হাসিমা দ্বীপ, কেন অভিশপ্ত হয়ে উঠল জাপানের এই দ্বীপনগর!
Hashima Island, why this island city of Japan became cursed

The Truth of Bengal: বিশ্বের কিছু জায়গা রয়েছে, রহস্যময়, কিছু জায় রয়েছে, যার ইতিহাসটাই অভিশপ্ত, তেমনই জাপানের এক দ্বীপ, যার মাটিতে রয়ে গিয়েছে একাধিক বিয়োগান্ত কাহিনী। একটা সময় হাসিমা দ্বাপে বাস করত প্রায় ৬ হাজার মানুষ। কিন্তু আজ তা পরিত্যক্ত নির্জন। স্রেফ জেগে রয়েছে একরাশ অভিশাপকে সঙ্গে নিয়ে। ক্ষুদ্র এই দ্বীপে ছিল ১৫ টি অ্যাপার্টমেন্ট আর প্রায় ১০০টি ছোট দোকান। পাখির চোখে দেখলে মনে হয়, এই দ্বীপে এখনও মানুষের বাস রয়েছে। কিন্তু না, এখানে এখন কোনও মানুষ থাকে না। নাগাসাকি থেকে মাত্র নয় মাইল দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ। একটা সময় কয়লা উত্তোলনের জন্য বিখ্যাত ছিল।
হাসিমা দ্বীপটি আরও একটি নামে পরিচিত, সেটি হল গুনকানজিমা। গুনকানজিমা অর্থ, যুদ্ধজাহাজ দ্বীপ। এই নামকরণের কারণ ছিল, দ্বীপটি দেখতে অনেকটাই যুদ্ধজাহাজের মতো লাগে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৮৭ সাল থেকে দ্বীপটিতে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। জাপানের মিৎসুবিসি ১৮৯০ সালে দ্বীপটি কিনে নেয় এবং সমুদ্রের নিচের খনি থেকে কয়লা তুলতে শুরু করে। প্রায় ১৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। সেই সময় হাসিমা দ্বাপ থেকে পাওয়া কয়লা জাপানের অর্থনীতি নির্মাণে বড় ভূমিকা নেয়। প্রায় ৫৫ বছরে ধরে এখানে বাস করতেন খনির ইঞ্জিনিয়ার থেকে শ্রমিকেরা। ফলত শুরু হয়েছিল অ্যাপার্টমেন্ট, স্কুল, হাসপাতাল, টাউন হল ও একটি কমিউনিটি সেন্টার। এ ছাড়া বিনোদনের জন্য একটি ক্লাব হাউস ও সিনেমা হল পর্যন্ত তৈরি করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনা বন্দিদের এনে রাখা হত। বলপূর্বক দ্বীপটিতে রেখে শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হতো। সেই শ্রমিকরা অনেক দুর্যোগপ্রবণ অবস্থাতেও খনিতে কাজ করতো। অনেকে পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসার অভাবে মারাও যেত। অনেকে সুমুদ্রের নিচ গিয়ে কয়লা তুলতে তোলার সময় বিপদের মুখে পড়ত। এমনই এক দুর্ঘটনায় মারা যায়, প্রায় হাজার শ্রমিক। ১৯৬০ সাল নাগাদ কলয়ার বদলে পেট্রোল জ্বালানী হিসেবে বড় জায়গা দখল করে। ফলে, কয়লার কদর কমে যাওয়ায়, গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে হাসিমা দ্বীপ। তারপর কোম্পানিও এখানের শ্রমিকদের রেহাই দেয়। সেই সময় এখানকার বাসিন্দারা দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্রে বাসা জমায়। ইউনেস্কো ২০১৫ সালে এই পরিত্যক্ত দ্বীপটিকে বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা দিয়েছে। বর্তমানে বহু পর্যটকরা যান এই দ্বীপে বেড়াতে।
ইতিহাস বলছে, ১৮০০ সালের শুরুর দিকে এই দ্বীপের কাছে প্রায় ১৬ একর জায়গায় কয়লার খনির খোঁজ মেলে। সেই সময় পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে তাল মেলাতে ও দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে জাপানও কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়। সেই সময় কয়লাই ছিল প্রধান জ্বালানি। এই দ্বীপ হয়ে ওঠে জাপানের অর্থানীতির অন্যতম ভান্ডার। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে মিৎসুবিসি কোম্পানিটি চিরতরে এই জায়গা থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে দ্বীপটি চিরতরে ত্যাগ করে। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই পুরো দ্বীপটি জনমানবশূন্য হয়ে যায়।
এই দ্বীপ পরিত্যক্ত হলেও এই দ্বীপের এখনও মালিকানা রয়েছে মিৎসুবিসির হাতেই। ভেঙে যাওয়া ইমারতের দেয়ালগুলোকে সংস্কার করে এখানে পর্যটকদের আসার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বীপটির প্রাচীন ঘরবাড়িগু ও সমুদ্রের সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত গ্রহনীয় হয়েছে। তাছাড়াও এই দ্বীপটির স্থাপত্য কাঠামো, সবগুলোই প্রাচীন রোমান স্থাপত্যের আদলে। ফলত, বাস্তুকলার নিরিখে এক একটা আলাদা কদর রয়েছে।