স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বাক্ষী তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি
Copper-plated palace, a witness to the independence movement

রাজীব নন্দী, পূর্ব মেদিনীপুর: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তাম্রলিপ্ত রাজবাড়িতে পৌঁছালে যেন সময় থমকে দাঁড়ায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশেষ প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল এখানে। কত অজানা কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে এই ভগ্নপ্রায় তাম্রলিপ্ত রাজবাড়িতে। দারুণ উদ্যোগ, বিশ্বের দরবারে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি। চলমান ইতিহাসের স্বাক্ষী তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি। রাজবাড়ির ইট পাজরে গাঁথা রয়েছে সেই ইতিহাস। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী ইতিহাসের নানা পর্বের সঙ্গে যুক্ত ময়ূর রাজবংশের রাজপুরুষেরা।
এক সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের পীঠস্থান ছিল এই রাজবাড়ি। বহমান কালের নানা ইতিহাসের স্বাক্ষী তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি। বর্তমানে ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ির আনুমানিক বয়স প্রায় চারশ বছরের কাছাকাছি। ২০০৪ সালে এই তাম্রলিপ্ত রাজবাড়িটি হেরিটেজ স্বীকৃতি লাভ করে। মধ্যযুগীয় ইন্দো ইসলামীয় স্থাপত্যের নিদর্শন তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি।
ভারতের মধ্যযুগে দেখতে পাওয়া যায় তাম্রলিপ্তের নিদর্শন। মধ্যযুগে তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল অন্যতম। এই তাম্রলিপ্ত বন্দর দিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিংহল যাত্রা করেছিলেন সম্রাট অশোকের পুত্র ও কন্যা। এছাড়াও এই তাম্রলিপ্ত নগরীতে এসেছিলেন বিখ্যাত পরিব্রাজক ফা হিয়েন, হিউয়েন সাঙ, পাঁচ ইনিয়েত। এর থেকে জানা যায় প্রাচীন তাম্রলিপ্ত নগরী গৌরবময় ইতিহাসের কথা। আধুনিক কালে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির কথা। বর্তমানে পুরানো প্রাসাদ পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের অধীনে। সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেতে চলেছে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি।
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অধ্যায়ের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে এই তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বিভাগের পক্ষ থেকে গত ১১মার্চ একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজবাড়ির বর্তমান সদস্য দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের কাছে। নিয়ম অনুসারে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক বিশ্ব ঐতিহ্য প্রকল্পে ২১টি দেশ নিয়ে গঠিত একটি কমিটি এই তালিকা তৈরির কাজ করে থাকে। একাধিক মানদণ্ডের ওপর বিবেচনার পরে কোনও সৌধ, প্রাসাদ, মিনার, অরণ্যকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে যেমন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে সুন্দরবন।
ইংরেজদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতের প্রাচীনতম পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম তাম্রলিপ্ত রাজপরিবার। যা অন্তত ৫০২০ বছরেরও পুরনো। রাজ পরিবারের এই রাজপ্রাসাদটি ভগ্নপ্রায়, ২০০৪ সালে তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি হেরিটেজ স্বীকৃতি পায়। সম্প্রতি তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃতির জন্য চিঠি দিয়েছিলেন রাজবাড়ির সদস্য তথা তাম্রলিপ্ত পৌরসভার পুর প্রধান দীপেন্দ্র নারায়ণ রায়। সম্প্রতি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বক্ষণের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বিভাগের পক্ষ থেকে রাজবাড়ির গুরুত্ব বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট দফতরের ফিল্ড অফিসারকে এই বিষয়ে একটি সামগ্রিক রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অ্যাওয়ার্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগানো গিয়েছে বলে অভিমত রাজ পরিবারের।
তাম্রলিপ্ত রাজ পরিবারের সদস্য তথা তমলুক পৌরসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ী তথা তাম্রলিপ্ত নগরীর ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরানো। থাইল্যান্ড নেপাল শ্রীলঙ্কা সহ বিভিন্ন দেশের ইউনিস্কোর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সেমিনার ও জার্নালে উল্লেখ করেছেন। আমরা চাই প্রাচীন তাম্রলিপ্ত নগরীর কথা সারা বিশ্ব জানুক। তাই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতির জন্য তথ্য সহ চিঠি দিয়েছিলাম দেশের রাষ্ট্রপতিকে। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট দফতরের ফিল্ড অফিসারকে এই বিষয়ে একটি সামগ্রিক রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তমলুকের ধুলোবালি, ইট-কড়ি-বর্গায় হাজার হাজার বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু সময়ের নিয়মে তা বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে। তমলুক রাজবাড়ী বিশ্ব দরবারে ঠাঁই পেলে আকর্ষণ বাড়বে জেলার।