রাজ্যের খবর

পণ না পেয়ে গৃহবধূকে খুন, বস্তায় ভরে ফেলে গেল স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোক

Housewife murdered, dumped in sack by husband and in-laws after not getting dowry

Truth Of Bengal: চক-অরকবাড়ি গ্রামে ঘটে যাওয়া এই নির্মম ঘটনা একবারে স্তম্ভিত করে দিয়েছে গোটা এলাকা। অতিরিক্ত পণের দাবিতে একটি তরুণী গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে। মৃত গৃহবধূর নাম প্রতিমা প্রামাণিক, বয়স মাত্র ২২ বছর।

ঘটনাটি ঘটে, রবিবার রাতে। ওই রাতে প্রায় সাড়ে ১১টা নাগাদ শৌচকর্মের জন্য বাড়ির বাইরে বেরোন চক-অরকবাড়ির বাসিন্দা গোরাচাঁদ দাস। তখনই তিনি একটি শব্দ শুনতে পান, যা পুকুরপাড়ে কিছু ফেলার মতো মনে হয়। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তিনি এগিয়ে যান এবং দেখতে পান একটি বস্তা পড়ে রয়েছে। প্রথমে ভয় পেলেও পরে সাহস করে তিনি বস্তার মুখ খুলে দেখেন—তাঁরই মেয়ে প্রতিমার নিথর দেহ!

এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন গোরাচাঁদবাবু। এরপর তিনি চিৎকার করে বাড়ির লোকজনকে ডাকেন। সেই সময় তাঁরা দেখতে পান এক ব্যক্তি সাইকেলে করে পালিয়ে যাচ্ছে, তবে তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। পরে গ্রামবাসীদের মধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হতেই সেখানে ভিড় জমে এবং থানায় খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতিমার দেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। গোরাচাঁদবাবু থানায় তাঁর জামাই দুর্লভ প্রামাণিক সহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে প্রতিমার শ্বশুর দুধকুমার প্রামাণিক, শাশুড়ি রিনা প্রামাণিক, দেওর রাহুল প্রামাণিক এবং জা রিমি প্রামাণিককে গ্রেফতার করেছে। তবে মূল অভিযুক্ত স্বামী দুর্লভ পলাতক।

প্রতিমার চার বছর আগে বিয়ে হয় থানাবেড়িয়া গ্রামের দুর্লভ প্রামাণিকের সঙ্গে। দুর্লভ একজন স্বচ্ছল ব্যবসায়ী, যার ফিশারি, ধানের ব্যবসা ও পানের বরজ রয়েছে। তাঁদের একটি তিন বছরের সন্তানও রয়েছে। বিয়ের সময় প্রতিমার পরিবার যথাসাধ্য পণ দিয়েছিল, তবুও সময়ে সময়ে আরও টাকার দাবি উঠত।

গোরাচাঁদবাবুর অভিযোগ, প্রতিমাকে দিয়ে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সব গৃহস্থালির কাজ করাত, এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা প্রতিমাকে বাপের বাড়ি আসতেও দেয়নি। অতীতে দুই গ্রাম মিলে দু’বার সালিশি সভাও হয়, তবুও সমস্যার সমাধান হয়নি।

ঘটনার ঠিক আগের শুক্রবারও একটি সালিশি সভা হয়েছিল। এরপরেই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। গোরাচাঁদবাবু কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “জানি ওরা মেয়ের উপর অত্যাচার করত, কিন্তু যে ওকে এমনভাবে খুন করবে, তা ভাবতে পারিনি।” প্রতিমার মামাতো দাদা তাপস দাস জানিয়েছেন, দোষীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। এদিকে কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস জানিয়েছেন, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি সমাজে পণপ্রথার বিষাক্ত উপস্থিতির এক নির্মম প্রমাণ।

Related Articles