অফবিটআন্তর্জাতিকভ্রমণ

লন্ডনের ২২১বি বেকার স্ট্রিট শার্লক হোমস সৃষ্টির আঁতুড়ঘর

221B Baker Street, London, the home of Sherlock Holmes

রাজাময় মুখোপাধ্যায়, লন্ডন (মুখ্যমন্ত্রীর সফর সঙ্গী): ২২১বি বেকার স্ট্রিট। লন্ডনের একটি বাড়ির ঠিকানা। তবে এটি এমন একটি বিখ্যাত ঠিকানা, যে সবার জানা এই বাড়িতে কে থাকতেন। এই বাড়িতে বসে কী সৃষ্টি করেছেন স্রষ্টা। ঠোঁটে পাইপ, হাতে ছড়ি, পরনে ওভারকোট, মাথায় কানটুপি— দীর্ঘদেহী মানুষটির এই কীর্তিতে আজও মজে আছে তামাম বিশ্ব। গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস। আধুনিক গোয়েন্দা বিজ্ঞানেরই অন্যতম বিস্ময়, শতাধিক বছর ধরে পৃথিবীর সব গোয়েন্দা চরিত্রের অনুপ্রেরণা, সর্বকালের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা চরিত্র উইলিয়াম শার্লক স্কট হোমস— সবাই অবশ্য শার্লক হোমস নামে চেনে।

এই গোয়েন্দা চরিত্র যার কল্পনা প্রসূত সেই স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল বাস করতেন ২২১বি বেকার স্ট্রিটের বাড়িতে। যে বাড়িটি এখন জাদুঘর হয়ে গিয়েছে। লন্ডনে এসেছেন অথচ ২২১ বি, বেকার স্ট্রিটের ওই বাড়ির সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ভেতরে ঢোকেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।এই বাড়িটি সংগ্রহশালা হিসেবে চালু হয় ১৯৯০ সালে তীর্থ দেখার মতো প্রতি বছর বিশ্বের নানা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন গোয়েন্দা-ছোঁয়া পেতে। শার্লক হোমসের শুরু হয়েছিল ১৮৮৭ সালে, এই চরিত্র নিয়ে শেষ গল্পটি লেখা হয় ১৯২৭ সালে। অর্থাৎ প্রায় একশতাব্দী হয়ে গিয়েছে।এতদিন ধরে এই গোয়েন্দা চরিত্র যেভাবে মানুষের মনে জায়গা করে আছে, সেখানে অন্য আর কোনও গোয়েন্দা চরিত্র জায়গা করতে পারেনি।

পেশায় চিকিৎসকস্যার আর্থার কোনান ডয়েল শার্লক হোমসকে নিয়ে চারটি বড় আকারের উপন্যাস এবং ৫৬টি ছোটগল্প লিখে গিয়েছেন। ১৮৮১ সালের কোনেও এক সময়ে লন্ডনের ২২১বি বেকার স্ট্রিটে একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে শার্লকের রুমমেট হয়ে ওঠেন যুদ্ধফেরত চিকিৎসক-সৈনিক ডক্টর ওয়াটসন। আর এই সাক্ষাতের পর শুরু হয় শার্লক হোমসের প্রথম অভিযান— ‘আ স্ট্যাডি ইন স্কারলেট’। এই উপন্যাস দিয়েই শুরু হয় হোমসের পথচলা। এরপর কোনান ডয়েল লেখেন ‘দ্য সাইন অব ফোর’। শার্লকের অন্যতম সেরা এই দুটি কাহিনির কোনওটিই তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। সেই জনপ্রিয়তাটা শুরু হয় দ্য স্ট্যান্ড ম্যাগাজিনে ‘স্ক্যান্ডাল অব বোহেমিয়া’ ছোটগল্প ছাপা হওয়ার পর। এই একটি গল্প সারা দুনিয়ার কিশোর থেকে বয়স্ক পাঠককে মোহিত করে দিয়েছিল। এখন থেকেই হোমস-এর জনপ্রিয়তা শুরু হয়।কাল ক্রমে গোটা বিশ্বে ভক্ত তৈরি হয় শার্লক হোমসের। সামান্য একটি সূত্র, সামান্য একটি চিহ্ন। যা দেখে বিরাট অনুমান করতে পারার বিস্ময়কর ক্ষমতা অনন্য করে রেখেছে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমসকে। অপরাধ তদন্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ অনন্য করে রেখেছে এই চরিত্রকে। সামান্য একটা পায়ের দাগ, সিগারেটের ছাই, রক্তের ফোঁটা, নখের আঁচড় থেকে গবেষণা করে হোমস দিব্যি পৌঁছে যেতেন অপরাধী পর্যন্ত।

লন্ডনের যেকোনও জায়গা থেকে ২২১বি বেকার স্ট্রিটে আসা যায়। পাতাল রেলে চেপে বেকার স্ট্রিট যেতে সময়ও তেমন লাগে না। স্টেশনে নামা মাত্রই পর্যটকদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয় ডিটেকটিভ শার্লক হোমসের সুদৃশ্য ভিজিটিং কার্ড। পর্যটকদের মনে না থাকলেও ওই ভিজিটিং কার্ড আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাইকে মনে করিয়ে দেয় শার্লক হোমসের গন্তব্যস্থলের কথা। সামনে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়বে শার্লক হোমসের একটিবড় মূর্তি। মাথায় ‘হ্যাট’, হাতে ‘পাইপ’। বেকার স্ট্রিট আন্ডার গ্রাউন্ড স্টেশনের বাইরেও এখন বসানো হয়েছে শার্লক হোমসের ৯ ফুট উঁচু এক বিশাল আর একটি মূর্তি।

আজও ২২১বি বেকার স্ট্রিট আগের মতোই চিঠির স্তূপ জমে। আজও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ঠিকানায় আসেন হোমস জাদুঘর দেখতে। যেখানে তাঁরা ছোঁয়া পান স্যার আর্থার কোনান ডয়েল সৃষ্ট পৃথিবী বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস-এর। লন্ডনের রাস্তায় নানা জায়গায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে নানা ইতিহাস। ব্রিটিশদের গর্বের সেই সব ইতিহাস মুগ্ধ করে চলেছে দেশ-বিদেশকে। ২২১বি বেকার স্ট্রিট ঠিকানার বাড়িটিও কম গর্বের নয় ইংরেজদের কাছে। ব্রিটিশদের এই ইতিহাস বিদেশি পর্যটকদের কাছে আবার তীর্থ দেখার মতো।

Related Articles