সন্ত্রাস দমন থেকে গোপন মিশন: ভারতের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত এই সমস্ত এলিট ফোর্স
From counter-terrorism to secret missions: These elite forces are always ready to ensure India's security

Truth Of Bengal: ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু সেনাবাহিনীর শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়, তার পাশাপাশি রয়েছে একাধিক বিশেষ বাহিনীর নিরব ও সাহসিক অভিযানের গৌরবগাঁথা। সীমান্তে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই হোক বা দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান—এই বাহিনীগুলোর অসামান্য বীরত্ব ও নিরব আত্মত্যাগ ভারতের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে।
এই বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে প্যারা স্পেশাল ফোর্স (Para SF), মার্কোস (MARCOS), এনএসজি (NSG), গরুড় কমান্ডো (Garud Commando), কোবরা (COBRA) ও ঘাতক (Ghatak Force)—যাদের কাজ অনেক সময় গোপন থাকে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও মেলে না, তবুও দেশ রক্ষার কাজে এরা কখনো পিছপা হয় না।
প্যারা স্পেশাল ফোর্স (Para SF):
প্যারা স্পেশাল ফোর্স (Parachute Special Forces) হল ভারতীয় সেনাবাহিনীর সবচেয়ে দক্ষ এবং সাহসী ইউনিট। এদের মূল কাজ হল শত্রুপক্ষের এলাকায় গোপনে প্রবেশ করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করা। Para SF কমান্ডোরা শারীরিক ও মানসিকভাবে এতটাই কঠিন প্রশিক্ষণ পান যে, প্রায় ৮৫% প্রশিক্ষণার্থী প্রথম ধাপে বাদ পড়ে যান।
এদের দক্ষতার মধ্যে রয়েছে HAHO/HALO প্যারাশুটিং, পাহাড়ি যুদ্ধ, শহুরে অভিযান, এবং আধুনিক গুপ্তচর প্রযুক্তি ব্যবহারে অভিজ্ঞতা। ২০১৬ সালের উরি হামলার বদলা হিসেবে চালানো সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে Para SF-এর কমান্ডোরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাশ্মীর অঞ্চলে বহু জঙ্গি দমন অভিযানেও তারা সামনের সারিতে থাকে।
মার্কোস (MARCOS):
মার্কোস (MARCOS) বা মেরিন কমান্ডো হল ভারতীয় নৌবাহিনীর এলিট স্পেশাল ফোর্স। এই বাহিনী সমুদ্র ও জলপথে অভিযান চালাতে যেমন দক্ষ, তেমনই স্থলভাগেও সন্ত্রাসবিরোধী অপারেশনে অসাধারণ পারদর্শী। MARCOS সদস্যদের প্রশিক্ষণ এতটাই কঠিন যে একে “ডেথ উইশ ট্রেনিং” বলা হয়।
২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় তাজ হোটেল ও নরিম্যান হাউস-এ অভিযানে মার্কোস বাহিনী সাহসিকতার পরিচয় দেয়। কাশ্মীরি জঙ্গিরা মার্কোস সদস্যদের “দাড়িওয়ালা ফৌজি” বলে ডাকে, কারণ এদের পোশাক ও চালচলনে বিদেশি কমান্ডোদের মতো ভয়ংকর দৃঢ়তা থাকে।
এনএসজি (NSG):
এনএসজি (National Security Guard) গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে অপারেশন ব্লু স্টার ও ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর। এই বাহিনীকে ‘কালো বেড়াল’ কমান্ডো নামেও ডাকা হয়। এদের প্রধান দায়িত্ব হল সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, হাইজ্যাক রোধ, এবং ভিভিআইপি সুরক্ষা।
২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় এনএসজি পরিচালিত “অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো” ছিল এক ঐতিহাসিক অভিযান, যেখানে এই বাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিদের নির্মূল করে। প্রতি বছর কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে হাতে গোনা কয়েকজনই এই বাহিনীতে সুযোগ পান।
গরুড় কমান্ডো ফোর্স(Garud Commando Force):
গরুড় কমান্ডো ফোর্স (Garud Force) হল ভারতীয় বায়ুসেনার স্পেশাল ইউনিট। এদের প্রধান কাজ হলো বিমান ঘাঁটি রক্ষা, বিমান হাইজ্যাক প্রতিরোধ, UAV নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি এবং বিশেষ অভিযানে অংশগ্রহণ। গরুড় সদস্যদেরও প্যারা স্পেশাল ফোর্স-এর মতো কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
২০১৭ সালে কর্পোরাল নিরালা কাশ্মীরে এক অভিযানে সাহসিকতার সঙ্গে জঙ্গি দমন করতে গিয়ে প্রাণ দেন এবং তাঁকে মরণোত্তর অশোক চক্রে ভূষিত করা হয়। এই ঘটনা গরুড় বাহিনীর আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের প্রকৃত উদাহরণ।
কোবরা (COBRA Force):
কোবরা (Commando Battalion for Resolute Action) বাহিনী মূলত তৈরি হয়েছে মাওবাদী ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহীদের দমনের জন্য। এটি CRPF-এর একটি বিশেষ ইউনিট। কোবরা বাহিনী জঙ্গলের কঠিন পরিবেশে যুদ্ধ করতে সক্ষম এবং IED নিষ্ক্রিয়করণে দক্ষ।
বর্তমানে কোবরা বাহিনী ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার ইত্যাদি অঞ্চলে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং বহু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে।
ঘাতক (Ghatak Force):
ঘাতক (Ghatak Force) সেনাবাহিনীর প্রতিটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের অংশ, যদিও এরা মূল স্পেশাল ফোর্স নয়। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতা প্যারা স্পেশাল ফোর্স-এর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই ইউনিটগুলো শত্রুপক্ষের ক্যাম্পে প্রথম হামলা, অস্ত্র ও বাঙ্কার দখল এবং গেরিলা কৌশলে অভিযানে পারদর্শী।
ভারতের প্রতিটি বিশেষ বাহিনীই আধুনিক প্রযুক্তি ও কঠিন প্রশিক্ষণের সমন্বয়ে প্রস্তুত। সমুদ্র, পাহাড়, মরুভূমি বা শহুরে অঞ্চল—যেখানেই হোক, ভারতের নিরাপত্তার প্রাচীর গড়ে তুলছে এই নিরব যোদ্ধারা।
তারা প্রচার চায় না, পদক বা আলোড়ন নয় — দেশের জন্য প্রতিনিয়ত আত্মত্যাগ করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাদের আত্মত্যাগ ও সাহস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, “আসল যোদ্ধারা প্রচারে নয়, দায়িত্বে বিশ্বাস করে।”