উত্তরবঙ্গে ভিত আরও শক্ত হচ্ছে তৃণমূলের, ক্রমশ পায়ের তলার মাটি সরছে বিজেপির
Trinamool's base is getting stronger in North Bengal, BJP's ground is gradually moving away from under its feet

ইন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক): ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার কেন্দ্র থেকে ৫৪,২৩১ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। আর ২০২৪-এ তিনি তৃনমূল প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বসুনিয়ার কাছে হারেন ৩৯,২৫০ ভোটে। ২০১৯-এর লোকসভায় বিজেপির জেতা আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ২০২৪-এর লোকসভায় ধরে রাখতে পারলেও তৃণমূল কংগ্রেস ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। ২০১৯-এর থেকে ২০২৪-এর ভোটে দার্জিলিং কেন্দ্রে বিজেপি লক্ষাধিক ভোট কম পেয়েছে। ২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গ জুড়ে যেভাবে পদ্ম চাষ শুরু হয়েছিল, এখন যত দিন যাচ্ছে ততই শুকোচ্ছে।
২০২৪-এর নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই বিজেপির অভ্যন্তরে চরম কোন্দল শুরু হয়। যা প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যেও আসে। আদি-নতুনের দ্বন্দ্বের মধ্যেই সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরানোর দাবি ওঠে। দিলীপ ঘোষকে পুনরায় সভাপতি করার ব্যাপারে জোর সওয়াল করেন নিচুতলার কর্মীদের একাংশ। তবে কোনওটাই হয়নি। ১৫ এপ্রিল সভাপতি নির্বাচনের শেষ তারিখটাও গিয়েছে। নেতৃত্বের মুখে কুলুপ।
মাঝখানে দিলীপ ঘোষের জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়া ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপচারিতার বিষয় নিয়ে দলের অভ্যন্তরে অনেক জলঘোলা হয়েছে। জাত হারানো বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের অনেক বাকযুদ্ধ হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিষেধ সত্ত্বেও রাজ্যের নব্য নেতারা দিলীপবাবুকে আকথা-কুকথায় বিঁধেছেন। বর্তমানে সেই ঝড় থেমেছে বটে, তবে খেয়োখেয়িতে এরাজ্যে বিজেপির সংগাঠন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ২০১৯-এ যে উত্তরবঙ্গে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নতুন রূপ পেয়েছিল এককথায় উত্থান ঘটেছিল, ২০২৪ থেকে সেখানে দলে নিয়মিতভাবে রক্তক্ষরণ ঘটছে। ২০২৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা ভোটে তার চেহারা রক্তশূন্য হবে না তো? রাজনীতির আঙিনায় এই মূহূর্তে এমন প্রশ্নই দানা বাঁধছে।
এই ক্ষত জর্জরিত পরিস্থিতিতেই বিজেপির ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলা সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। যা বিজেপিকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই তাঁর সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব বাড়ে। ক’দিন আগে বিজেপির দুই সাংসদ মনোজ টিগগা ও রাজু বিস্তা তাঁর স্ত্রীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে তাঁর বানারহাটের বাড়িতে ঘুরে গিয়েছেন। কিন্তু তাতেও মন গলেনি। তাঁর হাতেই ডুয়ার্সের চা বলয়ে বিজেপির শ্রমিক সংগঠন তৈরি হয়েছিল ভারতীয় টি ওয়াকার্স ইউনিয়ন।
সেই চা বলয়ে এই মুহূর্তে অনেকটাই শক্তিশালী তৃনমূল কংগ্রেস। তৃণমূল ভিত শক্ত করছে, আর পায়ের তলার মাটি সরছে বিজেপির। ২০২৪-এ মাদারিহাট উপ-নির্বাচনে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার চা বলয়ে বুথের সংখ্যা ৪৮৩। তারমধ্যে ২৪৪টিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মাদারিহাটে ১০০টি বুথের মধ্যে তৃণমূল ৮১ টিতে লিড পেয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, জন বারলার বিজেপি ত্যাগের পর ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির হাঁড়ির হাল কী হবে? রক্তক্ষয় কি আরও বাড়বে? সময় কথা বলবে।