
ইন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়: অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতে বিধানসভার পাশ হওয়া বিল কারণে-অকারণে আটকে রাখছেন রাজ্যপালরা। এই অভিযোগে বারবার সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাতে সংঘাত আরও বেড়েছে। রাজ্যের মানুষের স্বার্থে এইসব বিলগুলি দিনের পর দিন আটকে থাকায় উন্নয়ন ও আইন কার্যকরিতায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু তাতে কী? স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের, তাদের দলের সরকার তো নয়? এই হল আচ্ছে দিন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ।
এই নিয়ে মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এই মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট ছেড়ে কথা বলেনি। বিচারপতি এই সব বিলগুলি নিয়ে রাজভবন ও রাষ্ট্রপতি ভবনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এ যেন যেচে গালে চড় খাওয়া। আর তাতে কি চুল বসে থাকতে পারে বিজেপির মতো একটি দল। তাই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে। দেশের সংবিধান, পদমর্যাদা-কে ধুলোয় পদদলিত করে সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকে যে ভাষায় আক্রমণ করেন বিজেপি সাংসদ, তা ক্ষমার অযোগ্য।
সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ও তাঁর দোসর দীনেশ শর্মার বক্তব্য ঠিক এমনটাই যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আপনাদের নিয়োগ করেছে। মানেটা ঠিক এমনই দাঁড়ায় না যে আপনারা বেতনভুক কর্মচারী মাত্র। আমরা যা বলবো তাই হবে। এত মারাত্মক। কাদের আমরা ক্ষমতায় এনেছি? বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অবশ্য এটা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়, দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
আর এখানেই তো শেষ নয়, সম্প্রতি সংসদ ভবনে এক অনুষ্ঠানে এক সময়কার বিজেপি নেতৃত্ব, প্রাক্তন রাজ্যপাল, বর্তমান উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেছেন। আসলে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্র ও বিজেপি শাসিত রাজ্যের একাধিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালত রুষ্ট, সেটা নির্বাচনী বস্তু হোক বা উত্তরপ্রদেশে যোগি রাজ্যে বুলডোজার দিয়ে বিল্ডিং ভাঙার ঘটনা হোক বা ওয়াকফ আইন।
এটা বিজেপি মেনে নিতে পারছে না। তবে অবিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কোনও রায় গেলে তাতে তারা খুশি হন, বাহবাও মেলে আদালতকে সম্মান জানিয়ে। যেমনটি বাংলায় ২৬ হাজার চাকরি যাওয়ার ঘটনায় হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়-এর ভূমিকায় খুশি হয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই উপহারও মিলেছে। এখন তিনি সাংসদ।
মুর্শিদাবাদের গণ্ডগোলের ঘটনা নিয়ে জোড়া জনস্বার্থ মামলা করলেন বিজেপি নেতৃত্ব। একটি ৩৫৫, একটি ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের দাবি বাংলায়। কিন্তু দুটোই খারিজ। ভর্ৎসনাও করল আদালত। এটাও বিজেপির বিরুদ্ধে গেল। স্বভাবতই অখুশি তারা। মামলার রায় বিজেপির পক্ষে গেলে ভাল, নতুবা খারাপ। আগুন নেভাতে গিয়ে দিল্লির আদালতে এক বিচারপতির বাড়ি থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা মিলল, কী ব্যবস্থা নেওয়া হল তাঁর বিরুদ্ধে? প্রশ্ন তো উঠবেই। আঙুল তো উঠবেই বিজেপির অসহিষ্ণুতা ও তুঘলকি রাজের বিরুদ্ধে।
দেশের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও তাকে করায়ত্ত করার প্রবণতা রয়েছে কেন্দ্রের সরকারের। আর এই প্রবণতা বরাবরই। তাই কথায় কথায় সিবিআই, কোর্ট-বিজেপির নেতাদের মুখে লেগেই আছে। আর তাঁদের মুখের কথার সঙ্গে মিলও থাকছে। অবিজেপি নেতাদের দুয়ারে সিবিআই, দুয়ারে আয়কর অফিসার, আচ্ছে দিন এখন অন্ধকার দিন। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ নয়, এখন সবকা বিনাশ। মানুষ যখন আইনের বিচার পায় না সরকারের কাছ থেকে, তখনই তো তারা আদালতে যায়। কিন্তু সেখানেও যদি হস্তক্ষেপ হয় তা হলে তো বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে। আজ যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে দেশের সংবিধান রক্ষার নামে বিজেপি সংবিধানকে পদদলিত করছে প্রতিনিয়ত। ডঃ বিআর আম্বেদকর বেঁচে থাকলে, আজকের আচ্ছে দিনের চেহারা দেখে আঁতকে উঠতেন।