প্রত্যেকদিন মধ্যরাতে ঘুমোতে যাচ্ছেন, জানেন কী ক্ষতি করছেন নিজের?
Going to sleep at midnight every day, do you know what harm you are doing to yourself?

The Truth Of Bengal, Mou Basu : অনেকেই কর্মব্যস্ততার কারণে অনেক রাতে বাড়িতে ফেরেন। এরপর রাতের খাওয়াদাওয়া সারেন। তারপর ল্যাপটপ বা কম্পিউটার খুলে বসেন কাজকর্ম সারতে। অনেকে আবার স্মার্টফোনে ওটিটিতে বা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ খুলে সিনেমা দেখতে বসেন। ফলে ঘুমের হয় দফারফা। নির্ধারিত সময় নয় অনেকেই মধ্যরাতে ঘুমোতে যান। আপনিও আছেন দেরিতে ঘুমোতে যাওয়ার দলে? রোজ এই রুটিন মেনে দেরিতে ঘুমোতে যাচ্ছেন? জানেন নিজের কত বড়ো ক্ষতি করছেন? Journal of Neuroscience জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, একদিন রাতে কম ঘুম হলে মস্তিষ্কের বয়স বেড়ে যায় কমপক্ষে ২ বছর। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম হলে আবার ”brain age” ঠিক হয়ে যায়। ১৯-৩৯ বছর বয়সি ১৩৪ জনের এমআরআই স্ক্যান করে এই তথ্য জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
স্লিপ সাইকেল বা ঘুমের রুটিনের দফারফা হয়
মানব শরীর ইন্টারনাল ক্লক বা circadian rhythm মেনে চলে। এই অভ্যন্তরীন ঘড়ি আমাদের ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা ঘুমিয়ে থাকলে আলোর সংস্পর্শে এই রুটিনের ব্যাঘাত ঘটে। আলোর সংস্পর্শে আসলে আমাদের সহজে ঘুম আসে না। পর্যাপ্ত ঘুম হলে আমাদের ঘুম থেকে ওঠার পর তরতাজা লাগে। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম রাতে না হলে সকালে উঠলে ক্লান্ত ও অবসন্ন লাগে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে ঘুমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা যখন ঘুমোই তখন শরীরে cytokines নামে প্রোটিন তৈরি হয় যা রোগভোগ, সংক্রমণকে প্রতিহত হয়। তাই রোজ যদি ঘুম কম হয়, তাহলে এই প্রোটিনের নিঃসরণের দফারফা হয়। নানান রকম রোগ হয়।
ওজন বাড়ার ঝুঁকি আছে
রোজ যদি ঘুম কম হয় তাহলে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে হরমোনের নিঃসরণের ওপর। খিদে ভাব, মনের আত্মতৃপ্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে লেপটিন, ঘ্রেলিন নামক হরমোন। ঘুম কম হলে লেপটিন হরমোনের নিঃসরণ বেশি হয়। খিদে পায় বেশি। ঘ্রেলিন হরমোনের নিঃসরণ বেশি হলে হাবিজাবি ভাজাভুজি খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ে। হরমোনের ভারসাম্যে গন্ডগোলের জেরে ওজন বাড়ে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় সমস্যা হয়
ঘুম কম হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটে। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। সহজে মনে থাকে না কিছু। ধৈর্য্য থাকে না। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়।
ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে
দীর্ঘ সময় ধরে ঘুম কম হলে হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, স্থুলতার মতো ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ঘুম কম হলে রক্তে শর্করার মাত্রায় গন্ডগোল হয়, মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
রাতে ভালো ভাবে ঘুমোনোর জন্য কী করবেন?
১) কফিতে ক্যাফিন থাকে। তাই বিকেলের পর কফি খাবেন না।
২) ঘুমোনোর আগে বেশি সময় ধরে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, স্মার্টফোন দেখবেন না। যে ঘরে ঘুমোবেন তা অন্ধকার করে দিন।
৩) ঘুমোনোর আগে হালকা গান শুনুন। টিভি দেখবেন না। ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঈষদুষ্ণ গরম জলে গা ধুয়ে নিন।
৪) রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে বেশি করে জল খাবেন না। জল খেলে বেশি করে প্রস্রাব হবে। ঘুমের ব্যাঘাত হয়।
৫) ঘুমোনোর আগে ডিজিটাল ডিটক্স করুন। টিভি দেখবেন না। বই পড়ুন। ধ্যান করুন।
৬) যে বিছানায় ঘুমোবেন তার চাদর, বালিশের ঢাকা যেন হালকা মনোরম রঙের হয়। ঘুমোনোর আগে হজম করতে সমস্যা হয় এমন খাবার খাবেন না। সহজপাচ্য খাবার খান। ঘুমোনোর আগে ক্যাফিনযুক্ত পানীয় খাবার খাবেন না। ঘুমোতে যাওয়ার আগে রিল্যাক্স করুন।
FREE ACCESS