
Truth Of Bengal: তারক নাথ সাহা: সন্ধ্যা নামতেই ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হল। নীলাঞ্জন অফিস ফেরত রাস্তায় একটা গাড়ি বারান্দার সেডের নিচে সাইকেল নিয়ে দাঁড়াল। আস্তে আস্তে বৃষ্টির রেশ বেড়েই চলেছে। হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে চতুর্দিক অন্ধকার হয়ে গেল। এদিকে মশাগুলোও খুবই জ্বালাছে। পকেট থেকেে বিড়ির বান্ডিলটা বের করে একটা ধরাতে গেল পাশের আর এক ভদ্রলোক। হালকা হাওয়ায় বার বার নিভে যাচ্ছে দেশলাই।
নীলাঞ্জন পকেট থেকে লাইটারটা বের করে দিতেই, হালকা হেসে লোকটি একটা বিড়ি এগিয়ে দেয় তার দিকে। দূরে দু- একটা বাজ পড়ছে মাঝে মাঝে। আধাঘন্টা এইভাবে কাটার পর বৃষ্টি থামল, আলোও জ্বললো।একে একে বাড়ির পথে এগোয় সেডের নিচে আশ্রয় নেওয়া সব মানুষজন। ওদিকে মোড়ের মাথা থেকে ভুল করে কখন যে হীরাপুরের পথ ধরেছে খেয়ালই নেই। বেশ কিছুক্ষণ যাবার পর এক মাঝবয়সী বউ তাকে হীরাপুর পর্যন্ত সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসিয়ে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে।
সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে ওঠেন ‘আরে আমার বাড়ি তো সারেঙ্গা, ভুল করে এপথে এসে পড়েছি ; আমাকে ফিরতে হবে’। বউটি বলে ‘আমি আর হাঁটতে পারছি না, তাছাড়া ঝড় জলের সন্ধ্যায় একলা মহিলা, ফাঁকা পথ, দাওনা একটু উপকার করে, তোমার নিজের মেয়ে যদি হতাম’। নিঃসন্তান বাবার বুকটা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। মহিলাকে সাইকেলে বসিয়ে হীরাপুরের দিকে যেতে যেতে বলেন ‘তুমি কোথায় গিয়েছিলে মা’। মহিলা বলে ‘অসুস্থ বাবাকে দেখতে লিচুতলায় বাপের বাড়িতে, জলে কাদায় দেরি হয়ে গেছে, বাড়ি গিয়ে রাতের রান্না চাপাতে হবে’। হীরাপুর আসতে মেয়েটি নেমে পড়ে বললে ‘পরের জন্মে তোমার মেয়ে হয়ে আসবো বাপ’।
সাইকেল ঘুরিয়ে একটা সটকাট রাস্তা ধরে সারেঙ্গার দিকে এগোতে থাকে নীলাঞ্জন। কাছেই শ্মশান ধারে ভিড় দেখে কৌতুহলে দেখতে যায় সে। মৃতদেহ দেখে হাড়হিম হয়ে যায়। এ তো সেই মহিলা যাকে এতটা পথ এইমাত্র সাইকেলে নিয়ে এসেছে। বাড়ি গিয়ে রাতে তার গৃহিণীকে সব বলে। পরের বছর তাদের একটি সন্তানের জন্ম হল। ধাইমা একশো টাকা বকশিস আদায় করে মেয়ের মুখ দেখতে দেয় বাপকে।
বিস্মিত হয়ে সে দেখলো সেই নাক, সেই মুখ, সেই চোখ, কপালের জরুলটাও অবিকল। খোঁজ নিয়ে জানল, সেদিন বিকেলে মহিলাটি তার অসুস্থ বাবাকে সত্য সত্যিই দেখতে গিয়েছিল। অথচ মারা গিয়েছিল দুপুরের পর। নবজাতকের আনন্দে ময়রার দোকানের দিকে পা বাড়ায় সে, জ্ঞাতিদের বাড়ি বাড়ি মিষ্টি বিলোতে হবে তো! কানে ভাসছে সেই কণ্ঠ ‘পরের জন্মে তোমার মেয়ে হয়ে আসবো বাপ’।