ভারতে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা ও বিক্রি কমে যাওয়ায় কর্মী ছাঁটাই করতে চলেছে স্যামসাং
Samsung to lay off workers amid growing competition and declining sales in India

Truth Of Bengal: Saif Khan: হতাশা জনক বিক্রয় পারফরমেন্সের কারণে স্যামসাং তার ভারতীয় ইউনিটে চাকরি কমিয়ে দিচ্ছে। কারণ হিসেবে স্যামসাং জানিয়েছে, হতাশাজনক বিক্রয়, কোম্পানির মূল্য এবং মার্কেট শেয়ারে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে, যা এক দশকের মধ্যে সবথেকে নিম্নস্তরে পৌঁছেছে। ফলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর অনুসারে, কোম্পানিটি সেলস, মার্কেটিং এবং অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ছাটাই করছে। এই বিষয় সম্পর্কে অবগত একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন যে চাকরি হারানোর সংখ্যা একটি ‘উচ্চ একক সংখ্যা’ হতে পারে। যদিও অন্যান্যরা আরও বেশি সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। এই সংখ্যা ভারতের কর্মবাজারের হিসাবে ৩০% পর্যন্ত উপরে যেতে পারে।
অপর একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, স্মার্টফোন, ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স এর মত ব্যবসায় বর্তমানে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা চলছে, যার কারণে কোম্পানি থেকে কিছু প্রধান আধিকারিকদের ছেঁটে দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছে স্যামসাং। পাশাপাশি যেসব পদে কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন সেই পদগুলিতেও দেওয়া হচ্ছে না নিয়োগ।
অফ-রোল কর্মচারীর সংখ্যাও কমিয়ে দিচ্ছে স্যামসাং
এই ঘটনাটি এমন সময় ঘটে যখন চেন্নাইয়ে অবস্থিত তাদের উৎপাদন কারখানার শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে সামিল হয়েছে। উৎসব মরসুমের ঠিক আগে এই ধর্মঘট টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর এবং ওয়াশিং মেশিনের মত পণ্যের উৎপাদনকে প্রভাবিত করেছে।
সূত্র অনুসারে জানা যায়, স্যামসাং কর্তৃপক্ষ তাদের কোম্পানির মধ্যে চলমান সমস্যা এবং পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ভারতীয় দলকে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় ডেকে পাঠিয়েছিল।
শাওমি এবং ভিভো-র মতো ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতামূলক টক্কর, খুচরো বিক্রেতাদের সাথে লড়াই এবং মূল বিক্রয় ও বিপণন আধিকারিকদের প্রস্থানের কারণে স্যামসাং এর লড়াই আরো জটিল হয়ে পড়েছে।
বিগত কিছু দিনে স্যামসাং খুচরা, বিপণন এবং সেই উন্নয়নের ভূমিকায় ৩০ টিরও বেশি সিনিয়র এক্সিকিউটিভকে হারিয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী শাওমিতে চলে গেছে। সূত্র মোতাবেক জানা গেছে, আগামী দিনে এই সমস্ত কাজে যোগ দিতে আরো অনেক কর্মকর্তা কোম্পানি ছেড়ে যেতে পারেন।
অফলাইন খুচরা বিক্রেতাদের সাথে চলমান সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে অনলাইন এবং বড় ফরম্যাটের স্টোরগুলির মধ্যে বিভিন্ন মূল্য নির্ধারণ, চিনা কোম্পানিগুলির তুলনায় কম মার্জিন এবং স্টকে জনপ্রিয় মডেল গুলির প্রাপ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা। এই সমস্যাগুলি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
অল ইন্ডিয়া মোবাইল রিটেলার অ্যাসোসিয়েশন (এআইএমআরএ) সম্প্রতি স্যামসাং এর দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং সিইও যেভি পার্ক এবং মোবাইল ডিভিশনের কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সুন চোইকে বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছে। এই চিঠিতে মার্জিন বাড়ানো, ধারাবাহিক মূল্য নির্ধারণ, চ্যানেল জুড়ে অভিন্নতা, নির্বাচিত আপগ্রেড গুলির রোলব্যাক, আরো বিক্রয় বৃদ্ধি করতে বা ব্যবসায়িক ক্রিয়া কলাপ সহজ করতে মূল্য হ্রাসের কথা বলা হয়েছে।
স্যামসাং ২০২৩ সালে ভারতের শীর্ষ স্মার্ট ফোন ব্র্যান্ড হিসেবে তার স্থান পুনরুদ্ধার করেছিল। 2022 সালের ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে শাওমি কে ছাড়িয়ে যায়। বাজার গবেষণা সংস্থা আইডিসি, কাউন্টার পয়েন্ট এবং ক্যানালিসের মতে, ২০২৪ সালের এপ্রিল জুন প্রান্তিকে স্যামসাং তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। এই সময়ের মধ্যে স্যামসাং স্মার্টফোনের চালান ১৫.৪ শতাংশ কমেছে, যা টানা তৃতীয় ত্রৈমাসিক পতন। এর ভলিউম মার্কেট শেয়ার ১২.৯ শতাংশ কমেছে।
আইডিসির তথ্য অনুসারে, এই পতন স্যামসাং এর মূল্য বাজার শেয়ারকেও প্রভাবিত করেছে। যা গত ত্রৈমাসিকের ২৩ শতাংশ এবং এক বছর আগে ২১ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে।