সমুদ্রে একই জাহাজে বিবেকানন্দ ও জামশেদজী টাটার যাত্রা! জানেন সে কাহিনী
Do you know the story of Vivekananda and Jamshedji Tata's journey on the same ship at sea?

Truth Of Bengal: সালটা ছিল ১৮৯৩। ৩১ মে জাপানের ইয়োকোহামা থেকে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জাহাজ। সেই জাহাজের যাত্রী ছিলেন ২ কৃতী ভারতীয়। স্বামী বিবেকানন্দ ও শিল্পপতি জামশেদজী টাটা। দু’জনের এর আগে একে অপরের সঙ্গে কোনো আলাপ পরিচয় হয়নি। জাহাজে চেপে সমুদ্র যাত্রার সময়ই দু’জনের একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। ১৮৯৩ সালে জামশেদজী টাটা আমেরিকার শিকাগোয় শিল্প কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
তিনি সে সময় নিয়মিত জাপানে যেতেন। সে সময় ইয়োকোহামা থেকে কানাডায় যাওয়ার পথে একই হোটেলে ছিলেন জামশেদজী টাটা ও স্বামীজী। জাপানি ইয়োকোহামা বন্দর থেকে কানাডার প্যাসিফিক স্টিমশিপ সংস্থা লাক্সারি জাহাজ এসএস এম্প্রেস অফ ইন্ডিয়ায় চেপে দুজনে মিলে দীর্ঘ পথ যাত্রা করেন। সত্যের খোঁজে গোটা ভারত চষে ফেলার সময় যে অভিজ্ঞতা চাক্ষুষ করেছেন তাই জামশেদজী টাটাকে বলেন স্বামীজী। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনে সাধারণ ভারতবাসী কতটা কষ্টে রয়েছেন তা নিয়েও দুজনের মধ্যে কথাবার্তা হয়।
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জাপানের উন্নয়ন নিয়েও দুজনের মধ্যে কথাবার্তা হয়। জামশেদজী টাটা স্বামী বিবেকানন্দকে জানান ভারতকে শিল্প ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে তিনি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহারের খোঁজে রয়েছেন। স্বামীজী জামশেদজী টাটাকে অনুরোধ করেন বিদেশ থেকে আমদানি না করে যন্ত্রপাতি যেন দেশেই তৈরি করা হয় যাতে গরিব ভারতীয়দের কর্মসংস্থান হয়। প্রযুক্তি, বিজ্ঞান নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দর গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে দেখে আর দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখে জামশেদজী টাটা দেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে দিশা দেখানোর অনুরোধ করেন। স্বামীজী স্মিত হেসে বলেন, ‘পশ্চিমের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের অসামান্য কৃতিত্বর সঙ্গে মিশুক ভারতের মানবতা ও আধ্যাত্মিকতার ধারণা।’
এই সমুদ্র যাত্রার পর জামশেদজী টাটা ও স্বামীজীর দেখা হয়নি। কিন্তু স্বামীজীর কথা হৃদয় গেঁথে যায় জামশেদজী টাটার মনে। ৫ বছর পর তিনি স্বামীজীকে চিঠি লেখেন। সে সময় রামকৃষ্ণ মিশনের স্থাপনের কাজকর্ম নিয়ে খুব ব্যস্ত স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি ভগিনী নিবেদিতাকে জামশেদজী টাটার সঙ্গে দেখা করতে পাঠান।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য বিশদ আলোচনা হয়। কিন্তু সে সময় তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন সেই কাজে বিঘ্ন ঘটান। কিন্তু ভেঙে পড়েননি জামশেদজী টাটা। ১৮৯৮ সালে তিনি মাইসোরের মহারাজা চতুর্থ কৃষ্ণরাজা ওয়াদিয়ারের সঙ্গে দিওয়ান শেষাদ্রী আইয়ারের সঙ্গে দেখা করেন। বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রস্থলে ৩৭২ একর জমি জামশেদজী টাটাকে দান করেন মাইসোরের মহারাজা। ১৯০৯ সালে এভাবেই জন্ম হয় টাটা ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের। ১৯১১ সালে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে হয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স।