সম্পাদকীয়

কেন্দ্রের টালবাহানা, এক কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি অধরা! আর কী বললেন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস

The Centre's evasiveness, the promise of one crore rupees is elusive! What else did Minister Ujjwal Biswas say?

Truth Of Bengal: প্রতিশ্রুতি দিয়েও দুই বছর ধরে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং জৈব প্রযুক্তি দফতরের ‘ট্রপিক সেন্টার’ প্রকল্প আটকে রেখেছে কেন্দ্র। আবহাওয়া সংক্রান্ত আগাম সংবাদ পেতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যে একটি অত্যাধুনিক ‘ট্রপিক সেন্টার’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্যের বিজ্ঞান এবং জৈব প্রযুক্তি দফতর। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি নদিয়া জেলায় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

রাজ্যে এই ধরনের ট্রপিক সেন্টার গড়ে তুলতে ১ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু গত দুই বছর ধরে কেন্দ্রের টালবাহানার জেরে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এখন অথৈ জলে। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান এবং জৈব প্রযুক্তি দফতরকে একাধিকবার অনুরোধ করা সত্বেও কোনোও কাজ না হওয়ায় কেন্দ্রের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের সরকার। আর এই নিয়ে দফতরের কর্মকাণ্ডের কথা জানালেন রাজ্যের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং জৈব প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি সুবীর মুখোপাধ্যায়।

প্রশ্ন –রাজ্যের প্রস্তাবিত অত্যাধুনিক ট্রপিক সেন্টার প্রকল্প নিয়ে কেন কেন্দ্র টালবাহানা করছে?

উত্তর — কেবল মাত্র বঞ্চনার জন্য আমাদের এই বৃহৎ প্রস্তাবিত প্রকল্পটির অনুমোদন আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দীর্ঘ দু’বছর ধরে আমরা একাধিকবার কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছি এই প্রকল্পের ছাড়পত্র দিতে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। প্রথমে আমাদের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল কেন্দ্র। এমনকি এই প্রকল্পের জন্য এক কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতি পালন করেনি কেন্দ্র। আমরাই রাজ্যেবাসীর স্বার্থে ট্রপিক সেন্টারটি নদিয়া জেলায় করতে চেয়েছিলাম। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজ্যের পক্ষে আবহাওয়া সংক্রান্ত আগাম একাধিক তথ্য পেতে সুবিধা হতো। কোথায় অত্যধিক গরম পড়বে, কোথায় বজ্রপাত হবে সরকার জানতে পারত। এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারত।

প্রশ্ন –পড়ুয়াদের বিজ্ঞানমুখী করতে দফতরের তরফে কি ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

উত্তর –পড়ুয়াদের বিজ্ঞানমুখী গবেষণা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ধরনের পোর্টাল করা হয়েছে। যারা উচ্চ শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত। নানা বিষয়ে গবেষণা করছেন, তাদের সমস্ত গবেষণামূলক যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত আছে এই বিজ্ঞানসাথী পোর্টালে। এই পোর্টালের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের গবেষকরা এবং পড়ুয়ারা যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। সারা রাজ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক স্কিমগুলির উন্নতির পরিচালনার জন্য এই পোর্টাল পুনর্গঠন করা হয়েছে।

প্রশ্ন–বিরোধীদের অভিযোগ গবেষকরা ফেলোশিপ ঠিক মত পাচ্ছেন না। এই অভিযোগের কতটা সত্যতা রয়েছে?

উত্তর — অভিযোগটা একেবারেই ঠিক নয়। জগদীশ বসু ন্যাশনাল সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চ প্রকল্পের অধীনে সিনিয়র ট্যালেন্ট সার্চ টেস্ট এবং জুনিয়র বিজ্ঞানী কণ্যা মেধাবৃত্তি প্রোগ্রামে প্রতিটি বিভাগের ৫০জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। ২৫০ জন উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের জুনিয়র ট্যালেন্ট সার্চ টেস্ট এবং জুনিয়র বিজ্ঞানী কণ্যা মেধাভিত্তিক প্রোগ্রাম বিভাগে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র বিজ্ঞানী কণ্যা মেধাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি আধুনিক জৈব প্রযুক্তি গবেষণাগার তৈরী করা হয়েছে।

প্রশ্ন– চলতি আর্থিক বছরে এই গবেষণা উন্নয়নে কী ধরনের সাহায্য পেয়েছে?

উত্তর– পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং জৈব প্রযুক্তি বিভাগ বিভিন্ন সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে গবেষণার ও উন্নয়নের কাজে ৪১৬টি প্রকল্পে সাহায্য করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ৪২৬টি ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে। গবেষণার জন্য এবং সমৃদ্ধ করার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।মোট দশ কোটি টাকা সাহায্য দেওয়া হয়েছে স্কুল কলেজে আধুনিক গবেষণার জন্য।

প্রশ্ন– বিজ্ঞান গবেষণা বৃদ্ধির জন্য কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দফতরের তরফে এবং বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্দ্যেশ্য কতটা সফল হয়েছে ?

উত্তর– রাজ্যের একাধিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রিজিওনাল কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দফতর জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অসামান্য উদ্যোগের জন্য তিনটি পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করেছি। রাজ্যে বিজ্ঞান এবং জৈব প্রযুক্তি কংগ্রেসে প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবীশ, সি ভি রমন মেমোরিয়াল, জগদীশ চন্দ্র বসু লেকচারের ব্যবস্থা আছে। বেঙ্গল সায়েন্স লেকচারের ব্যবস্থা রয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের বিজ্ঞান গবেষণামূলক পেপার প্রেজেন্টেশন করে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী বিজ্ঞান চর্চার উন্নতির জন্য কী কী কাজ করছেন, সেটা সকলের জানা প্রয়োজন।

প্রশ্ন –এখন পর্যন্ত কত পেটেন্ট, জিআই অনুমোদন করেছে দফতর?

উত্তর– বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের গবেষক অধ্যাপক, বৈজ্ঞানিক, আবিষ্কারক এবং শিক্ষাবিদদের সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর। পেটেন্ট ও জিআই, রেজিস্ট্রেশনের নিয়ে এখন পর্যন্ত জমা হয়েছে ২৭০টি পেটেন্ট এবং ৪০টি কপি রাইটটি ট্রেড মার্ক দরখাস্তের মধ্যে ১২০টি পেটেন্ট এবং ২৫টি কপিরাইট অনুমোদন হয়েছে এবং আরও ৪২টি জিআই রেজিস্ট্রেশনের দরখাস্ত জমা পড়েছে। যার মধ্যে ২৪টি জিআই সার্টিফিকেট পেটেন্ট ইনফর্মেশন সেন্টারের অনুমোদন পেয়েছে। এবং বাকি ১৮টি চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রশ্ন–এই দফতরে জিও ইনফরমেটিভ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এর কারণ কী?

উত্তর– এই দফতর কৃষি বিভাগ, পরিবেশ দফতর, বন দফতর, রেজিস্ট্রি ও স্ট্যাম্প রেভিনিউ, ক্ষেত্রে ডিজিটাল তথ্য পরিবেশন, জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন বিভাগ সহ বিভিন্ন দফতরকে নিজস্ব উৎকৃষ্ট রিমোট সেসিং এবং জিআইএস ব্যবস্থা সহ একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা করে থাকে। শুধু তাই নয় কলকাতা পুরসভার অঞ্চলগুলির জলাশয় সংক্রান্ত তথ্য, রাজ্যের বনাঞ্চল তথ্য, রাজ্যের বন্যা সম্ভবনাময় অঞ্চলগুলির প্রধান জলাশয় ও তার নিকাশি নালা সংক্রান্ত তথ্য এই দফতর জিও ইনফরমেটিস্কে সক্ষমতা বৃদ্ধির অবদান অনস্বীকার্য।

প্রশ্ন –কল্যাণী এইমস রাজ্যের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি দফতরকে কতটা সাহায্যে করছে?

উত্তর– হ্যাঁ, কল্যাণী এইমসের সায়ন্তন ব্যানার্জি দফতরে গবেষণার কাজে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাপে কাটা রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসার উপর গবেষণা করবেন তিনি। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা ডিমেনসিয়া রোগের চিকিৎসার গবেষণার ব্যাপারে দফতরকে সহায়তা করছে।

প্রশ্ন– কর্মসংস্থানের জন্য দফতরের তরফে কি ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ?

উত্তর– শিল্পগত জৈব প্রযুক্তি ও স্ট্যাট আপ উদ্যোগকে সাহায্যের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কলকাতা বায়োটেক পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এই পার্কে ওয়েস্ট বেঙ্গল সোসাইটি ফর বায়োটেকনোলজি বিশেষভাবে কাজ করছে।

Related Articles