রাজ্যের খবর

বাণিজ্য সম্মেলন: বঙ্গে বসতে লক্ষ্মী

Trade Conference: Lakshmi to sit in Bengal

Truth Of Bengal: জয় চক্রবর্তী: বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। একসময় এই বাংলাই বাণিজ্যের প্রধান অঞ্চল হিসাবে পরিচিত ছিল। ৩৪ বছরের বাম শাসনকে পরাজিত করে ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে। বাংলায় বাণিজ্যের গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয় ‘বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন’ বা ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’।

গত বছর লোকসভা নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না। তবে এ বছর বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজিত হবে আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইমতো আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে অষ্টম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও বাংলার তথা দেশের তাবড় তাবড় শিল্পপতিরা উপস্থিত থাকছেন বাণিজ্য সম্মেলনে।

পশ্চিমবঙ্গে কেন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন, তার তথ্য তুলে ধরবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক স্থিরতার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সরকারি সুবিধা দেওয়ার বার্তা দেবেন।

সিমেন্ট, চামড়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশের পয়লা নম্বর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর শিল্প আসছে কলকাতায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন সেমিকন্ডাক্টর শিল্প কলকাতাতে হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই শিল্পের জন্য সমস্ত ধরনের সাহায্য করা হবে তার আশ্বাসও দিয়েছেন। তা ছাড়া বাংলার জিডিপি বেশ খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী। যার সুবিধা বিনিয়োগকারীরা পাবেন।

পাশাপাশি বাংলাকে কেন্দ্র করে চিন, নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটানে সহজেই বাণিজ্য করা সম্ভব। এবারের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সহজেই বাণিজ্যিক আদান-প্রদান সম্ভব এই বাংলা থেকে। তা ছাড়া পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ রয়েছে বাংলার। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুবিধা। বাণিজ্য সম্মেলনে বিটুবি বা বিজনেস টু বিজনেস একাধিক বৈঠক থাকছে।

কনভেনশন সেন্টার ছাড়াও বাণিজ্য সম্মেলনের বিভিন্ন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে (এক সময় মিলন মেলা)। বাণিজ্যে বিনিয়োগের পাশাপাশি কর্মসংস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইতিমধ্যেই। পাশাপাশি একাধিক জনস্বার্থমূলক প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিক চেষ্টায় বাংলার আমজনতা পেয়ে থাকেন। বিষয়টি বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে তুলে ধরা হবে।

ইতিমধ্যেই ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে সেটাও তুলে ধরা হবে বাণিজ্য সম্মেলনে। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে থাকার কথা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির কর্ণধার মুকেশ আম্বানির। এছাড়া থাকছেন অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন নেওটিয়া। আরপিজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। তা ছাড়া থাকবেন ডালমিয়া গ্রুপের ম্যানেজিং ডিটেক্টর পুনিত ডালমিয়া। গ্রেট ইস্টার্ন এনার্জি কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ওয়াইকে মোদি, চ্যাটার্জি গ্রুপের চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু চ্যাটার্জী সহ বাংলার তথা দেশের তাবড় শিল্পপতিরা উপস্থিত থাকবেন।

বাণিজ্য সম্মেলনে যে সমস্ত বিনিয়োগকারীরা আসবেন তাদের সঙ্গে যাতে সারা বছর যোগাযোগ রাখা যায় তার নির্দেশ ইতিমধ্যেই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় তার জন্যও আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন মন্ত্রী পুলক রায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ মজুমদার, মলয় ঘটক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সহ একাধিক মন্ত্রী। থাকবেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা। বাণিজ্য সম্মেলন চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

কেন পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ?

পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে চাইছেন শিল্পপতিরা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিমধ্যেই ‘ওয়ান উইন্ডো সিস্টেম’ করা হয়েছে। এখান থেকেই এক লপ্তে সব সুবিধে পাওয়া যাবে। এছাড়া সরকারের নিজস্ব ল্যান্ড ব্যাঙ্ক রয়েছে। বাণিজ্য সম্মেলনে যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হবে–

* ২০১১ সাল থেকে বঙ্গে স্থিতিশীল সরকার

* ভারতের সংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা

* ধর্মঘট শূন্য রাজ্য, শিল্পবান্ধব পরিবেশ

* সুলভ মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ

* রাস্তা, পানীয় জল সহ পর্যাপ্ত পরিকাঠামো

* উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জায়গায় মোবাইল কানেক্টিভিটি

* প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৃষি ক্ষেত্রে দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান

* বিশ্বমানের চায়ের একমাত্র জায়গা

* রসগোল্লা-সহ রাজ্যের একাধিক পণ্যে জিআই ট্যাগ

* আসছে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে দেশের অগ্রণী

* উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা

* ইস্পাত, চামড়া, পাট, সিমেন্ট, টেক্সটাইল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বাংলা

* দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক সম্মান

বাণিজ্য সম্মেলনে ‘ফোকাস’

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বেশ কিছু বিষয়কে বিনিয়োগকারীদের সামনে ‘ফোকাস’ হিসাবে তুলে ধরা হবে-

* ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প

* কর্মসংস্থান

* পর্যটন

* স্বাস্থ্য ও শিক্ষা

* তথ্যপ্রযুক্তি

* পরিকাঠামো ও উৎপাদন

* আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুবিধা এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ

* সংস্কৃতি

* বিদ্যুৎ

বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধা

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তা হল-

* ওয়ান উইন্ডো সিস্টেম। বিনিয়োগের জন্য সমস্ত তথ্য পেতে এবং আবেদন করতে এক জানালা পদ্ধতি

* বিনিয়োগকারীদের সুবিধায় ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট (‌www.silpasathi.in)।

* আবেদনের পর সঠিক সময় পরিষেবা প্রদান

* পরিষেবা সরবরাহের জন্য ই-প্ল্যাটফর্ম

* সমস্ত বিষয়বস্তু অনলাইন

* জিআই মানচিত্র

* প্রতিটা জেলায় শিল্প সুবিধাকেন্দ্র বা আইএফসি

Related Articles