কলকাতা

স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক কলকাতা প্রত্যাবর্তনের পুনরাভিনয়, একাধিক কর্মসূচি

Reenactment of Swami Vivekananda's historic return to Kolkata, multiple programs

Truth Of Bengal: শিকাগো ধর্ম মহাসভা তথা আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে স্বামী বিবেকানন্দের অভাবনীয় সাফল্য এবং তাঁর ভারত প্রত্যাবর্তনের পর সমগ্র দেশ তাকে যে সাদর সংবর্ধনা জানায়-তা থেকেই ভারতবর্ষের সর্বাত্মক জাগরণের সূচনা। চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর মতে, স্বামী বিবেকানন্দই হিন্দুধর্ম এবং ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তিনি (অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দ) না থাকলে আমরা আমাদের ধর্ম হারাতাম এবং স্বাধীনতাও লাভ করতে পারতাম না। আমাদের সবকিছুর জন্যই আমরা তাই বিবেকানন্দের কাছে ঋণী। “তাই বিবেকানন্দের ভারত প্রত্যাবর্তন কোন সফল ব্যক্তির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নয়। এ যেন ভারতের আত্মাই আবার ফিরে এসেছিল তাঁর মাধ্যমে।

পাশ্চাত্য থেকে ফেরার পর তিনি ভারতের বর্তমান ভূখণ্ডে পদার্পণ করেছিলেন ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জানুয়ারি। তারপর তিনি দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন সর্বত্র বিজয়ী বীরের সংবর্ধনা লাভ করতে করতে। তিনি চেন্নাই থেকে এস এস মোম্বাসা জাহাজে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭। ১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ তারিখের মাঝরাতে তিনি বজবজ বন্দরে এসে পৌঁছন। পরদিন ১৯ শে ফেব্রুয়ারি ভোরে তিনি বজবজ বন্দরে পদার্পণ করেন এবং রেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা মত একটি স্পেশাল ট্রেনে করে বজবজ স্টেশন থেকে শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ জী জানিয়েছেন, শিয়ালদহ স্টেশনে তখন সেই শীতের সকালেও সমবেত কুড়ি হাজার মানুষ। তাদের সমবেত হর্ষধ্বনির মধ্যে স্বামীজীর ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছায় সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। স্বামীজি ট্রেন থেকে নামলে যাঁরা কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে থাকেন। আর যাঁরা দূরে ছিলেন তাঁরা সমবেত কণ্ঠে জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠেন, জয় পরমহংস রামকৃষ্ণদেব কি জয়। জয় স্বামী বিবেকানন্দ কি জয়। এরপর ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনরকমে স্বামীজিকে বের করে নিয়ে তাঁকে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ঘোড়ার গাড়িতে উঠানো হয়। গাড়ি ছাড়ার আগেই একদল ছাত্র এসে গাড়ির ঘোড়া খুলে দিয়ে নিজেরাই স্বামীজিকে টেনে নিয়ে চলে রিপন কলেজের (এখনকার সুরেন্দ্রনাথ কলেজের) দিকে। তাঁর গাড়িকে অনুসরণ করে চলে এক বিরাট শোভাযাত্রা, যার মধ্যে আছে বহু মানুষ, বেশ কয়েকটি গানের দল এবং সাড়ি দিয়ে চলা বহু ঘোড়ার গাড়ি।

রিপন কলেজে স্বামীজিকে সংবর্ধনা দেওয়া হল। এই অভূতপূর্ণ শোভাযাত্রা ও সংবর্ধনা দেখে স্বামীজি নিজেও অভিভূত হয়ে গেছিলেন। সংবর্ধনার উত্তরে তিনি দুই একটি ধন্যবাদ সূচক কথা বললেন মাত্র। তারপরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো বাগবাজারে পশুপতিনাথ বোসের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য। এখানে স্বামীজীর সঙ্গে তার কয়েকজন গুরু ভ্রাতার দেখা হয়। তাঁরা হলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ, স্বামী যোগানন্দ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ এবং কথামৃতকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত। সন্ধ্যাবেলায় স্বামীজি আলমবাজার মঠে চলে আসেন।

এখানেই তখন সব সন্ন্যাসী গুরু ভাইয়েরা থাকতেন, এটাই তখন শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ। স্বামীজি যখন শেষবার ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়েছিলেন সেই সময়েই রামকৃষ্ণ মঠ বরানগর থেকে আলমবাজারে উঠে এসেছিল। তাই, বিশ্ববিজয়ী স্বামী বিবেকানন্দের আলমবাজার মঠে প্রথম পদার্পণের তারিখটিও এই ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭। এই দিন স্বামীজি কোথাও কোনো বক্তৃতা করেননি। কলকাতায় তার প্রথম বক্তৃতা ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ তারিখে শোভাবাজার রাজবাড়িতে (রাধাকান্ত দেবের বাড়িতে) এবং কলকাতায় দ্বিতীয় বক্তৃতাটি তিনি দেন ৪ মার্চ ১৮৯৭ তারিখে। কলকাতা তখন ভারতবর্ষের রাজধানী ছিল বলে, তাঁর এই অসাধারণ দুটি বক্তৃতার প্রভাব সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতাবাসীদের অতিক্রম করে আপামর ভারতবাসীর উপরেই পড়েছিল।

রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ জী আরও জানিয়েছেন, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার আমরা স্বামীজির দ্বারা মহিমান্বিত এই ‘১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭’ দিনটিরই আংশিক পুনরভিনয় করার চেষ্টা করছি।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রথমে বজবজ স্টেশনে স্বামীজীর স্মরণে একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে। তারপর পূর্ব রেলওয়ে দ্বারা ব্যবস্থাকৃত একটি স্পেশাল ট্রেন সোয়া এগারোটা নাগাদ স্বামীজীর একটি সুসজ্জিত স্ট্যাচুকে বহন করে শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সঙ্গে থাকবেন বেশকিছু সন্ন্যাসী এবং ভক্ত ও অনুরাগীবৃন্দ। শিয়ালদহ স্টেশনে সেদিন এর আগে থেকেই প্লাটফর্মের বাইরের একটি স্টেজে কলকাতা অদ্বৈত আশ্রমের পরিচালনায় স্বামীজীর স্মরণে অনুষ্ঠান হবে।

তিনি জানান, ‘স্বামীজী’কে নিয়ে স্পেশাল ট্রেন শিয়ালদায় পৌছবে ১২.১৫ নাগাদ। সেখানে স্বামীজিকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বরণ করে নেবেন সাধু-সন্ন্যাসী বৃন্দ এবং ইস্টার্ন রেলওয়ে ও কলকাতা পুলিশের আধিকারিকবৃন্দ।
দুটোর সময় শিয়ালদা স্টেশন থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি স্বামীজীর বাড়ি, বলরাম মন্দির, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ এবং উত্তর কলকাতা ও বরানগরের বিভিন্ন স্থান, যেগুলি স্বামীজীর সঙ্গে জড়িত এবং ওই অঞ্চলে অধিষ্ঠিত মঠ-মিশনের শাখাকেন্দ্রগুলিকে ছুঁয়ে এগিয়ে চলবে।

শোভাযাত্রার পথে মঠ- মিশনের যে শাখা কেন্দ্রগুলি পড়বে, তাদের প্রত্যেকেই তাদের গেটের কাছে একটি অনুষ্ঠান করবে। এই নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন এর সহ-সাধারণ সম্পাদক তথা স্বামী বিবেকানন্দের কলকাতা প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি স্বামী বলভদ্রানন্দ জী সহ অন্যান্য মহারাজরা।

Related Articles