ময়দানের এই গেল গেল রব আসলে জিকেবিএমটি-র মতোই
This Gale Gale Rob of Maidan is actually like GKBMT

Truth of Bengal, জয়ন্ত চক্রবর্তী: অবাক হয়ে যাছেন? ভাবছেন জিকেবিএটি-টা আসলে কী? খায় না মাথায় দেয়! একটু খোলসা করেই বলি। এখনতো অ্যাভ্রিভিয়েশন দিয়ে কথা বলার ঝোঁকটা বেড়েছে। তাই ধরে নিন এটাও একটা অ্যাভ্রিভিয়েশন–ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর সংক্ষেপিতভার্সন এটি। পশ্চিমবঙ্গে ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়ে গেল বুধবার। তার আগে মঙ্গলবার ময়দানের গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে কলকাতার তিন প্রধান দল মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল আর মহমেডান স্পোর্টিং সমর্থকদের এই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো আমরা দেখলাম।
উদ্দেশ্য ছিল আরজি কর-কাণ্ডে উই ওয়ান্ট জাস্টিস-এর বস্তাপচা পুরোন স্লোগানটিকে তাক থেকে পেড়ে ধুয়ে মুছে সাফ করে পরিবেশন করা। কিন্তু, বিষয়টা দাঁড়িয়ে গেল তিন প্রধান ও আইএফএ সচিবের মুণ্ডপাতে। কেন তাঁরা উপনির্বাচনে নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে-কে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন? কী দরকার ছিল ময়দানকে রাজনীতিতে জড়ানোর, কী প্রয়োজন ছিল রাজনীতিকে সরাসরি ময়দানে আনার? এক সমর্থক তো দাউ ব্রুটাস, ইউ টু ভঙ্গিতেশ্লেষাত্মক হাসি হেসে আইএফএ সচিব কে-ও বিদ্ধ করলেন।
জানতে ইচ্ছা করে, আটের দশকের শেষ দিকে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি মন্ত্রিসভার দুই সদস্য প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি এবং সন্তোষ মোহন দেব এআইএফ তখত তাউশ নেওয়ার জন্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন তখন এই বিদ্রোহীরা ছিলেন কোথায়? তখন কি এঁদের কিংবা এঁদের পূর্বপুরুষদের একবারও মনে হয়নি ময়দানের ফুটবলে রাজনীতির ঝাঁজ লাগছে–মাঠে নেমে জিকেবিএমটি করা দরকার! বাম আমলে তদানীন্তন সিপিএমএপি-ও পরে লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জি মোহনবাগান কর্মসমিতির সদস্য হয়েছেন, টেবিলটেনিসের সভাপতি হয়েছেন, কংগ্রেস নেতা বিধুভূষণ ঘোষ ইস্টবেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তখন তো ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কথা মনে হয়নি? এলিট খেলা ক্রিকেট, সেই ক্রিকেট আসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল-এর প্রেসিডেন্ট হয়েছেন দোদো দা মানে জ্যোতি বসুর ঘনিষ্ট রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল স্নেহাংশুকান্ত আচার্য। তখন তো কোনও আন্দোলন হয়নি।
অর্থাৎ ময়দান কোনও দিন রাজনীতি মুক্ত ছিলনা, থাকতে পারেনা। জীবনের সর্বত্র রাজনীতি। এমনকী স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও আজকাল রাজনীতির বাইরে নয়। সেখানে ময়দান কীভাবে রাজনীতি বর্জিত থাকবে? আসলে ঘোমটার আড়ালে খামটা নাচটা বজায় ছিল বরাবরই। এখন প্রগতির ঢেউয়ে শুধু ঘোমটাটুকু সরেগিয়েছে এই যা!বাম আমলে কিংবা তার আগে কংগ্রেস আমলেও কি রাজনীতি খেলার মাঠে আসেনি? বাম আমলে তো একাধিক ক্রীড়াবিদ বিধায়ক হয়েছেন– তাঁদের সমর্থনে ক্রীড়া সংস্থাগুলির মিছিল আর পদযাত্রা কি ভুলে যাওয়া যায়? তখন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো পার্টিরা কোথায় ছিল জানতে ইচ্ছা করে? বেশ, তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম যে তখন প্রতিবাদ হয়নি বলে কি এখন জিকেবিএমটি গোষ্ঠী সক্রিয় হবেনা? তা হোক, ক্ষতি নেই।
কিন্তু নৈহাটির উপনির্বাচনে যিনি তৃণমূলের টিকিট নিয়ে বুধবার লড়লেন সেই সনৎ দে তো আদতে একজন ক্রীড়া সংগঠক। তিনি যদি বিধানসভায় গিয়ে তিন প্রধানের দাবি নিয়ে বা আইএফএ-এর কোনও ইস্যু নিয়ে সরব হন তাতে লাভ বৈ লোকসান কার? বিধানসভার প্রাকারভেদ করে ময়দানের গর্জন যদিপৌঁছয়, তাতে লাভই হবে। ক্ষতির পরিমাণ কম। না, ক্ষতি একটা আছে। এই জিকেবিএমটি-রা বলতে পারে বেছে বেছে তৃণমূল কেন, হতে তো পারতো অন্য কোনও দলের অন্য কোনও প্রার্থী। তাহলে বোধহয় জিকেবিএমটি-রা এতটা সক্রিয় হতোনা। প্রশ্ন একটা করতেই হয়–এটা রাজনীতি নয়?