বৈদ্যবাটিতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায় গৃহবধূদের উদ্যোগে কালীপুজো
Housewives organize Kali Puja at Baidyabati with money from Lakshmi Bhandar

Truth of Bengal: হুগলির বৈদ্যবাটি পুরসভার ঘোষাল পাড়ায় কিছুদিন আগে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছিল, যা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। বিশেষত, এক তরতাজা যুবকের পথ দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু পুরো পাড়ায় আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর মঙ্গল কামনায় এবং দুর্ঘটনা রোধের উদ্দেশ্যে তিনজন গৃহবধূ একত্রিত হয়ে শান্তি কালী পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে, স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে চাঁদা না নিয়ে, নিজেরাই নিজেদের টাকায় পুজো করবেন।
এই পুজো আয়োজনের জন্য তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় কাউন্সিলারও। তবে, এই পুজো আয়োজনের মূল উদ্যোগে ছিলেন কুমকুম চক্রবর্তী, রাখি দাস এবং ঝুমা সামন্ত। তারা জানান, কয়েক মাস ধরেই ঘোষাল পাড়ায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছিল, যা এলাকার মানুষদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছিল। দুর্ঘটনা এবং আতঙ্কের মধ্যে তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, একত্রিত হয়ে শান্তি কালী পুজো করবেন যাতে এলাকা শান্ত থাকে এবং দুর্ঘটনাগুলি বন্ধ হয়।
পুজোর আয়োজনের জন্য তারা নিজেদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ভাঙিয়ে তিন হাজার টাকা করে দিয়ে পুজোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। কুমকুম চক্রবর্তী বলেন, “আমরা চাইনি মানুষের ঘাড়ে নতুন করে বোঝা চাপাতে। তাই নিজেদের টাকা দিয়েই এই পুজো আয়োজন করি।” তারা আরও জানান, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা নিয়ে অনেকেই হাস্যরস করেন, তবে তাদের কাছে এই টাকা অনেক মূল্যবান, এবং তারা সেই টাকায় একটি ভালো কাজ করেছেন।
এই উদ্যোগে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলার অমৃত ঘোষ, যিনি প্যান্ডেলের খরচ দিয়েছেন। এছাড়া, পাড়া–পড়শিরাও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছেন। কুমোর পাড়ার থেকে প্রতিমা কিনে, সমস্ত নিয়ম–নীতি মেনে পুজো আয়োজন করা হয়। এর ফলে, এলাকার সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে পুজোয় অংশগ্রহণ করেন এবং একে অপরের মঙ্গল কামনা করেন।
ঝুমা সামন্ত বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা আমাদের মতো আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য এক ধরনের আশীর্বাদ। এই টাকায় আমরা নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পেরেছি এবং পুজো করার সাহস পেয়েছি।”
এলাকার কাউন্সিলর অমৃত ঘোষ বলেন, “এটা সত্যিই প্রশংসনীয় যে, এই মহিলারা ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে বেরিয়ে এসে এলাকার মঙ্গল কামনায় এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এই ধরনের উদ্যোগ বাংলার সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় পরম্পরার অংশ, যা সমাজের মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত খুশি।”
এই পুজো আয়োজনের মাধ্যমে শুধু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই হয়নি, বরং এলাকার মহিলাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতির উদাহরণও তৈরি হয়েছে।