সম্পাদকীয়

অনন্ত আবেগ অন্তরায় না হোক জীবনে

May endless emotions not be an obstacle in life.

Truth Of Bengal: বাবুল চট্টোপাধ্যায়: জানি না কেন লিখছি বা তাতে কী লাভ! তবে একটা নেশা বা আনন্দ নিয়ে তো সবাই বাঁচে তাই আনন্দে থাকা যায় আরকি। এই ভাবধারা একজন কবির। উঠতি এমনই একজন কবিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন লেখেন? উনি বলেছিলেন আমি লিখি না। আমাকে দিয়ে লেখানো হয়। আসলে সবই আবেগ। যে যা করুক না কেন তা এক অনন্ত আবেগ ছাড়া কিছু নয়।

আর আবেগ মানুষকে বাঁচায়, আবেগ মানুষকে কাঁদায়। আবেগ মানুষ ভালবাসে। আসলে কষ্টটা মানুষ ফিল করে। কষ্টটা মানুষ তাড়িয়ে উপলব্ধি করে। কষ্ট অনেকটা স্থায়ী। ভালবাসা আজ আর কোথায়! সবটাই স্বার্থের। কেউ ঠিকমত শান্তিতে নেই। কারও ঠিকমতো ঘুম নেই।

ঠিকমতো সুখ নেই তো অনেকেরই। ভালবাসলে কষ্ট পেতে হবে এতো স্বাভাবিক। কিন্তু কত কষ্ট তার বিচার করে কোন মহাজন। পাপে ডুবে বসে আছি আমরা। আমাদের হৃদয় কি সাংঘাতিক অবক্ষয়ের পথে! কেন এত কষ্ট? মনে হয় আমরা তা বয়ে নিয়ে যেতে ভালবাসি। যার পেছনে রয়েছে সেই অনন্ত আবেগ। আর আবেগ তো কমবেশি সকলেরই চেনা জানা।

কিন্তু কতটা আবেগ সামলে আপনি চলতে পারবেন সেটাই আসল বিষয়। আসলে তা বড় চ্যালেঞ্জ। একজন স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই স্বপ্ন তার কতটা সত্যি সেটাই আসল প্রশ্ন। যে পারে সে জেতে, যে পারে না সে হারে। তবু স্বপ্ন সে দেখে। স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আমাদের দেশে মানুষ যে যা হতে চায় তা সে পায় না। সেটাই স্বাভাবিক। আমরা তো জানি সব পেলে নষ্ট জীবন। তাই সবটা না পেলেও চলে।

তবু আমরা কি কেউ থেমে আছি? না, আমরা থেমে নেই। আমরা চলছি নিয়ত। ক্রমেই চলছি আর চলছি। ভাল জায়গাটা আজ আর নেই। কাউকে বিশ্বাস করার জায়গা আজ আর নেই। আমাদের মধ্যে ভাল জায়গাটা আজ আর নেই। কেন নেই জানি না। তবে নেই। মানুষ আজ বড় অভাগা। কারণ সে আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। ভুল বললাম। শেখেনি। কীভাবে পারবে তাও তার অজানা।

আমাদের শিক্ষা-রুচি হারিয়ে গেছে কবেই। আমরা আর আমাদের নিজেদের মধ্যে নেই। আমার আমাদের রুচিতে নেই আমাদের ভালোবাসায় নেই, আমাদের বিশ্বাসে নেই, আমাদের মূল্যবোধে নেই। আমাদের রুচি হারিয়ে গেছে কবেই। আমাদের ভবিষ্যৎ উবে গেছে কবেই। কারণ আমরা আবেগ কন্ট্রোল করতে পারিনি ভালভাবে। আমাদের যন্ত্রণা আমাদের একান্তই নিজের। ভালবাসা আর আঘাতের মধ্যে আমাদের আবেগ বিচার করতে পারেনি। তাই আমরা কেউ তেমন ভালভাবে নেই। আমাদের মন ভিজে গেছে কবেই।

আসলে আমার মনে হয় আমরা যে যত তাড়াতাড়ি আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারব সে তত তাড়াতাড়ি সাকসেস পাবো। আমাদের শিক্ষা  আমাদের আবেগকে কন্ট্রোল করে। আমাদের রুচি আমাদের আবেগকে শিক্ষা দেয়। ভরপুর শিক্ষা দেয় আমাদের মানবিকতাকে। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষ্টি সব কিছুতেই জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ। এখন দেখার কে কত তাড়াতাড়ি এই আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারে।

আমাদের সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে আমাদের অনেকটা আসর দখল করে রেখেছে এই আবেগ। আমরা দেখেছি সৃষ্টিশীল মানুষেরা খুব বেশি আবেগপ্রবণ। যেমন কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে এই আবেগ আমরা দেখে থাকি। তবে এটাও তো ঠিক যে যার মত বেশি আবেগ থাকে তার ভেতর ঠিক ততটাই সত্যিটা বসবাস করে। তাই এই অবস্থান থেকে ফেরা এককথায় অসম্ভব।

তবে এটা ঠিক যে আবেপ্রবণ মানুষদের জীবনে খুব কষ্ট। তাই কিছু ক্ষেত্রে আবেগ মানুষের জীবনে প্রশ্রয় পেলেও সব ক্ষেত্রে তাকে গুরুত্ব দেওয়াটা অনেকটা বোকামি। কেন? কারণ আমরা দেখেছি এই আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের মান সম্মান। মানে যার আবেগ হতো বেশি তার মান সম্মান তত বেশি। এখন মুশকিলটা হল এতো মানসম্মানের ভয় সব ক্ষেত্রে ঠিক নয়।

আমরা দেখেছি ঠিক এই কারণে মানুষকে অনেক বেশি পস্তাতে হয়। আমরা জীবনের প্রতি পদে এই অবস্থানকে লক্ষ্য করি। মানে জীবনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবেগ বড় ক্ষতি করে। আর সেই সুযোগটা অন্যকেও নিয়ে নেই। সে আপনার প্রতিবেশী হতে পারে, সে আপনার দাম্পত্য জীবন হতে পারে, সে আপনার রক্তের সম্পর্ক হতে পারে। মানে জীবনের সব ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু না কিছু সমস্যা অনেকক্ষেত্রে তৈরি করে এই আবেগকে ঘিরে।

এমনটা দেখা যেতেই পারে যে আপনি যাকে জীবন থেকে বেশি ভালবাসেন সে আপনাকে ঠকালো। কেনো? কারণ আপনার আবেগ অনেক বেশি। মানে আপনার মানসম্মান অনেক বেশি। ঠিক এখানেই দেখবেন আপনাকে হাতিয়ার করে আপনাকে কেউ না কেউ নিয়ত ঠকাচ্ছে। যে ঠকাচ্ছে সে জানে আপনি খুব ভাল মানুষ। কিন্তু তবু আপনার পেছন থেকে তার ছায়া কিছুতেই সরছে না। এটাই হচ্ছে কাল।

মানে আপনার অন্তর্মুখী লক্ষণ আপনাকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। আপনি কিছুতেই সামলাতে পারছেন না। একই কথা দাম্পত্য জীবনে ক্ষেত্রে বিরাট পরিমাণে দেখা যায়। মানে এক আলো আঁধারি ক্ষেত্রকে আগেই মেপে নেই দু’জনের কেউ। সমস্যাটা অন্য জায়গায়। যেখানে দু’জনের কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়বে না সেখানেই সমস্যা। যে যত তাড়াতাড়ি এটা পারে সে তত তাড়াতাড়ি অন্যকে কব্জা করতে চায়।

এটা শুধু যে এক ক্ষেত্রে নয়, একভাবে হয় তাও নয় দেখা গেছে জয় এটা সর্বত্র। সেটা আপনার অফিস হতে পারে, সেটা আপনার অফিসের বাইরেও হতে পারে। তবে কী জানেন, কিছু মানুষ এই আবেগপ্রবণ মানুষকে খুব বোকা মনে করে। কিন্তু আসলে কিন্তু তা নয়। দেখা গেছে আবেগপ্রবণ মানুষ খুব নিরীহ হয়। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগায় অনেকেই।

তবে এর থেকে বের হওয়ার উপায় কী? উপায় অবশ্যই আছে। আমার তো মনে হয় এর থেকে বের হওয়ার উপায় হল আমাদের নিজেদের প্রতি বিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না। আর সাহস আর ধৈর্য হলো সেই বস্তু যা আপনাকে কাজের প্রতি অনেক আন্তরিক করে। তাই কোনও ভয় করলে চলবে না। জানবেন যা হচ্ছে ভাল হচ্ছে। আর যা হবে তা ভালই হবে। বাকিটা ভগবান ঠিকই বুঝবেন। কি মানবেন তো?

Related Articles