রান্নাঘর

পরোটায় নরম কাবাবের টুকরো, নতুন ধরেনের স্বাদের রোল পেতে ট্রাই করুন কুসুম রোল

Kusum rolls

The Truth of Bengal: প্রিয়রঞ্জন বললেন কুসুমের রোল বাইরে যতটা মুচমুচে, ভিতরে ততটাই নরম। টেবিলের উপর সাজানো অনেকগুলো রোল। একটা তুলে নিয়ে প্রিয় কাকু মানে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি বললেন, উফ, এমন খাসা রোল কলকাতায় আর কেউ বানায় না। পরোটাটা যেমন মুচমুচে, ভিতরের মাংসগুলো তেমনই তুলতুলে। উফফ।  পার্ক স্ট্রিটের এই দোকানটাই এখন সেরা। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে সেই প্রথম আমার কুসুম-এর কাঠি রোলের সঙ্গে পরিচয়। কৈশোরে সেই যে কুসুমের প্রেমে পড়লাম, আজ এই মধ্যবয়সে এসেও পার্ক স্ট্রিটে গেলে ওই কাঠি রোলে কামড় না দিলে ফিরতে মন চায় না। আজ থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে যে দিন প্রথম কুসুমের কাঠি রোলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, সেই দিনের স্মৃতিটা এখনও মনের মধ্যে টাটকা। সেটা যতটা দিনের মাহাত্ম্যে, প্রায় ততটাই বোধহয় ওইরকম স্বাদু রোলের গুণে। রাজীব গান্ধীর মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি কলকাতায় ফিরেছেন, আমরা পারিবারিক যোগাযোগের সূত্রে তাঁকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে রানি ভবানী রোডের ফ্ল্যাটে ফিরেছি। দক্ষিণ কলকাতার যে ফ্ল্যাটে প্রিয়রঞ্জন আজীবন কাটিয়েছেন, সেখানেই নতুন মন্ত্রীর জন্য কোনও অনুগামী যেমন নিয়ে এসেছিলেন রসগোল্লা, তেমনই ঘনিষ্ঠ কেউ নিয়ে এসেছিলেন কুসুমের রোল। আমি যে সময়টার কথা বলছি, তখনও কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় এত রোল কর্নার গজিয়ে ওঠেনি। শহরের উত্তরে বা দক্ষিণে যেখানে রোল পাওয়া যেত, সেখানে চিকেন বা মটন রোলই মিলত।

এগ চিকেন বা ডাবল এগ চিকেন তখনও এই শহরের বাঙালিদের কাছে এত পরিচিত হয়নি। কিন্তু সেই সময়টাতেই কুসুম কিন্তু সুবিদিত শুধু তার চিকেন বা মটন রোলের জন্য নয়, এই সব ‘স্পেশাল রোল’- এর জন্যও। এটা ঠিক যে কুসুম কলকাতায় রোলের ‘জনক’ নয়। কিন্তু এলভিস প্রেসলি যেমন চিরকাল হৃদয়ে রয়ে যাবেন ‘রক অ্যান্ড রোল’-এর সম্রাট হিসাবে, তেমনি কলকাতার রোলের ইতিহাসে কুসুম হচ্ছে এলভিস প্রেসলি। রোলের ভিতরে মাংসের সঙ্গে ক্যাপসিকামের কুচি, লেবুর রস আর কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে যে মৌতাত এনে দিল পার্ক স্ট্রিটের এই ছোট্ট আউটলেট, তা গত শতকের আটের দশকে কলকাতায় খুব সুলভ ছিল না। এটা বললে খুব অত্যুক্তি হবে না, রোলের আবিষ্কারক না হলেও, কলকাতায় রোলকে জনপ্রিয় করে একটা আধুনিক চেহারা দেওয়ার জন্য কুসুমের নাম খাবারের ইতিহাসে লেখা থাকা উচিত। পার্ক স্ট্রিটে পার্ক হোটেল এবং অক্সফোর্ড বুকস্টোর পেরিয়ে ‘অলিপাব’-এর পরে বাঁদিক দিয়ে ঢুকে গেলে কুসুম রোল শপের ঠিকানা। রোল ছাড়াও কাৰাব ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস বিক্রি হলেও পঞ্চাশে পা দেওয়া এই ‘ফুড আউটলেট’-এ কিন্তু কোনও বসে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আপনি অর্ডার করলেন এবং তারপরে আপনার চোখের সামনে রোল তৈরি হল, এবার সেই রোল কাগজে মুড়ে ধরিয়ে দেওয়া হল আপনার হাতে। অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই যাকে বলা যায় স্ট্রিট ফুড’ বা ‘রোড সাইড ফুড’ আউটলেট, কুসুম রোল আসলে তাই।

অর্থাৎ যাঁরা এর গুণগ্রাহী, তাঁরা কিন্তু গত ৫০ বছর ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়েই এই রোলের স্বাদ উপভোগ করছেন, অথবা প্যাকেটে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। কুসুমের রোলের আসল জাদুটা কোথায়? অনেক ফুড ব্লগার লিখেছেন, রোলের যে পরোটাটা, সেটা যেভাবে ভাজা হয়, একই সঙ্গে বাইরে থেকে খাস্তা, আবার ভিতর থেকে নরম। সেটাই কুসুম রোলের অনিবার্য গুগলি। কিন্তু সেই আটের দশকে প্রথম খাওয়ার পর থেকে আমার বারবার মনে হয়েছে এই গুগলির পাশাপাশি কুসুম রোলের একটা অব্যর্থ ‘স্লোয়ার’ আছে, যেটা প্রথমে বোঝা যায় না, কিন্তু ভাল স্পিন বোলারের ডেলিভারির মতোই একেবারে স্টাম্প তুলে নিয়ে যায়। এই ‘স্লোয়ারা হচ্ছে রোলের ভিতরের পুর। চিকেন হোক, মটন হোক, কিংবা নিরামিশাষীদের জন্য পনির, সবই এত চমৎকার করে চাটুতে সালে এবং ভেজে রোলের ভিতরে দেওয়া হয় যে আমার মতো পেটুকদের একেবারে ক্লিন বোল্ড করে দেয়। একটা রোলের দোকান নিয়ে এত উচ্ছ্বাস কেন, সেই প্রশ্নও মাথায় জাগলে কুসুমে গিয়ে স্বাদে এবং আহ্লাদে পরখ করে নেওয়া উচিত। যেগুলো এই রোল আউটলেটের স্পেশাল রোল, যেমন ডবল এগ চিকেন বা ডবল এগ মটন, সেগুলি যেমন দামে বেশি, তেমনি পুরোদস্তুর মধ্যাহ্নভোজের কাজ সামলে দিতে পারে। একটা রোল যখন আপনার দুপুরের খাবার কিংবা সন্ধের ‘হাই টি’র কাজ করে দেয়, তখন চমৎকৃত না হয়ে উপায় কী?

Related Articles