Truth Of Bengal: শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। দুই নেতার মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিটের আলোচনা চলে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক ও ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন নরেন্দ্র মোদি। ব্যাংককে BIMSTEC সম্মেলনের ফাঁকেই এই বৈঠক সেরেছেন দুই নেতা। দীর্ঘদিনের উত্তেজনার পর এই বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলনের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অটল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মোদি বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে চায়। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক ও ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ইউনূস একটি ছবি উপহার দেন মোদিকে। যেখানে দেখা যায় ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি মোদি তাঁকে ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে সোনার মেডেল দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এটি দুই নেতার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি গণবিক্ষোভের মুখে ভারতে আশ্রয় নেন। ভারত বারবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ তুললেও বাংলাদেশ তা অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে আখ্যা দেয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের অনুরোধ জানায়, যিনি গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। ভারত এখনো এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি।
বৈঠকে ইউনূস অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ভারত থেকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি মোদিকে অনুরোধ করেন, এ ধরনের বক্তব্য যেন আর না আসে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন, যেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছে, যার ১৩ শতাংশই শিশু।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, সামাজিক মাধ্যমের গুজব এসব উত্তেজনার মূল কারণ। তিনি বলেন, “এ ধরনের কথাবার্তা পরিবেশকে নষ্ট করে, তা পরিহার করা উচিত।” ইউনূস সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। জবাবে মোদি জানান, সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী শুধুমাত্র আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায় এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ভারতীয় ভূখণ্ডেই ঘটে। বৈঠকে দুই নেতা চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যৌথ পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দেন। তাঁরা সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া সক্রিয় করার কথাও বলেন।
মোদি বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং বাড়তে থাকা চরমপন্থা মোকাবেলার কথা বলেন। জবাবে প্রফেসর ইউনূস জানান, বাংলাদেশে ধর্মীয় ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ভুয়া ও অতিরঞ্জিত সংখ্যালঘু হামলার বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে সত্যতা যাচাই করার আমন্ত্রণ জানান। তিনি গঙ্গা চুক্তি নবায়ন ও তিস্তা জল বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে মোদি বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে এবং দুই দেশের সহযোগিতা সাধারণ মানুষের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রফেসর ইউনূসকে BIMSTEC-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।