
বাবুল চট্টোপাধ্যায় (প্রাবন্ধিক): হ্যাঁ, আজকের বিষয় জীবনটাকে উপভোগ করা নিয়ে। আর এই উপভোগ অবশ্যই হতাশাকে সরিয়ে। পৃথিবীতে এমন কোনও মানুষ নেই যার কোনও দুঃখ নেই। পৃথিবীতে এমন কোনও মানুষ নেই যার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যে যত তাড়াতাড়ি নিজের দুঃখের দূরে সরাবেন তিনি তত তাড়াতাড়ি সাফল্য পাবেন। আর কিছু হোক বা না হোক আপনি জীবনে আনন্দে তো থাকবেন। আর আনন্দে থাকলে আপনার জীবন আরও সুন্দর, আরও স্বাস্থ্যকর হবে এতে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। আসলে দুঃখের সময়টাকে দূরে সরানো কষ্টকর। কিন্তু মুশকিল হলেও অসম্ভব কিছু নয়। তাই আপনি পারবেন। এমন কোনও অসাধ্য কাজ নেই যা মানুষ পারে না। আপনি যদি জীবন ক্ষেত্রে হেরে যান, তবে আপনি দুর্বল। আর যদি আপনি জীবনে জিতে যান তবে আপনি সবল। এখন আপনার পছন্দ আপনি দুর্বল না সবল কোন পথকে বেছে নেবেন।
আমরা যদি লক্ষ্য করি তবে জানতে পারবো যে, যারা নাকি দুর্বল তারা হতাশার উপর বাঁচে। হতাশা তাদের জীবনকে গ্রাস করে। যার ফলে তারা জীবনে সাফল্য পায় না। কিন্তু এমনটা হলে তো চলবে না। কেউ জন্মের আগে বা জন্মলগ্ন থেকেই সব কিছু শিখে আসে না। সকলে জন্মের পরেই সব শেখে। আর এই শেখাতে কেউ হয়তো আগে বোঝে কেউ হয়তো পরে শেখে বা ধরতে পারে। তাই আপনি পরে কিছু শিখলে বা ধরতে পারলে এতে তো হতাশ হাওয়ার কিছু নেই।
আপনি একবার হেরেছেন বা পারেননি বলে যে সেটা বারবার হবে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আপনি নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস রাখুন। বিশ্বাস রাখুন আমি পারবো, আমিই পারবো। আমাকে কোনও শক্তি হারাতে পারবে না। আমি সহজে ভেঙে পড়বো না। কোনও মতেই আমাকে কেউ নিজের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিতে পারবে না। আসলে কী জানেন, জেদ থাকা সব মানুষেরই দরকার। আপনি জেদের বশে অনেক ভাল কিছু করতে পারেন। মানে আপনি যদি পজিটিভ দিক চিন্তা করেন তবে আপনাকে কেউ হারাতে পারবে না। আর আপনি যদি তা না পারেন তবে আপনার হতাশার জীবন হবে। আপনি জীবনকে সহজে এনজয় করতে পারবেন, আপনার আত্মবিশ্বাস থাকলে।
একেবারে জীবনের গোড়ার দিকে দেখা যায় আপনার জীবনে স্কুলিং, কলেজ সিস্টেমে হাজারও পরীক্ষা। সেই সিস্টেমে আপনার ও আপনার অভিভাবকের কী সাংঘাতিক টেনশন, ভবিষ্যত কী হবে! আশানুরূপ হলে তো ভাল। আর যদি আশানুরূপ না হয় তবে আপনাকে হতাশা থেকে রক্ষা করা মুশকিল। দেখা যায় এই অবস্থার সঙ্গে সবাই মানিয়ে উঠতে পারে না। আর যারা পারে তারা জীবনে জিতে যায়। আর যারা পারে না তারা হতাশায় ডুবে মরে। এখানেই আমার বলা যে, একটা রেজাল্ট আপনার জীবনের কিছুই মূল্যায়ন করতে পারে না। এখানে সকল অভিভাবকদের বলতে চাই যে আপনার সন্তানকে বোঝান যে জীবন অনেক বড়। একটা পরীক্ষা বা তার ফল আশানুরূপ না হলে জীবনে কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না। সুতরাং লড়াই করো এবং এগিয়ে যাও। দেখা গেছে যে সব বাড়ির অভিভাবকরা খুব পজিটিভ তাদের ছেলেমেয়েরা হেরে গেলেও ভেঙে পড়ে না। সুতরাং থামলে চলবে না। জানতে হবে তুমি পারো আর একমাত্র তুমিই পারো। ‘গো অ্যান্ড ডু ইউ’। হতাশার কোনও জায়গা দিতে নেই জীবনে।
এ তো গেল পড়াশুনোর সময়। এরপর চাকরি বাকরি করার সময় দেখবেন আরও অনেক অনেক সমস্যা। আপনি অনেক প্রত্যাশা করে বসে আছেন আপনার সুন্দর ও উপযুক্ত চাকরির ব্যপারে। বাট আপনি দেখলেন যা চাইলেন আপনি তা মোটেই পেলেন না। ব্যস, আপনি হতাশায় পড়ে গেলেন। মানে যাকে বলে জব স্যাটিসফাইড আপনি হতে পারলেন না। এবার আপনার কাজে মন বসাতে খুব অসুবিধা। আপনি আবারও হতাশ। না, এক্ষেত্রে বলবো হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যে যা চেয়েছে বহু ক্ষেত্রে তা পায়নি। তার মানে কি জীবন থেমে গেছে? কখনোই না।
জীবন কখনও থেমে থাকে না। এক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে আর সেই সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। জানবেন আপনি যা পেয়েছেন আপনার থেকে অনেক উপযুক্ত বহুক্ষেত্রে তা পাননি। সুতরাং হতাশার কিছু নেই। এবার এই কথাকে গুরুত্ব দিয়ে আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনি আরও সময় দিন এবং আপনি সেই ক্ষেত্রে সেরা জায়গা তৈরি করুন। দেখবেন আপনার সামনে সবাই কেমন হেরে বসে আছে। সুতরাং আপনি আপনার নিজের কাজে এনজয় করুন। দেখবেন আপনার জীবন আনন্দময় হয়ে উঠেছে। আমাদের সমাজে ভাল লোকের খুব অভাব। সুতরাং আপনার ভাল-মন্দ আপনাকেই সামলাতে হবে। আপনি এতদিনে জেনে ও বুঝে গেছেন কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল। সুতরাং আপনাকে আপনার দায়িত্ব ঠিকমত বুঝে নিতে হবে। আর কোনও ভাবেই হতাশ হলে চলবে না।
একটা পরামর্শ আছে এক্ষেত্রে। আপনি পারলে পজিটিভ লোকের সঙ্গে মিশুন। আপনি পজিটিভ লোকের সঙ্গে মিশলে আপনাকে পজিটিভ কথা বলবে। আর আপনি যদি নেগেটিভ মাইন্ডের লোকের সঙ্গে মেলামেশা করেন তবে আপনি সেখানে কোনও সাহায্য তো পাবেনই না উল্টে আপনার জীবনে নেগেটিভ চিন্তায় ভরিয়ে তুলবে। এটা সমাজের সব ক্ষেত্রে দেখা যায়। আপনার সমাজের ক্ষেত্রে, আপনার কর্ম ক্ষেত্রে থেকে শুরু করে সর্বত্র। আমার মতে সফল লোক সফল কথা বলে আর অসফল লোক সর্বদা পিছিয়ে পড়ার কথা বলে। সবটাই আপনাকে নিজ বিচারে বুঝে নিতে হবে। জানবেন শিক্ষার কোনও শেষ নেই। মানুষ জীবনের শেষাবধি শেখে। তবে আপনার ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকতে হবে। আর এটা থাকলেই আপনি আপনার অল্প পুঁজিতে অনেক কিছু শিখে নিতে পারবেন। আর কোনও কিছুকেই ভয় করলে চলে না। কিছু ক্ষেত্রে ওভার কনফিডেন্স থাকাটা ঠিক নয়। আপনি সবটা জানলেও দেখাবেন না। অবশ্যই সেখানে দেখাবেন যেখানে আপনার দেখানোর জায়গা ও প্রয়োজন দুই আছে।
এই বিশ্বে কত লোক আছে জানেন যারা কিনা সঠিক গাইডের অভাবে ট্যালেন্ট থাকা সত্ত্বেও জীবনে কিছু করতে পারেননি। কত লোক আছেন যারা কিনা ভাল সঙ্গ পাননি বলে গোল্লায় গেছে। আপনি আমি জানি না আমাদের ছেলে মেয়েকে কিভাবে গাইড করতে হবে। সব সময় আমাদের ইচ্ছাটা ওদের উপর চাপিয়ে দিয়ে থাকি। আমরা কখনও ভাবিই না ঠিক ওরা কি করতে চায়। আমরা ওদের ইচ্ছাটা ঠিকমতো গুরুত্ব দিই না। আমাদের এমন ভাব যে আমার বয়স বেশি তাই অভিজ্ঞতাও বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে বলবার কথা হলো যে, ঠিক ভুল সব লেবেলেই সকলে বুঝতে পারে। তাই আমার মনে হয় একেবারে ছোটবেলা থেকে শিশুর ইচ্ছার সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটালে আখেরে লাভই হবে। তা হলে বড় বয়স আর কোনও চাপ থাকবে না। আর ম্যাচুরিটি এসে গেলেও যদি ভুল পথে কেউ যান তবে বুঝতে হবে যে সে নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারছে।
দেখা গেছে একটা বয়সের পর প্রেমে মজে সকলে। আর তখনই ভুল হয়ে যায় অনেক কিছুর। যাকে যার পাওয়ার ইচ্ছা থাকে দেখা যায় তার তা জোটে না। আর এখানেই হয় সমস্যা। দেখা গেছে এক্ষেত্রে যারা খুব মন দিয়ে ভালোবাসা করেছে, তারা পড়েছে বিপদে। এখন থেকে বের হতে পারে না অনেকেই। আর যার ফলে হতাশা গ্রাস করে জীবনে। আর তার ফলে দেখা গেছে অনেকে চলে গেছে অন্ধকার জীবনে। হতাশা এমন একটা জিনিষ যে এর থেকে নিজেকে বের করা খুব কঠিন কাজ। আর ঠিক এই সময়ে সঠিক গাইড খুব প্রয়োজন। এমন ব্যক্তি খুব কমই আছেন যারা কিনা এর থেকে নিজেকে বের করে আনতে পেরেছে। আরও দেখা যায় প্রতি ক্ষেত্রে নেশা এসে যায় জীবনে। যার ফলে এও দেখা গেছে যে এই নেশা ত্যাগ করতে লেগেছে বহু সময়।
না, এমনটা হলে চলবে না। একটা সময় পরে বিচার বুদ্ধি সবই সঠিক ভাবে এসে যায় মানুষের মধ্যে। সুতরাং সামলানোর দায়িত্ব যার যার নিজের। আপনার বিচার বুদ্ধি আপনাকে চালনা করে। একে তো ভাল জায়গার এখনকার দিনে খুব অভাব। তারপর যদি আপনি নিজে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত করে বসেন তবে গেল। আপনার জীবনে হতাশা ছাড়া কিছুই তেমন দেখা যাবে না। আর যদি এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন তবে কেল্লাফতে। মানে, আপনি থাকছেন স্যার। আপনি মনীষীদের জীবনী পড়ুন। আপনি বিরাট সাকসেসফুল মানুষের জীবনী পড়ুন। দেখবেন কী কষ্ট এবং তার থেকে নিজেকে তিনি কিভাবে নিজেকে বের করে এনেছেন। দেখবেন একটা ইচ্ছা বা আগ্রহ মানুষকে কতটা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে নিয়ে যায়। কোনোভাবেই নিজে হারবেন না নিজের থেকে। আত্মবিশ্বাস রাখুন আর হতাশা সরান- দেখবেন কী দারুণ আপনার জীবন। কি মানবেন তো? মানলে হৃদয়ে একবার সায় দেবেন প্লিজ।