কলকাতা

নজরে পিছিয়ে পড়া বুথ, ‘হাত জোড় করে ক্ষমা চান’ নির্দেশ অভিষেকের

Booths that lag behind in attention, Abhishek orders 'forcefully apologize'

Truth Of Bengal: গত বিধানসভা নির্বাচন এবং লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের ফলাফল ভালো হয়নি। এইসব এলাকায় আগামী দিনে বিপর্যয় কাটাতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। শনিবার ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতৃত্বকে তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। বৈঠকে অভিষেক বলেন, বেশ কিছু বিধানসভায় আমাদের প্রত্যাশিত ফল হয়নি।

যে বুথে ৫০ ভোটে হেরেছি, হারের ব্যবধান বেশি, সেই বুথ চিহ্নিতকরণ করে কেন সেখানে হারছি সেটা বার করুন। এখানের মানুষ তো পরিষেবা পাচ্ছে। বিপুল সামাজিক কর্মসূচি তো সব মানুষ পাচ্ছে। সেখানে আমাদের হারের কারণ কি? অঞ্চল সভাপতিদের ডেকে জানতে চান, কেন হারছি, কি কারণে হারছি? বাড়ি চিহ্নিত করে সেখানে যান। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা বলুন। আমাদের কোষাগার থেকে কিভাবে তাদের সাহায্য করছি, সেটা বলুন।

কোনও জনপ্রতিনিধিকে দেখলাম না গত চার মাসে বাংলার বঞ্চনার বিষয়ে, সরব হতে। যারা বাড়ি পেয়েছে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে জনসংযোগ করা। দিল্লিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে কিভাবে সেই অত্যাচার হয়েছিল। আপনাদের উচিত নয় বেনিফিসিয়ারিদের কাছে গিয়ে জনসংযোগ করা? জনসংযোগ নিবিড় করুন। দলের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন অভিষেক। তিনি বলেন, আলিপুরদুয়ার এখানে নেতারা আছেন, কই আপনাদের উচিত নয়, কেন হেরেছি, কেন সন্তুষ্ট নয় সেটা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানা।

মানুষকে তো বোঝাতে হবে। দলের নেতৃত্বকে অভিষেক নির্দেশ দেন, ভোটের রেজাল্ট বার করে দেখুন। ২১ হেরেছি, ২৪ হেরেছি। সেই বুথ চোখে দেখুন। তারপর তো লড়াই করবেন। ভাবছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে একটা মিটিং করবেন। অভিষেক বন্দোপাধ্যায় একটা রোড শো করবেন আর সব হয়ে যাবে। ভোট এখন এক মাসের নয়। নির্বাচন এখন সারাবছরের। আবাসের টাকা, লক্ষ্মীর ভান্ডারে কেন্দ্রের অবদান নেই। জালি দল, জালি পার্টি বিজেপি তারা দিল্লি, মহারাষ্ট্রতে লক্ষ্মীর ভান্ডার দেবে বলে এখন নাম বাদ দিচ্ছে। কই এগুলো বলতে হবে না?

স্থানীয় স্তরে দলগতভাবে কেন সংগঠনের কোন কর্মসূচি পালন করা হয় না প্রশ্ন তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, একটা কর্মসূচী কেন হয়নি। দলটা আপনারও। আন্তরিকতা কেন থাকবে না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য থেকে কর্মসূচী দেবে তারপর নামবেন? দায়বদ্ধতা না থাকলে আপনি কিসের জনপ্রতিনিধি? কেউ মন্ত্রী হয়েছেন।

দল ক্ষমতায় না থাকলে, আপনার-আমার কি দাম? মানুষকে বলুন ধারাবাহিক ভাবে বিজেপি কিভাবে মিথ্যা কথা বলছে। সিপিএম একটা ইট পুতলে সারাবছর বগল বাজিয়ে বেড়াত। কোচবিহার আমরা জিতেছি। ভালো ফল করেছি। কিন্তু আপনাদের রাস্তায় থাকতে হবে। বালুরঘাট বিধানসভায় ১৯৯ বুথের মধ্যে ১৮১ বুথে পরাজিত হয়েছে। তাহলে স্থানীয় নেতা থেকে কী লাভ হয়েছে? যেখানে বছরের পর বছর হেরেছি সেটা আমাদের যৌথ ব্যর্থতা। সেখানে প্রয়োজনে বদল করবেন। মানুষকে গিয়ে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষমা চাইবেন। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে ৩১৪ বুথে ২৭৭ বুথে হেরেছি। ভাবুন কি কাজ করেছি। বালুরঘাটে ১৯৯ বুথে ১৮১ বুথে হেরেছি। ভাবুন একবার।

মালদা জেলার নেতৃত্বের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিষেক। বৈঠকে বলেন, মালদায় আমাদের ফল অত্যন্ত খারাপ। ব্লক, জেলা নেতৃত্ব এর জন্য দায়ী। যারা মন্ত্রী হয়েছেন, জেলার বড় নেতা তারা নিজেদের বিধানসভায় হেরেছেন। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে অন্য দলকে সুযোগ করে দিয়েছেন। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম ভুল প্রচার করেছে, আমরা কাউন্টার করতে পারিনি। আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বিজেপি আর কংগ্রেস জিতেছে। হাতে আর মাত্র ছয় মাস সময় আছে। পিছিয়ে থাকা বুথ চিহ্নিত করুন। যে সব বিধানসভায় ৭০ শতাংশ বুথে হেরেছি সেখানে বুথ, অঞ্চল সভাপতি বদল করুন। আগে জেলা স্তরে বদল হবে। পরে বাকি বদল হবে। পারফরম্যান্স ভিত্তিতেই বদল হবে।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সংগঠনের কাজেও সন্তুষ্ট নন অভিষেক। পূর্ব মেদিনীপুরে নিজেদের ঝগড়ায় হেরেছি। কাঁথি অল্প ব্যবধানে হেরেছি। আর একটু সিরিয়াস হয়ে পরিশ্রম করে, সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপালে কাঁথি জিততাম। গতবার ১৬ আসনের মধ্যে ৯ আসন জিতেছি। এবার যত খারাপ হোক, ১২ আসন জিততে হবে। পূর্ব মেদিনীপুর চ্যালেঞ্জ এদের গণতান্ত্রিক ভাবে বিবস্ত্র করব। এরা ভোট আসলেই গায়ের জোরে, ভুল বুঝিয়ে, মানুষের কাছে যায়। ভোটের দু’দিন আগে আমাদের ছেলেদের ঘরে এনআইএ, সিবিআই পাঠিয়ে গ্রেফতার করে। দলীয় নেতৃত্বকে অভিষেক বলেন এইসব কেন্দ্রীয় এজেন্সিতে ভয় পাবেন না। দল পাশে থাকবে।

Related Articles