ঐতিহাসিক মঞ্চে বক্তৃতা মুখ্যমন্ত্রী, বাংলায় শিল্পে বিপুল বিনিয়োগের কথা মুখ্যমন্ত্রীর
Chief Minister speaks on historic stage, talks about huge investment in industry in Bengal

Truth Of Bengal: অক্সফোর্ডে বক্তৃতা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মুখ থেকে বাংলার কথা শুনল বিশ্ব। বিশ্বমঞ্চে বাংলার নানা কথা বললেন তিনি। অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে ‘সামাজিক উন্নয়ন- বালিকা, শিশু এবং মহিলা ক্ষমতায়ন’ বিষয়ে বক্তৃতা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে প্রথমে বক্তৃতা, তারপর ছিল আলাপচারিতা। মূল কর্মসূচির আগে অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘুরে দেখেন ক্যাম্পাস। অক্সফোর্ডের বিভিন্ন ইতিহাস মমতাকে দেখান কর্তৃপক্ষ। এখানকার গ্রন্থাগারটি বিশ্বের অন্যতম সেরা। সেখানে ঘুরে দেখেন তিনি। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন এই গ্রন্থাগারে বেশ কিছুক্ষণ কাটান মুখ্যমন্ত্রী। দেখেন সব কিছু। সেখান থেকে সোজা কেলগ কলেজের মূল প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছন বক্তৃতা করতে।
লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেল থেকে সড়কপথে অক্সফোর্ডের উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অক্সফোর্ডের অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সবার সঙ্গে বাসে চেপে মুখ্যমন্ত্রী অক্সফোর্ড পৌঁছলেও সৌরভ পৃথক গাড়িতে করে লন্ডন থেকে রওনা দিয়ে সেখানে পৌঁছন। ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেখানে পৌঁছতেই তাঁকে ফুলের স্তবক দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। হোটেলে মুখ্যমন্ত্রীকে হলুদ ফুলের তোড়ায় অভ্যর্থনা জানান অক্সফোর্ডের গবেষক এবং গত লোকসভা ভোটে মালদা দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হান। বিশ্রামের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানকার একটি হোটেলে। লবিতেই রাখা ছিল শতাব্দী প্রাচীন পিয়ানো। ১৮৮৭ সালের প্রাচীন পিয়ানোতে ‘প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে’, ‘উই শ্যাল ওভারকাম’, ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ সুর ধরলেন মমতা।
এখানে একেবারে চেনা ভঙ্গিতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। ৯২৯ বছর পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখতে অনেকটা সময় লাগে। আগ্রহের সঙ্গে বৃহৎ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। ঐতিহাসিক এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের যাবতীয় ইতিহাস মুখ্যমন্ত্রীকে ঘুরিয়ে দেখান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপর আসে সেই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত। ভিড়ে উপচে পড়া পড়া কেলগ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে তাঁকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান শ্রোতারা।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে আসে বাংলার কথা। তাঁর হাত ধরে কী ভাবে বদল হয়েছে বাংলায়, কীভাবে নারী ক্ষমতায়ন বেড়েছে সেই কথা বলতে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের কথা বলেন। মেয়েদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এই যে প্রকল্প চালু করেছেন, তা আজ সমাদৃত হচ্ছে গোটা দেশের পাশাপাশি বিশ্বে। স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকোও। মুখ্যমন্ত্রীর এই সুদূরপ্রসারী ভাবনায় আজ স্কুলে যাওয়ার হার বেড়েছে মেয়েদের।
মেয়েদের স্কুলে আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যা যা করেছেন তা এতদিন করতে দেখা যায়নি কোনও সরকারকে। সেই সঙ্গে নারী ক্ষমতায়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী চালু করেছেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। সরকারের তরফে মহিলাদের হাতে এখন প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে মহিলারা এখন আর খুব একটা পর নির্ভর নন। তাঁরা প্রয়োজনে নিজের খরচের কিছুটা করতে পারছেন সরকারের দেওয়া টাকায়। আবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ব্যাপক প্রসার রাজ্যে। যা নিরন্তর ভাবে করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে রাজ্যে মহিলাদের উন্নয়নে এই যে ইতিবাচক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা উঠে আসে তাঁর বক্তৃতায়।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এমন মঞ্চে বক্তৃতা করলেন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্বে কুলীন হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১০ শতাব্দী ধরে শিক্ষার প্রবাহমান ধারা বয়ে চলা বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে বাংলার কথা শুনল গোটা বিশ্ব। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তৃতা নিয়ে আগেই উৎসাহ তুঙ্গে ওঠে লন্ডনের পড়ুয়াদের মধ্যে। তাঁরা আগ্রহে ছিলেন সামনে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে। তাঁরা বুঝতে চেয়েছিলেন, কী ভাবে সঠিক নেতৃত্বদানের মধ্যে দিয়ে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বমঞ্চে সেই সব কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কেলগ কলেজের সভাপতি অধ্যাপক জোনাথন মিচি এবং এই কলেজেরই ‘ফেলো’ তথা বিশিষ্ট শিল্পপতি লর্ড করণ বিলিমোরিয়া। বিশেষ এই মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।