়ে দশনামী শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান মঠ হল তারকেশ্বর। মঠ প্রতিষ্ঠা বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। বাংলায় শৈব সংস্কৃতিও আদি অবস্থায় ছিল না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি উত্তরভারতীয় সংস্কৃতি। এই বৈশিষ্ঠ্য উত্তরভারতীয় শৈব সম্প্রদায়ের এবং প্রদানত দশনামী শৈব সম্প্রদায়ের। তারকেশ্বরে এই দশনামী শৈবরা মঠ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তারকেশ্বরে এই দশনামী মোহন্তরা দশনামী শৈব সন্ন্যাসী। ইতিহাসবিদদের মতে, এই দশনামী শৈব মঠ বাংলাদেশের নিজস্ব ধর্ম প্রতিষ্ঠান নয়, অবাঙালিদের আরোপিত প্রতিষ্ঠান। এখানে একটা প্রশ্ন দেখা দিতেই পারে, তাহলে তারকেশ্বর এতো বড় একটা তীর্থস্থান হল কী করে? গবেষকদের দাবি, এই তীর্থস্থল বড় হওয়ার সঙ্গে দশনামী শৈব মোহান্তদের কোনও সম্পর্ক নেই।
রাঢ়ে শৈবধর্মের প্রাধান্য আগেই ছিল। ধর্মপুজো ও শিবপুজো লোকায়ত শৈবধর্মে মিলিত হয়েছে। ধর্মের গাজন আর শিবের গাজন রাঢ়ের অন্যতম লৌকিক উৎসব। তারকেশ্বরে শিবের আবির্ভাব হয়েছিল গোপজাতির হাত ধরে। তারকেশ্বরের গাজনও বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় গাজন উৎসব। তারকেশ্বরের মঠ ও মোহান্তদের কাহিনীর সঙ্গে তারকেশ্বরের শিবের আবির্ভাবের কোনও সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, তারকেশ্বর প্রাচীনকাল থেকেই আম বাঙালির কাছে জনপ্রিয় তীর্থস্থল ছিল। চাইলে সকালে গিয়ে সন্ধের মধ্যে তারকেশ্বর মন্দির দর্শন করে একদিনেই ফিরে আসতে পারেন কলকাতায়।
কীভাবে যাবেন? হাওড়া স্টেশন থেকে তারকেশ্বরগামী লোকাল ধরে তারকেশ্বর স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে তারকেশ্বর মন্দির।