
The Truth of Bengal: প্রচীন ভারতের ইতিহাস ও কিংবদন্তীর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বহু কথা ও কাহিনী। এমনকী প্রাচীন স্থাপত্যের মধ্যেও নানা বিস্ময়। প্রায় সহস্রাব্দ পার করা বহু মন্দির, শিক্ষকেন্দ্র বা রাজপাটের স্থাপনা দেখলে একটা প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে, এতো বছর আগে, কীভাবে তৈরি করা হত এই সমস্ত বিস্ময়কর স্থাপত্য।
চম্বল। এই শব্দটা শুনলেই এখনও অনেকের বুক কেঁপে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে এই চম্বল ঘাটি বা উপত্যাকতাই হয়ে উঠেছি, ভারতের কুখ্যাত হিংস্র ডাকাতদের গড়। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে চম্বল নদী। বলা ভালো, এই তিন রাজ্যের একটা বড় অংশের সীমানাও তৈরি করেছে দেশের অন্যতম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, দূষণহীন নদী চম্বল। আর এই চম্বল নদীর পাড়েই রয়েছে এক কুক্যাত এলাকা মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলা। গত কয়েক দশক ধরেই, এই মোরেনা জেলাতেই দাপিয়ে বেড়িয়েছে একের পর এক কুখ্যাত ডাকাত। অপহরণ (পকড়), খুন, ধর্ষণ, লুঠ ছিল এদের নেশা ও পেশা।
বর্তমানে ছবিটা পাল্টে গিয়েছে, এখন এই অঞ্চলে সেভাবে বাগি বা ডাকাত নেই। বহু ডাকাত আত্মসমর্পণ করে চাষাবাদে মন দিয়েছে। আজকের কাহিনী সেই সমস্ত ডাকাতদের নিয়ে নয়। বরং এই মোরেনা জেলার সিহোনিয়াতে রয়েছে মন এক মন্দির যা আজও রহস্যময়। কাঁকনমঠ মঠ মন্দির। দূর থেকে এই মন্দিরকে দেখলে মনে হবে, একটি মন্দিরের কাঠামো মাত্র। এমন ভাবে পাথরগুলি সাজানো রয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে হয়তো একটু হাওয়া দিলেই বেঙে পড়বে। একটি প্রাচীন মন্দিরের কঙ্কাল যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর এই অদ্ভুত দর্শনের মন্দিরকে ঘিরেই জন্ম নিয়েছে, নানা জল্পনা, কিংবদন্তী।
আরও পড়ুন- চিনের এক নিষিদ্ধ নগরীতে চলছে অদ্ভুত কর্মকাণ্ড, চুপ গোটা বিশ্ব
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১০১৫ থেকে ১০৩৫ খ্রিস্টাব্দে কচ্চাপগাথা সাম্রাজ্যের রাজা কীর্তিরাজা এই মন্দিরের নির্মাণের সূচনা করেন। এই রাজার নাম মেলে গোয়ালিওর ফোর্টে অবস্থিত শাস বহু মন্দিরেও। যদিও স্থানীয় একটি কিংবদন্তী থেকে জানা যায়, এখানে এক রাজা ছিলেন, সূরজপাল। তাঁর রানি ছিলেন কনকাবতী। তিনি শিবের উপাসক ছিলেন, তাঁর আবেদন মেনেই এই শিবের মন্দিরটি তৈরি করান রাজা। এবং রানি নাম কনকাবতী থেকে কাঁকন মঠ নামকরণ। আরও একটি কাহিনী রয়েছে, সকালে এই মন্দিরের উপর যখন প্রথম সূর্যকিরণ পড়ে, তখন মন্দরটিকে পুরো সোনার মন্দিরের মতো দেখতে লাগে। সেই থেকে কাঁকন মঠ নাম এসেছে।
আরও পড়ুন- এই দ্বীপে জ্যান্ত পোড়ানো হয়েছিল প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে
গোয়ালিওরের কিছু পুরনো মন্দিরের শিলালেখ থেকে এই মন্দিরের সূত্র মিললেও, বেশ কিছু প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, এই মন্দির অদ্ভুত দর্শন কেন? মন্দিরের মূল কাঠামো দেখলে বোঝা যায়, বৈদিক স্থাপত্যের রীতি মেনেই আর পাঁচটা প্রাচীন মন্দিরের মতো কাঁকন মঠের কাঠামো রয়েছে। কিন্তু এই মন্দিরের পাথরগুলি যেভাবে অবিন্যস্ত, অগোছালো দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা বিস্ময়কর। সম্ভবত এমন নজির গোটা ভারতে দ্বিতীয় নেই। তাই অনেকে মনে করেন, এই মন্দির এক রাতে ভূতেরা তৈরি করেছিল। কিন্তু মন্দির শেষ হওয়ার আগে, ভোর হয়ে যাওয়ায় অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে।