কর্নাটক: বেঙ্গালুরুর পদপিষ্ট কাণ্ডে দায় এড়াতে পারে না প্রশাসন
Karnataka administration cannot escape responsibility
শম্পা পাল: যেকোন মৃত্যুর ঘটনাই দুঃখজনক। কর্নাটকের তরতাজা ১১জন যুবক-যুবতির প্রাণহানিও অত্যন্ত মর্মান্তিক। ১৮ বছর পর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু আইপিএল (IPL) ট্রফি জেতে। তাদের ট্রফি জেতার বিজয় অনুষ্ঠানেই ঘটে অঘটন। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়। যাদের মৃত্যু ঘটে তাদের বয়স ৪০ বছরের মধ্যে, এক কিশোরীরও মৃত্যু হয় এই ঘটনায়। সন্তানের আবদার রাখতে গিয়ে মায়ের কোল খালি হয়। বহু মানুষ আহত হন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় দায় কার? এই নিয়ে বিভিন্ন মহলেই প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই।
[আরও পড়ুন: হাউজফুল ৫: দ্বিতীয় দিনেই ৬০ কোটির দোরগোড়ায়, কত কোটির ব্যবসা করল এই ছবি?]
বেঙ্গালুরু পুলিশ প্রশাসন যেমন দায় এড়াতে পারে না, তেমনি অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন তারা সমানভাবেই দোষী। আইপিএলকে ঘিরে প্রথম থেকেই মানুষের মধ্যে উন্মাদনা দেখা গেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে যেভাবে বিনোদন এবং ক্রিকেটের মেলবন্ধন ঘটেছে, আইপিএলের জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ এই বিষয়ে উৎসাহী। ১৮ বছর পর জয়ের উল্লাস এক মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়ে গেল, বেশি সংখ্যক মানুষের ভিড় হতে পারে জেনেও কিভাবে প্রশাসন তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। আবেগপ্রবণ জনতাকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা মাফিক স্টেডিয়ামে ঢুকতে না দিয়ে তাদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়। শহরের নিকাশি ব্যবস্থার দিকেও আঙুল উঠছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঘটনার দায় অস্বীকার করতে পারে না। প্রত্যেকের যৌথ অব্যবস্থার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাই এই ঘটনা কোন একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থার ফল নয়, সামগ্রিক ব্যর্থতার বলি একাধিক প্রাণ।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় আইপিএলে বিজয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই ঘটনা সর্বপ্রথম। এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১২ সালে প্রথমবার কলকাতা নাইট রাইডার্স এর আইপিএল জয়কে। জয়ের পর তারাও ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠান করলেও সেই অনুষ্ঠানকে কোলকাতা পৌরসভা এবং কলকাতা পুলিশ যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ক্রিকেটকে ঘিরে বরাবরই কলকাতায় উন্মাদনা থাকে, সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ২০১২ সালের সেদিনের ঘটনাতে ও কলকাতাতে সেই অনুষ্ঠানে একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলেন, বরং তা সত্ত্বেও আবেগপ্রবণ জনতার ঢলকে দক্ষ হাতে সামলে ছিলেন কোষলকাতার পুলিশ আধিকারিকরা।
শুধুমাত্র ক্রিকেটের ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পরে কলকাতার দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র শহরের মানুষ নয়, জেলার মানুষ, সর্বোপরি দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং বিদেশ থেকে কলকাতার পুজোকে দেখতে আসে বহু মানুষ। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সময়টা ২০১৫ সাল। কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের পুজোতে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গা’ আলোড়ন তৈরি করে। কিন্তু সেই বছরেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে আহত হয় বেশ কিছু মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে সেই মূর্তি দর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে।
[আরও পড়ুন: ভোটার তালিকায় বাংলাদেশী! ছিলেন কোটা বিরোধী আন্দোলনেও]
সাময়িকভাবে বিষয়টিকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও, যে কোনো বড় মর্মান্তিক ঘটনাকে এড়ানো সম্ভব হয়েছে। পরবর্তী বছরগুলিতেও পুজোর সময় কলকাতায় কলকাতা পুলিশ, কলকাতা কর্পোরেশন, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, বিদ্যুৎ সংস্থা সকলে যৌথভাবেই মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে, যাতে অপ্রীতিকর ঘটানা এড়ানো সম্ভব হয়। জনতার মধ্যে তাদের প্রিয় দলকে ঘিরে আবেগ উল্লাস থাকবে। কিন্তু সেই আনন্দ যেন বিষাদে পরিণত না হয় সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে জনগণকেও। প্রশাসনিক দক্ষতার সাথে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে বাঁচা সম্ভব। কলকাতা পুলিশের কর্ম দক্ষতা নিঃসন্দেহে সারাদেশে প্রশংসিত।






