শুধু ভাইফোঁটা নয়, হোক বোনফোঁটাও
Keeping in mind the religious situation, not only bhaiphota should be distributed, but also bonphota

Truth of Bengal, সুনন্দা বিশ্বাসঃ পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী যমুনাকে যখন বর চাওয়ার কথা বললেন স্বয়ং যমরাজ, তখন বোন যমুনা এই প্রার্থনা করলেনযে, বোনেরা অন্তর থেকে ভাইদের ফোটা দিলেসেই ভাইদের যেন দীর্ঘায়ু হোক।পৌরাণিক শাস্ত্রতেও দেখা যায় বোনদের নিঃস্বার্থ সাবলীল চাওয়া। এখানে সমাজ দর্পণে অনেক কথাই উঠে আসে।
তাই তর্কাতর্কির বেড়াজাল ভেঙেভাইরাও যদি বোনদর দীর্ঘায়ু কামনা করত তাহলে হয়তো অনেক বোন অসহায় হয়ে উঠত না। কিংবা অন্তরের আত্মার বাঁধন আরও দৃঢ় হতো। বোনেরাও হয়তো বলে উঠত, ‘আর একটু কাল বাঁচি আমি বাঁচার আনন্দে’ ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী নিজ ভাইয়ের কাছ থেকে যমুনা ‘বর’ পেয়েছিলেন। এই ঘটনা ঘটেছিল কার্তিক শুক্লা দ্বিতীয়ার দিনে।
এই দিনে যমুনায় স্নান করে যে যমের পুজো করবে যমরাজের ‘বর’ অনুসারে কথিত আছে তাকে মৃত্যুর পর আর যম লোকে যেতে হবে না। অকাল মৃত্যুতে তার নিজ ভাই নির্ঘাত বাঁচাবে। শাস্ত্র অনুযায়ী জানা যায়, ছায়া ও ভগবান সূর্য নারায়ণের দুটি মাত্র সন্তান ছিল। পুত্র সন্তান যমরাজ এবং কন্যা সন্তান যমুনা।
জানা যায় শনিদেবের জন্ম হয় সেখানেই,যেখানে ছায়া সূর্যের তেজ সহ্য করতে না পেরে উত্তর মেরুতে বসবাস করছিল। যখন উত্তর মেরুতে বসতি স্থাপন করেন, তখন যম ও যমুনারসঙ্গে ছায়ার আচরণের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে সহ্য করতে না পেরে ব্যথা পেয়ে যম নিজের শহর ‘যমপুরী’ প্রতিষ্ঠা করেন।
এদিকে যমুনা তার ভাই যম কে ‘যমপুরীতে’ পাপীদের শাস্তি দিতে দেখে খুব দুঃখ কষ্ট পেতে থাকেন। এটাও ঠিক,যম এবং যমুনা উভয় ভাই বোনের মধ্যে খুব ভালবাসা এবং স্নেহ ছিল।দিন অতিবাহিত হয়। একদিন হঠাৎ মনে পড়ে যায় যমেরবোন যমুনার কথা। প্রচেষ্টা করেও কাজের ব্যস্ততায় তিনি বোনের সঙ্গেদেখা করতে যেতে পারেননি দীর্ঘদিন।
জানাযায়, এই কার্তিক শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে যমুনা ভাই যমরাজকে আমন্ত্রণ করেছিলেন। যমরাজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার বাড়িতে আসবেন। বোনের বাড়িতে আসার সময় যমরাজ নরকে বসবাসকারী জীবদের মুক্তি দেন। তাহলে এখানে বোঝা যাচ্ছে, এই ভাই ফোঁটার উৎপত্তি হয়েছে মৃত্যুর দেবতা যমের থেকে। যমুনা ফোঁটাদিয়েছিলেন যমরাজকে।
আবার এটাও জানা যায়, শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করে তার নিজ বোন সুভদ্রার কাছে এলে সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দেন এবং মিষ্টিমুখ করান। এমনও হতে পারে,হয়তো ভাইফোঁটার শুরু এখান থেকে। এই দিন বোনেরা তাদের ভাইকে চন্দনের ফোঁটা বা দইয়ের ফোঁটা দিয়ে ভাইদের দীর্ঘায়ুর জন্য হাত জোর করে যমরাজের কাছে প্রার্থনা করেন। এই ভাইফোঁটা ভাতৃদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত।
ভাইফোঁটাতে যমুনার অতি আত্মীয়তায় খুশি হয়ে যমরাজ বোনকে বর চাওয়ার আদেশ দেন। যমুনা উত্তরে বলেন, আপনি প্রতি বছর এই দিনে আমার বাড়িতে আসবেন। এবং এই দিনে যারা তার ভাইকে সম্মানেরসঙ্গেফোঁটা দেবেন, তার ভাইদের আপনি অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করবেন। হয়তো সেই থেকেই এই রীতি চলে আসছে আজও। ধর্মশাস্ত্র বলে এক আর আর বর্তমান বাস্তবিক কালের ছবি আর এক।
এ কোন দিন?যেখানে সম্পর্কের টালমাটাল অবস্থা। কিবা দোষ কি বা গুণ!উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েওঈর্ষান্বিত কুশিক্ষা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে অন্তরের আত্মাকে। বোকা গোধূলি সময়ের বেড়াজালে বেঁধে নিজ বুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়ে জীবন তরান্বিত করার মানে সম্পূর্ণ অন্যরকম। দিনের শেষেঅঙ্কের হিসেব ‘শূন্য’! বন্ধ হোক ভাই-ভাইয়ে, ভাইয়ে-বোনে যুদ্ধ। সমাজকে একবার ধুয়ে ফেলা যাক। ধার্মিক অবস্থাকে মাথায় রেখে শুধু ভাই ফোঁটা নয়চালু হোক বোনফোঁটাও! আয় হাতে হাত বাঁধি।